আলীকদমের নয়াপাড়ায় আমিন মেম্বারের বিরুদ্ধে প্রবাসীর বসতবাড়িতে ভাংচুরের অভিযোগ

fec-image

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়নে নুরুল আমিন প্রকাশ আমিন মেম্বারের বিরুদ্ধে  জমি দখলের ঘটনার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন ও ভুক্তভোগী আলী জোহারের পরিবার। 

অল্পদিনের ব্যবধানে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান ও এক প্রবাসীর জমি দখলে নিতে অপচেষ্টা করে আমিন মেম্বার। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা রুজু হলে বিজ্ঞ আদালত তাকে জামিন নামঞ্জুর করে শ্রীঘরে পাঠিয়েছেন।

শনিবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় অবৈধভাবে জমি দখলের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের পৈত্রিক জমি দখলের অপচেষ্টায় তিনি আলোচনায় আসেন। গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় একই এলাকার আলী জোহারের বসত ঘর ও বাগান দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা ও মারামারির ঘটনা ঘটায় আমিন মেম্বার গং। এ ঘটনায় ৩১ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা রুজু হলে ওই এলাকার পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নয়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মালয়েশিয়া প্রবাসী আলী জোহারের স্ত্রী ২০১১ খ্রিস্টাব্দে ২৮৭ নম্বর তৈন মৌজার ৮৩নং খতিয়ানের ওয়ারিশী মালিক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন প্রকাশ নাছির চেয়ারম্যান থেকে বায়না নামা রেজিস্ট্রী দলিল মূলে ৪০ শতক জমি কিনেন। জমির দলিল নং- ৮০/২০১১, তারিখ: ১০/০৭/২০১১। এ জমিতে প্রবাসী আলী জোহারের পরিবার বসতবাড়ি নির্মাণ ও আম বাগান সৃজন করে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ভোগদখল ও বসবাস করছেন।

সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৮৩ নম্বর খতিয়ানের জমির মূল মালিক ছিদ্দিক আহামদ। এ খতিয়ানের কয়েকটি দাগে জমি স্থিত আছে ৫ একর ৬০ শতক। খতিয়ানের জমির ওয়ারিশসূত্রে মালিক হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের পরিবারবর্গ।

৮৩ নম্বর খতিয়ান থেকে প্রবাসী আলী জোহারের পরিবারকে ৪০ শতক জমি বিক্রি ছাড়াও ছিদ্দিক আহমদের ওয়ারিশরা ৩০ শতক জমি ‘নজির মেম্বার পাড়া ছিদ্দিক আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নির্মাণে এবং ২০ শতক জমি ‘নয়াপাড়া ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদরাসা’ নির্মাণে দান করেন।
এ খতিয়ানের জমি থেকে বিক্রি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য দান করার পরও ৪ একর ৭০ শতক জমি অবশিষ্ট থাকার কথা।

আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন চেয়ারম্যান জানান, ‘তার পিতার নামীয় এ খতিয়ানে অবশিষ্ট জমি সুদীর্ঘকাল ধরে ওয়ারিশসূত্রে তারা ভোগদখলে আছেন। কিন্তু সম্প্রতি মৃত সিরাজ আহামদের ছেলে ফরিদ ও কাশেম মেম্বারের ছেলে আমিন মেম্বারগং পরস্পর যোগসাজশে নাছির চেয়ারম্যানদের ওয়ারিশী সম্পত্তি জবর দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এ ধারাবাহিকতায় অবৈধবাবে জমি দখলে নিতে গত ১৮ জুলাই আলী জোহারের স্ত্রীর নামে কেনা বসত বাড়ি ও বাগানে হামলাসহ ভাংচুর করে আমিন মেম্বার গং। এ ঘটনায় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি হলে পুলিশ আমিন মেম্বারগংকে বারংবার আইন-শৃঙ্খলার বিঘ্ন না করতে অনুরোধ জানান।’

প্রবাসী আলী জোহার জানান, ‘বিদেশে দীর্ঘদিন কষ্টার্জিত টাকা আয় করে ৪০ শতক জমি কিনে বাড়ি ও বাগান করেন তিনি। সম্পূর্ণ বিনা উষ্কানিতে আমিন মেম্বারগং আমার বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও আমার স্ত্রী-সন্তানদের মারধর করে। এ ঘটনায় আলীকদম থানায় আলী জোহারের স্ত্রী মমতাজ বেগমের এজাহারের ভিত্তিতে গত ২০ জুলাই একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নং- ০২, ধারা: ১৪৩, ৪৪৭, ৪৪৮, ৩২৩, ৩৭৯, ৪২৭, ৫০৬, ১০৯ পেনাল কোড।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিবাদীগং জায়গা দখল করার উদ্দেশ্যে ঘরের ভিতরে ঢুকে। এতে বাধা দিলে বাড়ি ঘর ভাংচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ সময় নুরুল আমিন মেম্বারের নির্দেশে বাড়ির বাসিন্দাদের এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ সময় নুরুল আমিন গং বাদীর কানের দুল ও নগদ টাকাও ছিনিয়ে নেয়।

এ ব্যাপারে গত ২০ জুলাই উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে নুরুল আমিন গংদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জমি দখলের বিষয়টি উত্থাপাতি হয়। এদিন রাতে পুলিশ আমিন মেম্বারসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। ওইদিন রাতেই পুলিশ এজাহারভুক্ত ১২ আসামিকে গ্রেফতার করে কোর্টে সোপর্দ করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আল আমিন কোর্টকে জানান, ‘মামলার আসামীরা ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত আছে। এলাকার অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে আসামিদের জেল হাজতে রাখা প্রয়োজন।
এদিকে, এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য শনিবার দুপুরে মামলার এজাহারভূক্ত ৫নম্বর আসামি উম্মে শেলী জামিনে এসে ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। দ্যা দামতুয়া ইনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে দু’পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্যে তিনি ৮৩ নম্বর খতিয়ানের ক্রয়কৃত জমি ঠাণ্ডা মিয়ার ওয়ারিশদের বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ করেন।’

এ ব্যাপারে নাছির উদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, ‌‘তাঁর পিতার জীবদ্দশায় এ খতিয়ান থেকে যা বিক্রি করেছেন তা ইতোপূর্বেই দখল হস্তান্তর করা হয়। সুদীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর জমি দাবী করে এসে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এরফলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আমিন মেম্বার জেলে যাওয়ার আগে এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘জমিটি তাদের ওয়ারিশী জমি। তাই তারা দখলে নিতে চেষ্টা করছেন।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, সংবাদ সম্মেলন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন