parbattanews

আবারও ১ রানে হারলো পাকিস্তান

পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের মঞ্চটা প্রায় তৈরি ছিল জিম্বাবুয়ের। শেষটায় কিছুটা শঙ্কা জাগে যদিও। কিন্তু অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ তারা জিতেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে মাত্র ১ রানে। প্রথম রাউন্ডের বাইরে মূল পর্বে এটাই জিম্বাবুয়ের প্রথম কোনও জয়।

১৩১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা পাকিস্তান ৮ উইকেটে থেমেছে ১২৯ রানে। তাতে টানা দুই ম্যাচ হেরে বাবর আজমদের সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা এখন সুতোর ওপর ঝুলে রইলো। এখন বাকি সব ম্যাচে পাকিস্তানের শুধু জিতলেই হবে না। প্রার্থনায় থাকতে হবে বাকি ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আসার! গ্রুপ দুইয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ভারত। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনে থাকা জিম্বাবুয়েরও ৩ পয়েন্ট। বাংলাদেশ ২ পয়েন্ট নিয়ে চারে অবস্থান করছে। পাঁচে থাকা পাকিস্তান এখনও পয়েন্টশূন্য। তলানীতে থাকা নেদারল্যান্ডেরও অবস্থা একই।

শেষ ওভারে পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচ। জিম্বাবুয়ে যেমন মঞ্চ তৈরি করে রেখেছিল; পাকিস্তানও হাল ছেড়ে দেয়নি তখন। শেষ ৬ বলে ১১ রান প্রয়োজন ছিল। মোহাম্মদ নওয়াজ ক্রিজে থাকায় শেষটা দেখার অপেক্ষায় ছিল পাকিস্তান। প্রথম বলে ৩ ও পরের বলে ৪ রান আসায় তাদের জয়টা তখন অসম্ভবও ছিল না। জিম্বাবুয়ে শিবিরে শঙ্কা জাগলে তৃতীয় ও চতুর্থ বলে রান চেক দেন এভান্স। পঞ্চম বলে তো চাপে পড়ে নওয়াজ ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরেছেন। শেষ বলে ৩ রান দরকার পড়লে শাহীন আফ্রিদি এক রান নিয়ে কাটা পড়েন রান আউটে। তার পর তো বাকিটা জিম্বাবুয়ের ইতিহাস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অবিশ্বাস্য এক জয়ে আনন্দ উৎসবে মাতে সিকান্দার রাজারা।

ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছেন মূলত সিকান্দার রাজা। বিশ্বকাপ বাছাই থেকে শুরু করে সেই যে অললাউন্ড-ঝলক দেখিয়ে আসছেন। সেটি টেনে এনেছেন চলমান বিশ্বকাপেও। ব্যাট ঝলতে উঠতে পারেননি। তাই বলে বোলিংয়েও নিষ্প্রভ থাকবেন? সেটি করেননি বলেই জয়ের পথ থেকে একাই ছিটকে দিয়েছেন পাকিস্তানকে। শুরু থেকে চাপে থাকা দলটি ৩৬ রানে হারায় বাবর আজম (৪), মোহাম্মদ রিজওয়ান (১৪) ও ইফতিখার আহমেদদের (৫)। এর পর মাথা তুলে দাঁড়াবার চেষ্টা করতেই জোড়া উইকেট তুলে পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন রাজা। ১৩.৫ ওভারে শাদাব খানকে (১৭) উইলিয়ামসের ক্যাচ বানিয়েছেন। পরের বলে নতুন নামা হায়দার আলীকে তো শূন্যতেই বিদায় দিয়েছেন লেগ বিফোরে! তখনও একপ্রান্ত আগলে লড়াই চলছিল শান মাসুদের। ৩৮ বলে ৪৪ রান করা এই ব্যাটারকেও স্টাম্পড করিয়ে ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার।

২৫ রানে ৩ উইকেট নেওয়া রাজা ম্যাচসেরা হয়েছেন। ২৫ রান খরচে ২ উইকেট নেন ব্র্যাড ইভান্স। একটি করে উইকেট নেন লুক জঙ্গোয়ে ও ব্লেসিং মুজারাবানি।

অথচ সাধারণ স্কোর করেও জিম্বাবুয়ে এই ম্যাচে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে; তা বোধহয় কেউ ভাবতে পারেনি। কিন্তু উজ্জীবিত নৈপুণ্যে এই স্কোরই তাদের লড়াই করার পর্যাপ্ত রসদ যোগাড় করে দিয়েছে।

ব্যাটিংয়েও শুরুটা দুর্দান্ত-ই হয়েছিল। জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার মিলে যেভাবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করছিলেন। সেই ছন্দ পরে আর ধরে রাখতে দেয়নি পাকিস্তানের পেস বোলিং। ৩ উইকেটে একটা সময় স্কোর ছিল ৯৫। সেখান থেকে স্কোরবোর্ডের অবস্থা দাঁড়ায় ৯৫ রানে ৭!

টস জিতে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল একটা লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করছে তারা। নাহলে ওপেনিং জুটিতে ৫ ওভারেই ৪২ রান তোলা কম কথা নয়। তাও আবার শক্তিশালী পাকিস্তানি পেস আক্রমণের সামনে। দুর্দান্ত এই জুটি ভেঙেই ইনিংসটার গতিপথ বদলে দিতে অবদান রাখেন হারিস রউফ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে (১৯) তালুবন্দি করিয়েছেন। পরের ওভারে আরেক ওপেনার ওয়েসলি মাধেভেরেকে (১৭) ফিরিয়ে আগ্রাসী সূচনায় রাশ টেনে ধরেন মোহাম্মদ ওয়াসিম।

মিল্টন শুম্বা (৮) বিদায় নিলেও সমস্যা হচ্ছিল না। একপ্রান্ত আগলে দলকে টেনে নিতে থাকেন শন উইলিয়ামস। ১৩.৫ ওভারে ৩১ রান করা এই ব্যাটারকে বিদায় দিয়েই জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ধস নামাতে অবদান রাখেন শাদাব খান। পরের ওভারে জোড়া আঘাতে বিদায় দেন রেজিস চাকাভাকেও। শাদাব খানের পর বাকি সর্বনাশটা করেছেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। ১৫তম ওভারে জোড়া আঘাতে বিদায় দেন বিপজ্জনক সিকান্দারা রাজা ও লুক জঙ্গোয়েকে। রাজা তখন হাত খুলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। এদিন ১৬ বলে ৯ রানের বেশি করতে পারেননি। নাহলে দারুণ শুরু পাওয়া জিম্বাবুয়ের স্কোর ভালো একটা জায়গায়ও যেতে পারতো। তার পরেও রায়ান বার্ল, ব্র্যাড ইভান্সের অবদানে ৮ উইকেটে ১৩০ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। ইভান্স ১৫ বলে ১ ছক্কায় বিদায় নেওয়ার আগে ১৯ রান করেছেন। বার্ল অবশ্য অপরাজিত ছিলেন ১০ রানে।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে পেসার ওয়াসিম ২৪ রানেন ৪ উইকেট। ২৩ রানে ৩টি নিয়েছেন শাদাব খান। ১২ রানে একটি শিকার হারিস রউফের।

Exit mobile version