‘আদিবাসী’দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করলেন যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
‘আদিবাসী’দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি থেকে এখনো সরে আসেননি উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আভ্যন্তরীণ উদ্ধাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত তিন এমপিসহ প্রগতিশীল বাম রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদ সদস্যরা সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সে দাবি পূরণ করা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া মানে অন্যান্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা নয়।’
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালের দিকে খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক‘র খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি ড. সুধীন কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অধ্যাপক বোধিসত্ত্ব দেওয়ান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মারমা উন্নয়ন সংসদের সভাপতি সাথোঅং মারমা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চঞ্চুমনি চাকমা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা উন্নয়ন সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিবিৎসু ত্রিপুরা, উন্নয়নকর্মী শেফালিকা ত্রিপুরা, মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা প্রমুখ অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বর্তমান সরকার ‘আদিবাসী’দের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি উল্লেখ করে ‘আদিবাসী’দের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি করে বক্তারা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভিন্ন দলিলে, চুক্তিতে বিশেষ উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে। ফলে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে সমস্যা থাকার কথা নয়।’ দেশের ৪৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের দাবি জানানো হয় সভায়।
উপজাতি বলতে এমন একটি জনসমষ্টি বা সামাজিক গোষ্ঠীভুক্ত দলকে বোঝায়, যাদের রয়েছে একেকটি নিজস্ব বিশেষ ভাষা এবং সংস্কৃতি, আর অন্যান্য জাতি থেকে একটু ভিন্নতর, যারা বাস করে পৃথক পৃথক একেকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে, যাদের মধ্যে আছে একটি বিশেষ সহানুভূতির ঐক্যবোধ, যারা তাদের একে অন্যের সঙ্গে সহাবস্থানে সম্পৃক্ত করে রাখে। সোজা কথায় বলা যায়, কোনো একটি দেশে শ্রেণিসহাবস্থানে বৃহত্তর জাতির পাশাপাশি অপরাপর ক্ষুদ্রতর জাতির অবস্থানকে উপজাতি হিসেবে বুঝানো হয়। অন্যভাবে বলতে পারি যে, কোনো একটি বৃহত্তর নদী অপেক্ষা অপর একটি ক্ষুদ্রতর নদীকে বলা হয় ‘উপনদী’; একটি বড় দ্বীপ থেকে অন্য একটি ছোট দ্বীপকে বলে ‘উপদ্বীপ’; একটি বৃহত্তর সাগর অপেক্ষা তুলনামূলক কোনো ছোট সাগরকে বলা হয় ‘উপসাগর’; আর একটি বৃহত্তর শহর থেকে আরও একটু ছোট শহরকে ‘উপশহর’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে জাতি ও উপজাতি প্রসঙ্গটিও ঠিক এমনি একটা ব্যাপার মাত্র।