আমি কাছ থেকে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখেছি

1466250_482944215148423_1424195381_n

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মাওয়াফফাক আল রুবাই ইরাকের একজন প্রখ্যাত কুটনীতিজ্ঞ এবং নাগরিক অধিকারকর্মী। ইরাকি গভর্নিং কাউন্সিলের ২৫ সদস্যের একজন ছিলেন তিনি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়, তখন সরাসরি তিনি দেখেছিলেন তা। এবং এই ‘কর্মযজ্ঞের’ একজনও ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ফাঁসির আগ মুহুর্ত পর্যন্ত অনমনীয় ছিলেন সাদ্দাম।রুবাই বলেন, সাদ্দাম ক্রিমিনাল হতে পারেন, ঘাতক হতে পারেন, কসাই হতে পারেন। কিন্তু তিনি ভঙ্গুর ছিলেন না সেটা ফাঁসির মঞ্চে তাকে দেখে বুঝেছি। তিনি বলেন, ‘আমি সাদ্দামকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাবার জন্য গ্রহণ করি। আমাদের সাথে আর কেউ ছিল না। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা অন্য দেশের কোনো মানুষ উপস্থিত ছিলেন না। ফাঁসিতে নেয়ার দিন সাদ্দাম একটি জ্যাকেট এবং সাদা শার্ট পরে ছিলেন। তাকে বিন্দুমাত্র ভীত কিংবা বিচলিত দেখাচ্ছিল না। অনেককে বলতে শুনেছি, সাদ্দামকে টেনে হিঁচড়ে ফাঁসিমঞ্চে নিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু আমি বলব সেসব মিথ্যা কথা। তিনি মোটেও প্রতিরোধ করেননি। আর যিনি একটু পরে মারা যাবেন তিনি সাধারণত সৃষ্টিকর্তার নাম করতে থাকেন। তার কাছে জীবনের সমস্ত কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাভিক্ষা করেন। কিন্তু সাদ্দামকে বিড়বিড় করেও কিছু বলতে শুনিনি। পুরো সময়টাতেই ছিলেন নির্বাক।

১৯৮২ সালে ১৪৮ জন শিয়াকে গ্যাস হামলায় হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তার মৃত্যুদন্ড দেয় আদালত। ২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

এএফপিকে রুবাই বলেন, আমি যখন তাকে নিয়ে আসি তখন তার হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। হাতে ধরা ছিল পবিত্র কোরআন। আমি তাকে বিচারকের রুমে নিয়ে গেলাম, সেখানে বিচারক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং সাজা পড়ে শোনান। সব শুনে তিনি উচ্চারণ করলেন, ‘আমেরিকা নিপাত যাক। ইসরায়েলের পতন হোক, ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক।’

এরপর আমি তাকে ফাঁসির কক্ষে নিয়ে যাই। রুমে ঢুকেই সাদ্দাম দাঁড়িয়ে পড়লেন। তিনি ফাঁসির দঁড়িটা উপর থেকে দেখতে দেখতে নিচের দিকে চোখ রাখলেন। এরপর তিনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলেন।

যখন তার গলায় ফাঁসির রশি পরানো হয় তখনও তার দুই পা এবং দুই হাত বাধা ছিল। ফাঁসির লিভার টানার আগ মুহুর্তে কয়েকজন শ্লোগান দিয়ে ওঠে ‘ইমাম মোহাম্মদ বকর আল-সদর দীর্ঘজীবী হোন’ বলে। উল্লেখ্য, সাদ্দামের শাসনামলে তার প্রতিদ্বন্দ্বি এবং ক্ষমতাধর শিয়া ব্যক্তিত্ব ইমাম মোহাম্মদ বকর আল-সদরকে হত্যা করা হয়েছিল।

শ্লোগান শুনে সাদ্দাম বিরক্ত হলে বলেন, এটা কোন ধরনের বীরত্ব প্রদর্শন? এরপর রুবাই ফাঁসির লিভার ধরে টান দেন। কিন্তু সেটা কাজ করল না। এরপর রুবাইকে সরিয়ে আরেকজন সেটা ধরে টান দিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে দেখেন। এবার ঝুঁলে পড়েন সাদ্দাম।

মৃত্যু নিশ্চিত হবার পর রুবাই মৃতদেহটি তুলে আনেন। এরপর একটি সাদা ব্যাগে ভরে সেটি একটি স্ট্রেচারে রাখেন। এরপর মৃতদেহটি একটি মার্কিন হেলিকপ্টারে করে বাগদাদের উপর দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির বাড়িতে। সাদ্দামের লাশ দেখে তিনি সবার উদ্দেশে বললেন, আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। এই ঘটনা তার জীবনের অনন্য এক অভিজ্ঞতা বলে উল্লেখ করেছেন রুবাই।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইরাক, ফাঁসি, সাদ্দাম হোসেন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন