আলীকদমের কৃষি জমিতে তামাকের রাহুগ্রাস

10887933_796073107129875_132322751_n

আলীকদম প্রতিনিধি :

পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদমের কৃষি জমিতে উৎপাদিত নানা ফসল এককালে স্থানীয় চাহিদা যুগিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী হলেও এখন সেই জমিতে তামাক চাষের রাহুগ্রাস চলছে। বিগত দেড় দশকের ব্যবধানে এ উপজেলার কৃষি জমি ও মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনভূমিতে তামাক চাষ এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে যে এখানকার চিরায়ত কৃষি ব্যবস্থা ও সবুজাভ পরিবেশ হারিয়ে যেতে বসেছে। নানা কৌশলে তামাক কোম্পানীগুলো অসচেতন কৃষকদের বন্দি করে ফেলেছে।

কৃষি ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, তামাক মাটির স্বাস্থ্যহানি ঘটায়, পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে, মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে, মাটির বিভিন্ন উপকারী অনুজীব ধংস করে দেয়। এছাড়াও তামাক চাষে কীটনাশকের এলোপাতাড়ি ব্যবহারের কারণে নদীর মাছসহ অন্যান্য সকল জীবের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। সর্বোপরি তামাক কিউরিং এর ফলে ব্যাপকহারে বন উজাড় হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষি অফিসের মতে, একর প্রতি তামাক চাষে কৃষকের আয় হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। অপরদিকে, একর প্রতি ভূট্টা চাষে লাভ হয় ২০-২৫ হাজার টাকা এবং গম চাষে লাভ হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। কিন্তু চাষী পর্যায়ে সরকারী প্রচারণার অভাবে কৃষকরা ঝুঁকছে ক্ষতিকারক তামাক চাষে।

কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, একই জমিতে পরপর তামাক চাষের ফলে সে জমিতে অন্য ফসল উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়। তামাক মাটির প্রাণশক্তি নিঃশেষ করে দেয়। কৃষি বিশেষজ্ঞ ডঃ এএসএম আফসারূজ্জামান তাঁর গবেষণাপত্রে জানান, আলীকদমের অধিকাংশ মাটি বেলে-দোঁআশ থেকে এটেল-দোঁআশে সীমাবদ্ধ। পাহাড় ধসে, জৈব-রসায়নিক প্রক্রিয়া ও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নানাবিধ খনিজ পদার্থের মিশ্রণে সৃষ্টি এখানকার মাটি।

মাটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ উপজেলার মাটির উর্বরতা সন্তোষজনক নয়। কৃষি জমিতে কমপক্ষে শতকরা ২ ভাগ জৈব পদার্থের প্রয়োজন থাকলেও আলীকদমের মাটিতে রয়েছে মধ্যম মানের মাত্র ১.৭২-২.৪৩ ভাগ জৈব পদার্থ। তামাক চাষে অসম মাত্রায় ইউরিয়া, বিষাক্ত ও নিষিদ্ধ বালাইনাশকের এলোপাথাড়ি ব্যবহার করা হয়। তাই দিনদিন কমছে এখানকার মাটির উর্বরতা। মাতামুহুরী নদীর বিস্তির্ণ চরাঞ্চলজুড়ে তামাক চাষের ফলে মাটি পড়ে নদীটি নাব্যতা হারাচ্ছে। তামাক ক্ষেতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও উদ্বেগজনক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে নদী তীরবর্তী তামাক ক্ষেতের বিষাক্ত পানি মাতামুহুরীতে পড়ায় নানা প্রজাতির মাছ ইতোমধ্যে উধাও হয়ে গেছে।

ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, ঢাকা ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ট্যোবাকো, নাসির ট্যোবাকো দরিদ্র কৃষকদের লোভের ফাঁদে ফেলে তামাক চাষে নিয়োজিত রেখেছে। স্থানীয় পরিবেশবাদী উচ্চতমনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, তামাক সুস্থ পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর চাষ। তামাক চাষের ফলে মাটির উর্বরতার নাশ ও নদীর নাব্যতা হ্রাস এবং বন-জঙ্গলের জীববৈচিত্র হুমকির মধ্যে পড়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন