“আমাকে গ্রেফতার করুন”-পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যানের আবেগঘন স্ট্যাটাস

fec-image

উখিয়া উপজেলার ০৫নং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন সম্প্রতি। যেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও তিনি তাঁর ব্যক্তিগত শঙ্কা নিয়েও লিখেছেন। জানা যায়, সম্প্রতি ১৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হামিদ মাঝি নামক কোনো রোহিঙ্গা নেতা তাঁকে প্রাণনাশ ও গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছেন।

পার্বত্যনিউজের পাঠকদের সুবিধার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করা পোস্টটি নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-

বর্তমানে রোহিঙ্গারা যেভাবে আশ্রয় ও পশ্রয় পাচ্ছে এতে আমি অত্যন্ত আতঙ্কিত। এই মহা দুর্যোগ মহামারী করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি জেলা সরকার লকডাউন করেছেন। কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের পরামর্শ করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার এক মাত্র উপায় সমাজিক দুরুত্ব বজায় রাখা।

এজন্য সরকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে স্থানীয়দেরকে সামাজিক দূরত্বে রাখতে পারলেও একজন রোহিঙ্গাকেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে পারে নাই।

রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত রাত ২/৩টার সময় দলে দলে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে অনর্থক চলাচল করে। কোন কাজকর্ম ছাড়া, তাদের কোনো হীন উদ্দেশ্য না থাকলে কেন তারা রাতদিন বীরদর্পে চলাচল করবে।

তারা এমন হিংস্র জাতি স্থানীয়দের ভিটে-বাড়ি থেকে ক্ষেত-খামারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে অথবা স্থানীয়দের ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে চলাচল করে। বাড়ি ও ধান ক্ষেতের মালিক নিষেধ করলে সাথে সাথে বলবে স্থানীয়রা নাকি রোহিঙ্গার টাকা নিয়ে চলে। তারা এও বলে আমাদের সরকার নাকি রোহিঙ্গাদেরকে মাঠির নিচে সাড়ে সাতশত ফুট পর্যন্ত বিক্রি করেদিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে রোহিঙ্গারা যেমন হিংস্র তেমন অকৃতজ্ঞ। তাদের মত নাফরমান পৃথিবীতে অন্য কোনো জাতি নাই। এরপরও কিছু কিছু সরকারি কর্তাদের সাথে দহরম মহরম সম্পর্কের কারণ তা বড়ই সন্দেহ জনক।

সম্প্রতি ১৪নং অস্থায়ী ক্যাম্পের মাঝি স্থানীয় জনসাধারণকে প্রকাশ্যে সরকারি গোয়েন্দা বাহিনীর সামনে হুমকি দিবে এবং আরও বলবে তোমাদের চেয়ারম্যানকে তুলে নিয়ে গুম করে ফেলবো। তার বিচার চাইলে ক্যাম্প ইনচার্জ মহোদয় বলবে UNHCR রাগ করবে তার কারণে বিচার করা সম্ভব হচ্ছেনা। এতে আমার সন্দেহ হচ্ছে যে কোন মূহুর্তে হত্যা করলে  সে বিচারও প্রশাসনের কাছে পাবো না।

এখানে বলা বাহুল্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার চাইতে অনেক বড়। কিছুদিন আগে ৭নং ক্যাম্পের সহকারী সিআইসির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়া ৭ ঘন্টার মধ্যে সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জকে প্রত্যাহার করেন সরকার। আর একজন রোহিঙ্গা স্থানীয় হাজার হাজার জনসাধারণসহ জন প্রতিনিধিকে তুলে নিয়ে যাবে এবং গুম করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিবে তার কোন বিচার হবেনা।  আরো ক্যাম্প ইনচার্জ শান্তনার বাণী দিয়ে বলবে UNHCR এর কারণে ব্যবস্থা নিতে পারছেনা। এই দেশ যেখানে UNHCR পরিচালনা করে সেখানে রোহিঙ্গা কর্তৃক খুন হলেও কোনো বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নাই।

সেটা আমি উপলব্ধি করেছি অনেক আগে থেকে। রোহিঙ্গা আসার সময় আমি পবিত্র হজ্ব পালন করার জন্য মক্কা শরিফ গিয়েছিলাম। আমি যাওয়ার সময় আমার ব্যক্তি মালিকানাধীন ২ একর ৬০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করে গিয়েছিলাম। ওই জমিতে আমি এসে দেখি সব রোহিঙ্গার ঘর। সে থেকে এই পর্যন্ত ওই জমি থেকে কোনো রোহিঙ্গা সরাইতে পারি নাই। আগের RRRC মহোদয়ের সাথে কথা বলা যেত একটু শান্তনা পেতাম বর্তমানের RRRC মহোদয়ের কাছে কথা বলাও সম্ভব নয়।

এতে আমি সার্বিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি জেলে থাকলে নুন্যতম প্রাণে বাচার সম্ভাবনা আছে আর মারা গেলেও স্বাভাবিক মারা যাবো। আর এইখানে থাকলে কিছু কুচক্রী মহলের ইন্ধনে এবং কিছু অর্থলোভী আমলাদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার প্রচুর সম্ভাবনা আছে। তাই আমার আকুল আবেদন আমাকে গ্রেফতার করে জেলে রাখুন।

কারণ রোহিঙ্গার বিচার করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা কারো কারো জন্য সোনার হরিণ। এই সোনার হরিণের দুর্নাম হবে। ২০১৮ ইং সনে ও স্থানীয় ফকির আহাম্মদ ও তার দুই ছেলেকে মেরে রোহিঙ্গারা হাড্ডি ভেঙ্গে দেওয়ার পরও মামলা করেছে আমি সহ স্থানীয়দের বিরুদ্ধে।

আজ হয়তো আমার কান্না কেউ শুনছে না। আমি আড়াই বছর আগে যে কথা গুলো বলেছিলাম তা আজ অক্ষরে অক্ষরে দেখা যাচ্ছে। এই রোহিঙ্গা এখনো শরনার্থী হিসাবে বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দেয় নাই। যখন শরনার্থী হিসাবে স্বীকৃতি দিবে তখন শুধু উখিয়া টেকনাফ নয়। সারা বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে যাবে। তখন বুঝবেন যারা রোহিঙ্গার টাকায় লালায়িত তারা। সেদিন আর বেশি দুরে নয়। যদি কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের ইচ্ছে হয় এখনো সময় আছে রোহিঙ্গা সামলান। নয়তো একদিন সারা বাংলাদেশের জনগণের কান্না বিশ্ববাসী দেখবে।

মানবতার দোহায় আর কত? মানবতা এমন নয় আমাদের দেশ ও অস্তিত্বসহ অধিকার বিলিয়ে দিতে হবে। এখন রোহিঙ্গার কারণে স্থানীয় ছেলেরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত। অধিকার থেকে বঞ্চিত জন্ম নিবন্ধনের কারণে স্কুলে ভর্তি হতে পারছেনা। এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? তারপরও শিক্ষিত সমাজের কোনো নজরে আসছেনা। বর্তমানে নতুন জামাতা শশুড় বাড়ি বেড়াইতে আসলে আমরা উক্ত ঘর লকডাউন করতে বাধ্য হই কিন্তু রোহিঙ্গারা কোথা থেকে আসে তার কোনো হদিস কি কেউ রাখে? তারা বীরদর্পে বেড়াবে প্রশাসন তাদেরকে বেড়ানো সুযোগ দিবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন