আরাকান আর্মির ৭ সীমান্ত চৌকি দখল, গোলাগুলি থামলেও সতর্কে বিজিবি
মিয়ানমার অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত ঘেঁষা সে দেশের ৭ সীমান্ত চৌকি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে লড়ছিলো মিয়ানমারের বিদ্রোহী গেরিলা সংগঠন আরকান আর্মি (এএ)’র কমান্ডোরা । শেষমেষ তারা সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে এ সব বিওপি ( বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট) দখলে নিতে সক্ষম হয়।
শনিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে টানা ৪৮ ঘন্টা সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি ও হতাহত শেষে তারা সেই ৭ চৌকি দখলে নিয়ে নেয়।
খবরটি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এ সব সূত্রগুলোর মধ্যে সীমান্তের অধিবাসী, জনপ্রতিনিধি, এ প্রতিবেদকের নিজস্ব সোর্স ও চৌকি ছেড়ে জিরো পয়েন্টে পালিয়ে আসা বিদ্রোহী সংগঠনের একাধিক সদস্যও রয়েছে।
সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, এ চৌকিগুলো গত দেড় মাস আগেও সরকারি সীমান্তরক্ষীদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠন গেরিলা যুদ্ধ শুরু করলে এ পর্যায়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের ১৭টি পাহারা চৌকি ছেড়ে সেনা সদস্যরা সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টের ব্যারাকে ফিরে যায়।
১৫ দিন পরিত্যক্ত থাকা সে চৌকিগুলো প্রথমে দখলে নেয় আরএসইউ (আরাকান সলিডারিটি ইউনিট)’র সদস্যরা। দেড় মাসের মাথায় এবার দখল নিতে আসে রাখাইন রাজ্যের আরেক বড় গেরিলা সংগঠন আরাকান আর্মির কমান্ডোরা। তারা গত শুক্রবার রাতে সে ১৭ চৌকির মধ্যে ৭ চৌকি ঘিরে
ফেলে ভেতরের আরএসইউ’র সদস্যদের সেরেন্ডার করতে বলে। আরএসইউ’র কমান্ডোরা এতে “না” করলে উপর্যপুরি গুলি চালাতে থাকে চৌকি লক্ষ্য করে । ভেতর থেকে তারা পাল্টা আক্রমন করতে থাকে। এতে উভয় পক্ষের অনেকে হতাহত হয়। শেষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে আরএসইউ’র কয়েক’শ সদস্য। গোলাগুলিতে তাদের অন্তত ১৫ সদস্য হতাহত আর ১৬ সদস্য আরাকান আর্মির হাতে বন্দি হয়ে পড়ে। যাদেরকে আরকান আর্মির একটি গোপন আস্তানায় রাখা হয়েছে বলে সূত্র দাবি করেন। পক্ষান্তরে আরাকান আর্মিরও অনেক সদস্য হতাহত হয় দাবী করে তারা। নানা অজুহাতে তাদের মধ্যে হওয়া শান্তি আলোচনা ভেঙ্গে গেছে।
এ দিকে দখল-বেদখল এবং হতাহতের বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, মূলত গোলাগুলির বিষয়টি বাংলাদেশের মাথা ব্যাথা। হঠাৎ করে শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টার পর থেকে সীমান্তের ৪০ নম্বর পিলার থেকে ৫০ নম্বর পিলারে থাকা উভয় দেশের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি স্থানে নির্মিত ৭টি চৌকির চার পাশ থেকে প্রতিযোগিতামূলক পাল্টাপাল্টি গুলির আওয়াজে সীমান্তের এপারের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।এ কারণে শনিবার বিকেল ও রাতে তার ইউনিয়নের বামহাতির ছড়া ফুলতলী, জামছড়ি, বড়ঝনখোলা, চেরারমাঠ ও হামিদিয়া পাড়ার দেড়শতাধিক মানুষ নিরাপদে আশ্রয় নেন । তাদের মধ্যে মেম্বার-চৌকিদারদের আশ্রয়ে ২০ থেক ৩০ পরিবার ছিল। বাকিরা স্ব-স্ব উদ্যোগে আশ্রয় নেন স্বজনদের বাড়ি-ঘরে । যারা রোববার বিকেলে পুনরায় তাদের বাড়ি ঘরে ফিরে যায়।
এ সীমান্তের অপর পয়েন্ট দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইমরান বলেন, তার সীমান্ত এলাকা ৫০ নম্বর পিলার পয়েন্টে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শনিবার তার এলাকা থেকে পালিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয়া লোকজন রোববার বিকেলে স্ব-স্ব বাড়ি ফিরে গেছে। তবে আতঙ্ক কেটে গেছে সোমবার সকাল থেকে। এখন এ সীমান্তে গোলাগুলি নেই বললেই চলে। তিনি আরো বলেন, এ সীমান্তে ১১ বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত টহল দিতে দেখেছেন তিনি।
১১ বিজিবি সূত্রের দাবি, মিয়ানমার সীমান্তে ১১ বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় তারা খুবই সর্তক রয়েছেন। ওপরের সব কিছু পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তারা।