parbattanews

আদালতের নথি জালিয়াতি আসামির জামিন বাতিল, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে আলোচিত মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদের জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। তাকে ৭ দিনের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে পৃথক প্রতিবেদন এক মাসের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

সোমবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমীর বরাত দিয়ে আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এর আগে কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে আলোচিত মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ (৪৫) নথি জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেছেন।

জানা যায়, গত ২৩ জুন হাইকোর্টে আসামি মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদের জামিন চেয়ে অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা আনসারী আবেদন করেন। হাইকোর্টের জামিন আবেদনে মামলার এফআইআরের সার্টিফায়েড কপি জমা দেওয়া হয়। সেখানে তাকে ২২ নম্বর আসামি দেখানো হয়।

মূলত আসামি মোহাম্মদ মামলার ২ নম্বর আসামি। গত ৩০ জুন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার শুনানি শেষে ওই আসামির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।

আইনজীবী নূরুল হুদা আনসারী বলেন, আমার আইন পেশার এত বছরে কখনো এমনটি হয়নি। আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন করাতে সাহাবুদ্দিন নামে তার এক আত্মীয় আমাকে নথিপত্র দেন।

এই আসামি যে মামলার দুই নম্বর আসামি তা আমি জানতাম না। সম্প্রতি জানতে পেরে মামলা তুলে নিতে এবং ওই আসামিকে আটকের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করি।

গত ১৩ জুলাই নথি জালিয়াতি করে ওই আসামি কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়ার খবরে কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে ১৪ জুলাই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানিয়ে চিঠি দেন।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার বাদী/সংবাদদাতা পক্ষ আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন-বর্ণিত মামলার এজহারনামীয় দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী এবং এজাহার বহির্ভূত আসামি নুরুল হকসহ পাঁচ আসামির নামে গত ৩১ মে দায়েরকৃত জামিনের দরখাস্ত শুনানিআন্তে নামঞ্জুর হয়েছে।

কিন্তু এ আদেশের প্রকৃত জাবেদা নকল হাইকোর্টে দাখিল না করে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলীর পক্ষে আদালতের আদেশ জাল জালিয়াতিক্রমে তথাকথিত সৃজিতা জাবেদা নকল হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করা হয়েছে।

সৃজিত জাবেদা নকলে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামিকে ২২ নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, আদালতের নামঞ্জুরের আদেশের বক্তব্য বাদ দিয়ে জাল জাবেদা নকলে ভিন্নরূপ বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগে দাখিলি এজাহারের জাল জাবেদা নকলে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামিকে ২২ নম্বর আসামি হিসেবে এবং তার পুত্র ২২ নম্বর আসামি মো. ইয়াছিনকে (১৮) দুই নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে।

নথি জালিয়াতিতে জড়িত ও সহায়তাকারী হিসেবে ৬ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে তাদের তালিকা জেলা জজ আদালতে জমা দিয়েছেন নিহতের ভাই জাহেদ আলী।

উল্লেখ্য, শিশু বিবেচনায় এজাহারনামীয় ২২ নম্বর আসামি মোহাম্মদের ছেলে মো. ইয়াছিন ১৪ বছরের শিশু দাবি করে ইতোমধ্যে আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়েছে।

গত ৭ এপ্রিল ইফতারের আগমুহূর্তে রোজাদার মোরশেদ আলীকে জনসম্মুখে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় মোরশেদ আলী ইফতার পর্যন্ত প্রাণে না মারার আকুতি জানালেও মন গলেনি ঘাতকদের।

পরে, ৯ এপ্রিল এ ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই জাহেদ আলী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০ আসামি রয়েছে।

Exit mobile version