আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে ঘিরে উৎসবমুখর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গন

Indigenous-Day-140809-26

স্টাফ রিপোর্টার, পার্বত্যনিউজ :

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন রাজধানীর বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে আয়োজন করেছে দুইদিনব্যপী আদিবাসী মেলা ও প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে নিজেদের তৈরী জিনিসপত্র নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে পার্বত্য চট্রগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। আয়াজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সবমিলিয়ে উৎসবে মেতেছে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গন।

শনিবার ও রবিবার মেলাপ্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাদের নিজেদের তৈরী পোশাক, খাবার, তৈজসপত্র, গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছে। কিছু পণ্য প্রদর্শন ও কিছু বিক্রয়ের জন্য আনা হয়েছে। প্রদর্শন করা হচ্ছে নিজেদের তোলা আলোকচিত্র।

প্রান্তিক ও মুলস্রোতধারার বাইরের জনগোষ্ঠী উন্নয়ন নেট্ওয়ার্ক মারমা জাতিগোষ্ঠীর গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্রের প্রদর্শণী করছে। এর মধ্যে আছে মাছ ধরার খলাই, হেংগা, টুংকি, খালা বা চামচ, ককখেয়াই, পুইদাং, য়াংবু, গংনিং।

গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (গ্রাউস), হিলেহিলি এডুকেশন এন্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনসহ বেশকিছু সংগঠন গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পাহাড়ী চামচ, পাকখোয়াই, ইয়লয়াগ্রু, লিপ্রা  নামক তৈজসপত্র প্রদর্শণী করে।

মেলায় স্থান পেয়েছে মারমা, ম্রো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের দুটি কাপড় দিয়ে তৈরী বিশেষ পোশাক গং, কুরুং ও বেরেস্তা। তংচংগা সম্প্রদায়ের নারীদের পেনন, পাদুরি, খাদি, খরং। ম্রো সম্প্রদায়ের খপকেন, তাইউইমোমোপ্রোত পাওয়া যায়। খুমী জনগোষ্ঠীর নারীদের বিশেষ ওড়না বাইচুলিকা ও বাচ্চাদের কোলে নেওয়ার বিশেষ কাপড় তাপুং।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পুরুষ ও নারীদের ঐতিহ্যবাহী গহনা প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ম্রো জনগোষ্ঠীর কানের দুল রামসেং ও সিলুমেম। খুমী জনগোষ্ঠীর দিখং উল্লেখযোগ্য। খিয়াং সম্প্রদায়ের নারীদের গহনা ডাক, হেনরেজই, হাসুরি, ফ্রিং ক্লিপ, লয়াগ্রু, লিপ্রা, পদং জুয়াইং, পাইন্দু।

এছাড়া রয়েছে ঢোল, বাদল, কড়কা, খঞ্জরী, রেতা বানাম, বাংলার বেহালা, ঝনঝনি, বাশি প্রমুখ বাদ্যযন্ত্র। রয়েছে ইদুর মারা যন্ত্র, বাদুর মারার জাল ইত্যাদি। করিতাস বাংলাদেশ মেলায় প্রদর্শন করছে পুরনো জুম চাষে উৎপন্ন বাসক পাতা, অশ্বগন্ধা মুল, শিমুল, হলুদ, মরিচ, ধনে পাতা প্রভৃতি।

এদিকে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস মেলায় প্রদর্শন করছে পাবর্ত্য বিষয়ক বেশকিছু বই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেসবাহ কামালের দিনাজপুরের তেভাগা আন্দোলনের প্রস্তুতির্ব ও বিপন্ন ভূমিজ। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশ করেছে মুক্তির সংগ্রাম ও ইনডিজেনাস কমিউনিটিস। প্রকাশ করা হয়েছে মারমা ও ম্রো জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় তৈরী আদর্শলিপি। রয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কিছু বই। জন্তু চাকমার তোলা পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক বেশকিছু আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই প্রদর্শনীতে ব্যাপক উৎসবমুখর করা হলেও  তাদের এ্ প্রদশনীতে সমতলের উপস্থিতি নেই বলে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা। তবে আগামীতে সকলের সরব উপস্থিতিতে মেলা প্রদর্শন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন তারা।

এদিকে প্রদর্শনীর শেষ দিনে বিকেলে মেলা প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে পাহাড়ী এলাকার নেতারাসহ উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা নানা সাজে এই অনুষ্ঠানে যোগে দেন। বাংলা একাডেমীর প্রাঙ্গনকে উৎসবমুখর করে রাখেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন