পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
২০১৫ সালে এক গবেষণায় দেখা যায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে দুটিই খর্বকায়, মানে বয়স অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। এর একটা বড় কারণ জন্মের সময় কম ওজনে ভূমিষ্ঠ হওয়া বা আগেই ভূমিষ্ঠ হওয়া। অপুষ্টিও একটি বড় কারণ। কেবল গোলগাল-নাদুসনুদুস হলেই স্বাস্থ্য ভালো হয় না, এর সঙ্গে সঠিক উচ্চতাও চাই। এটা অনেক অভিভাবকই জানেন না।
শিশুরা জন্মের পর থেকে যে হারে বাড়ে এবং লম্বা হতে থাকে, তা একটি বৃদ্ধির তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। তালিকায় বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক উচ্চতার নিচে পড়ে গেলে সেই শিশুকে খর্বকায় শিশু বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৈশোরে পৌঁছে বৃদ্ধিতে একটা উল্লম্ফন ঘটে, নানা ধরনের হরমোনের প্রভাবে এ সময় তারা দ্রুত বেড়ে ওঠে।
তারপর ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে থেমে যায় এই বৃদ্ধি। জন্মকালীন কম ওজন, গর্ভকালীন সময়ে মায়ের অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, শিশুকে ঠিকমতো স্তন্যপান না করানো থেকে শুরু করে শিশুর নানা ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ; যেমন হাঁপানি, হিমোগ্লোবিনের সমস্যা, হৃদরোগ, বারবার সংক্রমণ শিশুর সঠিক বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করে। এ ছাড়া থাইরয়েড ও গ্রোথ হরমোনের সমস্যা, পিটুইটারি ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির রোগ, কিছু জন্মগত রোগ যেমন টার্নার সিনড্রোম ইত্যাদি কারণে শিশুরা খর্বকায় হয়।
একটি শিশুর ঠিকঠাক বেড়ে ওঠার পেছনে তার সুষম পুষ্টি, যথেষ্ট আমিষ, লৌহ, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এবং পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও ব্যায়াম প্রয়োজন। আমরা আমাদের শিশুদের লেখাপড়া, পরীক্ষার ফল, ক্লাসে প্রথম হওয়া নিয়ে যত দুশ্চিন্তা করি, এ বিষয়গুলো নিয়ে ততটাই কম ভাবি। কেবল ফাস্ট ফুড আর কোমল পানীয় খেলেই যে পুষ্টি নিশ্চিত হয় না, এ সম্পর্কেও আমাদের ধারণা নেই। আজ থেকে শুরু হচ্ছে শিশুদের গ্রোথ বা বৃদ্ধি নিয়ে সচেতনতা সপ্তাহ। আসুন এই সপ্তাহে আমরা এই দিকে নজর দিই।
আপনার শিশুটি বয়স অনুযায়ী ঠিকঠাক বাড়ছে কি না, তা চিকিৎসকের কাছে গেলে গ্রোথ চার্টে মিলিয়ে দেখুন। ক্লাসে অন্যদের তুলনায় সে ছোট কি না খেয়াল করুন। বিশেষ করে যেসব শিশু অল্প ওজনে ও সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তাদের বৃদ্ধির দিকে কড়া নজর রাখুন।
জন্মের পর প্রথম ছয় মাস কেবল মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুদের বৃদ্ধি নিশ্চিত হয় অনেকটা। ৬ মাসের পর বাড়িতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার দিন, কেনা সিরিয়াল নয়।
সুষম খাবার মানে পরিমিত আমিষ, শর্করা ও চর্বির সঙ্গে যথেষ্ট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। মাছ, মাংস, দুধ, ডিমসহ নানা ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল দিতে হবে। হাড়ের বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট আমিষ ও ক্যালসিয়াম দরকার। দুধ, দই, পনির ও সবুজ শাক-সবজিতে ক্যালসিয়াম আছে। ভিটামিন ডি ছাড়া হাড়ের বৃদ্ধি হয় না, ক্যালসিয়াম শোষণও হয় না। আর ভিটামিন ডি আছে সূর্যালোকে। তাই শিশুদের ঘরে আটকে না রেখে বাইরে রোদে খেলাধুলা করতে দিন।
অন্যদের তুলনায় লম্বা কম হচ্ছে মনে হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। নানা ধরনের হরমোনজনিত কারণে বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।