আঞ্চলিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে খাগড়াছড়িতে ৭টি হাট-বাজার দ্বিতীয় দিনও বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

ইউপিডিএফ প্রসীত ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের আধিপত্য বিস্তারের জেরে দুই সংগঠনের পাল্টা-পাল্টি হুমকিতে খাগড়াছড়িতে ছোট-বড় ৭টি হাট-বাজার দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে চলছে অঘোষিত হরতাল।

এ কর্মসূচির কারণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার স্বনির্ভর বাজার থেকে পানছড়ি পর্যন্ত ছোট-বড় ৭টি হাজার-বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। চলছে না তেমন কোন যানবাহনও।

সে সাথে পাহাড়িদের কাছে পণ্য বিক্রয় ও ক্রয় নিষিদ্ধের কারণে কোন পাহাড়ি হাট-বাজারে আসছে। বৈসাবি উৎসবের আগে হঠাৎ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাট বাজার বর্জন ও বন্ধ করে দেয়ায় আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) সকাল থেকে এই সড়কে সাধারণ পাহাড়িদের গাড়িতে তুলছেন না পরিবহন স্টাফরা। এই সড়কে চলাচলকারি হালকা যাবাহনগুলোতে পাহাড়ি যাত্রী দেখা যাচ্ছে একেবারে কম। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

সরেজমিনে আজও দেখা গেছে, বুধবার সকাল থেকে জেলা শহরের স্বনিভর বাজারে কোন দোকানপাট খুলেনি। শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরবর্তী স্বনিভর বাজার সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে। একইভাবে স্বনিভর বাজার থেকে পানছড়ি পর্যন্ত ছোট ছোট আরও অন্তত ৬টি গ্রামীণ বাজারের দোকানপাটও বন্ধ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানছড়ি বাজারে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের নেতাকর্মীদের অবস্থানের প্রতিবাদে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের হুমকিতে গত বছরের ২০ মে থেকে পাহাড়িরা পানছড়ি বাজারে আসা বন্ধ করে দেয়। এতে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। দীর্ঘ প্রায় এক বছর পানছড়ি বাজারে সাধারণ পাহাড়িদের আসতে বাধা দেয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা (জলেয়া) জানান, প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ কর্তৃক পানছড়ি বাজার বয়কটের কারণে আমরা এবং জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) দুই সংগঠন মিলে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। প্রসীতের ইউপিডিএফ পানছড়ি বাজার বয়কটের ঘোষণা করলে আমরাও সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেবো।

পানছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মো. নাজির হোসেন জানান, বাজার বর্জনের বিষয়কে কে›ন্দ্র করে তিনি নিজেও হামলার শিকার হয়েছেন। বাজার বর্জনের কারণে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায় নির্বিশেষে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বাহার মিয়া বলেন, একটা অসহনীয় ও আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটাচ্ছি। পানছড়ি সড়কে চলাচল করতেও ভয় পাচ্ছি। তিনি এসব বিষয়ে প্রশাসনের জরুরী পদক্ষেপ প্রয়োজন।

তবে এ বিষয়ে প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ এর নেতৃবৃন্দকে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়–য়া বলেন, এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজনৈতিকভাবেও কাজ চলছে। তবে হাটবাজার বর্জন এবং পরিবহনে সম্প্রদায় বিশেষকে না তুলতে চাপ প্রয়োগ অমানবিক।

কয়েক দিনের মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও তিনি আশাবাদ করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে পুলিশ সুপার ও অন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন