parbattanews

আঞ্চলিক সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারে পানছড়ি বাজার বয়কটের ১১মাস পূর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

২০১৮ সালের ১৯ মে আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ (প্রসীত খীসা) পানছড়ি বাজার বয়কটের ঘোষণা দিলে তার কার্যকারিতা শুরু হয় ২০ মে থেকে। ২০১৯ সালের (১৯ এপ্রিল) শুক্রবার বয়কটের পূর্ণ হলো এগার মাস।

এরই মাঝে ক্রেতার অভাবে বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। তারপরও এর সমাধানে প্রশাসনিক কোন তৎপরতা নজরে আসেনি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতৃবৃন্দরা পরিদর্শনে এসে বহুবার আশ্বাস প্রদান করলেও তা বাস্তবে কিছুই হয়নি। বরং বয়কটের আদেশ দিন দিন কঠোর থেকে কঠোরতম হয়ে বাজার ক্রেতাশূণ্য হওয়ার কথাও মুখে মুখে। তাই সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়ীরা আরো নিঃস্ব হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র বলেও শুনা যায়।

কারণ জানতে চাইলে কয়েক ব্যবসায়ী জানায়, উপজেলার পূজগাং, কলেজ গেইট ও কুড়াদিয়াছড়ায় নিত্য জমে উঠে জমজমাট হাট। সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাজারে না এসে রাস্তার পাশে জমে ওঠা হাট থেকেই কিনে নেয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। যা প্রশাসন ও বাজার চৌধুরীকে এক ধরণের বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের মতোই। তারপরও প্রশাসনের নীরব ভুমিকায় দোকানীরা হতাশ।

জানা যায়, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জন সংহতি সমিতির কিছু সদস্য পানছড়ি বাজারস্থ শুকতারা বোডিংয়ে অবস্থানের কারণেই বয়কটের ডাক দেয় ইউপিডিএফ। তার পাশাপাশি রয়েছে ভ্রাতিঘাতি সংঘর্ষ ও আধিপত্য বিস্তারের জের।

এ ব্যাপারে দু’পক্ষের বক্তব্যতেই উঠে আসে আলাদা আলাদা যুক্তি। ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) খাগড়াছড়ি জেলা প্রধান শ্যামল কান্তি চাকমা (জলেয়া) জানায়, বাজার বয়কট সম্পুর্ণ জনস্বার্থ বিরোধী। গ্রামাঞ্চলের মানুষ ও ব্যবসায়ীদের অস্ত্র দিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় ও হয়রানি বন্ধ করলে আমরাও বিভিন্ন এলাকার দোকানপাটে কোন চাপ প্রয়োগ করবো না। তাছাড়া শুকতারা বোডিং ভাড়া নিয়ে যে কেউ থাকতে পারে তার জন্য বাজার বয়কটের ঘোষণা কেউ দিতে পারেনা।

ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপের পানছড়ি ইউনিট সমন্বয়কারী প্রানেশ চাকমা জানায়, শুকতারা বোডিংয়ে বহিরাগতদের অবস্থানের কারণে পাহাড়ীরা স্বঃতষ্ফুর্তভাবে বাজার বয়কট করেছে। বাজারে অবস্থান করে তারা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে। এসব বন্ধ করার নিশ্চয়তা পেলে হয়তো একটা ভালো খবর আসতে পারে।

দীর্ঘ এগার মাস অতিবাহিত হলেও এর কোন সুরাহার লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা। সকল সম্প্রদায়ের মিলনমেলার এই বাজারে ক্রেতাবিহীন দোকানপাটে অলস সময় পার করছে প্রায় পাঁচ শতাধিক দোকানী। তাছাড়া পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোকজনও তাদের উৎপাদিত ফসলাদি বাজারজাত করতে না পেরে পড়েছে বিপাকে। ফলে বাজারে বিভিন্ন পন্যের মূল্য ক্রেতা ক্রয়সীমার বাইরে।

এদিকে বেসরকারি এনজিও আশা, ব্র্যাক, পদক্ষেপ, গ্রামীন ব্যাংক থেকে লোন নেয়া ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করতে পারছে না সাপ্তাহিক কিস্তি। ব্যবসায়ীদের দাবি বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কারো কোন আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে এটা সমাধান করা কোন ব্যাপারই না। পানছড়ি বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার সহবস্থান নিশ্চিতসহ বিভিন্ন সমস্যাদি সমাধানকল্পে প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় বাজার ব্যবসায়ী ও আপামর জনগণ।

Exit mobile version