আট লক্ষাধিক অবৈধ সিম রোহিঙ্গাদের হাতে

fec-image

উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্প গুলোতে অন্যান্য অপরাধের সাথে প্রযুক্তিগত অপরাধের মাত্রাও বাড়ছে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর নানা ছলচাতুরীতে আশ্রিত রোহিঙ্গারা অবাধে বাংলাদেশি মোবাইল ফোন সিম ব্যবহার করছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোর এসআর ও আউটলেট এজেন্টদের জালিয়াতিতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি মোবাইল সিম ব্যবহার করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

১১ লাখ রোহিঙ্গার হাতে ঠিক কত সংখ্যক সিম রয়েছে, তার সঠিক তথ্য কারও কাছে নেই। উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গার হাতে অবৈধভাবে ৮ লাখেরও অধিক সিমকার্ড চালু রয়েছে বলে ধারণা করছেন এই ব্যবসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি ৭০টি সিমকার্ডসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রাজাপালং গ্রামের আবুল কাশেম (৩৫) ও কুতুপালং গ্রামের মো. হাসান (২৮)। এ দুজন মোবাইল কোম্পানির স্থানীয় এসআর দাবি করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

উখিয়া সদর এলাকার মোবাইল ব্যবসায়ী আমিন সার্ভিস পয়েন্টের স্বত্বাধিকারী মো. নুরুল আমিন জানান, অনেক এজেন্ট বা দোকানের লোকজন কৌশলে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফিঙ্গার নিয়ে রাখে। প্রতিজনের এনআইডি কার্ডের অনুকূলে ২০টি মোবাইল সিম নিবন্ধনের সুযোগ জালিয়াতি করে কাজে লাগাচ্ছে তারা।

এগুলো রোহিঙ্গাদের নিকট অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় করে থাকে বলে তিনি জানান। কক্সবাজার জেলা ছাড়াও তারা বিভিন্ন জেলা থেকে এ ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধিত সিম কার্ড সংগ্রহ করে সেগুলো রোহিঙ্গাদের চড়া দামে বিক্রি করছে বিভিন্ন কোম্পানির এসআর নামধারী একাধিক জালিয়াত চক্র।

এমনও অসংখ্য রোহিঙ্গা রয়েছে, যারা একাধিক মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়া এত সিম কার্ড রোহিঙ্গাদের হাতে কীভাবে গেল, এ প্রশ্নের সঠিক জবাব কারো কাছে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশি একাধিক মোবাইল সিমের পাশাপাশি মিয়ানমারের বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল সিম ব্যবহার করে থাকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থান যেহেতু বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায়, সেহেতু সহজে মিয়ানমারের মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।

কুতুপালং গ্রামের স্থানীয় চাকরিজীবী খায়রুল হক (২৮) ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনীল বড়ুয়া (৪০) জানান, স্থানীয়দের ব্যবহৃত মোবাইলে নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকলেও রোহিঙ্গাদের মোবাইলে ২৪ ঘণ্টা নেটওয়ার্ক থাকে। তারা ক্যাম্প থেকে সরাসরি রাখাইনে বসবাসরত তাদেরও স্বজনদের সাথে কথা বলছে নিয়মিত।

তারা বলেন, স্থানীয়দের নামে নিবন্ধিত সিম ব্যবহারের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ভয়ংকর অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় স্থানীয়দের ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে। তারা বলেন, একমাত্র মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা যতই অপকর্ম করুক না কেন, তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আনা কঠিন। কারণ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর ব্যবহৃত মোবাইল সিম দেশের যেকোনো স্থানের বিভিন্ন ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত।

গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম নগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর অক্সিজেন এলাকা থেকে বশির হোসেন ইমুকে (২৩) আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে ৭০টি মোবাইল সিম জব্দ করা হয়। সে লাইলা এন্টারপ্রাইজ প্লাস নামের একটি বিপণন কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ বলে পুলিশকে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল। সে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মোবাইল গ্রাহকের এনআইডি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করে সিম অবৈধভাবে কালোবাজারে বিক্রি করে আসছিল।

ইতিপূর্বে ১ জুলাই প্রতারণার অভিযোগে মুক্তার আহম্মদ মুন্না (৩০) কে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানা পুলিশ আটক করেছিল। সে রবি মোবাইল কোম্পানীর সাবেক কর্মকর্তা। সে দীর্ঘদিন ধরে কম দামে সিম দেয়ার নামে দরিদ্র লোকজনের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে অধিক মূল্যে কালোবাজারে বেআইনিভাবে সিম বিক্রি করে আসছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম জানান, এসআর নামধারী একশ্রেণির প্রতারক সহজ-সরল স্থানীয়দের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইডি কার্ড ব্যবহার করে সিম কার্ড চড়া দামে রোহিঙ্গাদের বিক্রি করার কথা স্বীকার করছে আটককৃতরা। তারা আরও বলেছে, তাদের মতো অসংখ্য এসআর ক্যাম্পে অবস্থান করে রোহিঙ্গাদের মাঝে মোবাইল সিম বিক্রি করছে।

উখিয়া নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্যসচিব সাংবাদিক গফুর মিয়া চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে সরকারের উদ্যোগ যথাযথ। তবে তার বাস্তবায়ন কতটা দ্রুত কার্যকর হয়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) এক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো প্রকার সিম বিক্রি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কর্তৃক সিম ব্যবহার বন্ধ তথা তাদের মোবাইল সুবিধা প্রদান না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সব মোবাইল অপারেটরের প্রতি জরুরি নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন