আলীকদমে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান সৈয়দুর রহমান

Soyodur Rahman-Alikadam

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):
স্বাধীনতার ৪২ বছর পার হলেও সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার এক মুক্তিযোদ্ধা। সরকারীভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা (অন্তর্ভূক্তি) তালিকায় নাম এলেও প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতায় চূড়ান্ত তালিকায় নাম উঠেনি তার। স্থানীয়ভাবে পাওয়া প্রত্যয়নপত্রে ‘তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন’ মর্মে জানা গেছে।
    সেক্টর-১, প্লাটুন নং- ১১২, চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুদ্ধকালীন কমান্ডার পুলিন বিহারী শর্মার দেয়া প্রত্যয়নসূত্রে জানা গেছে, সৈয়দুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে চট্টগ্রাম ও পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা জেড.এ দিদার হোসেন চৌধুরী জানান, যাচাই-বাচাই পূর্বক তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সৈয়দুর রহমানকে তালিকাভূক্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে সৈয়দুর রহমান বিপদাপন্ন মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। ওই সময় তিনি আলীকদমে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কালাম ও ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন পৃথক দু’টি প্রত্যয়নপত্রে দাবী করেন, মুক্তিযোদ্ধকালীন সময়ে পার্বত্য আলীকদমে সৈয়দুর রহমান পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি একজন সংগঠকও ছিলেন। ১৯৭৮ সালের আলীকদম বাজারের এক অগ্নিকান্ডে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ পুড়ে যায়। তৎসময়ে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তিনি পুড়ে যাওয়া সনদটি পুনরায় সংগ্রহ করতে পারেননি।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদনে ছৈয়দুর রহমান জানান, তার পিতার নাম মরহুম বদিউর রহমান ও মাতার নাম মরহুম মাছুমা বেগম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি আলীকদম ইউনিয়ন কাউন্সিলের সচিবের চাকুরী ইস্তফা দিয়ে এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ওই সময় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১নং সেক্টরের ১১২নং প্লাটুনে যোগ দিয়ে কমাণ্ডার পুলিন বিহারী শর্ম্মা ও শামসুরের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম ও পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে হানাদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানা আক্রমন করেন এবং দোহাজারীতে খন্ডযুদ্ধে অংশ নেন। সে সময় তাদের সাহসী পদক্ষেপের পর স্থানীয় জনতা সাতকানিয়া কলেজ মাঠে তাকেসহ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধিত করেন।

সৈয়দুর রহমান দাবী করেন, স্বাধীনতার পর অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যায় তিনিও চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেন। এ সময় এম এ জি ওসমানী স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সনদ পান। ১৯৭৮ সালে আলীকদম বাজারে সংগঠিত এক অগ্নিকান্ডে তার বাড়ি পুড়ে যায়। এ সময় তার মুক্তিযোদ্ধা সনদটিও পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধকালীন আমার সহযোদ্ধা পুলিন বিহারী শর্ম্মা, নূর মোহাম্মদ ও তেজেন্দ্র দে সহ আরো অনেকে বর্তমানে গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। পুলিন বিহারী শর্ম্মা এখনো জীবিত আছেন। বিভিন্ন সময় আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই পূর্বক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম তালিকাভূক্তির জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ইউএনও কার্যালয়ে নির্দেশনা পত্র দেন। এরপরও তার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি’।

সৈয়দুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুর্বল নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক উদাসীনতায় তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করা হয়নি। স্বাধীনতার এতবছর পরও স্বীকৃতি না পাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে এর চেয়ে গ্লানিকর আর কিছু নয়।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক দুংড়ি মং মার্মার যৌথ স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সৈয়দুর রহমান একজন সেবকের ভূমিকা পালন করেন। মু্ক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন উপায়ে রসদ যোগাতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের একজন ত্যাগী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধকালীন স্থানীয়ভাবে একজন সংগঠনের ভূমিকা রাখায় তারা সৈয়দুর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট দাবী জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন