মহেশখালীর মাতারবাড়ী সমুদ্র বন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখলো। একনেকে পাস হয়েছে বিল। ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের’ কাজ শেষ হবে আগামী ২০২৬ সালের জুনে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে এটি একনেক সভায় পাস করা হয়েছে সম্প্রতি সময়ে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সচিবালয়ে জাইকার বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হিতোশি হিরাতা সাক্ষাৎ করতে গিয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
হিতোশি হিরাতা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রত দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক সংকট নিরসন এই দুই ক্ষেত্রকে প্রাধান্য দিয়ে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও জাপান সরকারের অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্সসহ (ওডিএ) ৯টি সহযোগী প্রোগ্রামের অধীনে মাতারবাড়ীতে চলবে জাপানের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।
এটি বাস্তবায়ন হলে বড় ড্রাফটের জাহাজের বার্থিং সক্ষমতাসম্পন্ন এই বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে এশিয়ার অন্যান্য অংশের সাথে গুরুত্বপুর্ণ বাণিজ্যিক গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে।
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। শীঘ্রই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নৌ-পরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ, যুগ্ম প্রধান রফিক আহম্মদ সিদ্দিক, জাইকার বাংলাদেশের রিপ্রেজেন্টেটিভ ওয়াতার ওসাওয়া ও প্রিন্সিপাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার আহমদ মুকাম্মেল উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টটি বাস্তবায়ন করবে। এতে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ও ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দেবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
প্রকল্পের মধ্যে অন্যান্য কাজের সঙ্গে ৪ লেনবিশিষ্ট প্রায় ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হবে। সড়কে ১৭টি সেতু থাকবে। ওই ১৭ সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭ কিলোমিটার। প্রকল্পের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ থেকে জুন ২০২৬ পর্যন্ত। এটি বাস্তবায়িত হলে ১৯ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) বন্দরে ভিড়তে পারবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর বিরাট ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছে নৌ-মন্ত্রণালয়।
এদিকে, সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটি মাতারবাড়ীর প্রকল্প পরিদর্শন করেন।ওই কমিটির সভাপতি মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাতারবাড়ী প্রকল্পের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে।
যে কারণে মাতারবাড়ীতে বন্দর
বাংলাদেশের বন্দর সমূহের মাধ্যমে প্রতিবছর আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর জাহাজ আগমন বৃদ্ধির হার ১১ শতাংশেরও বেশি।
কিন্তু কর্ণফুলী চ্যানেলের গভীরতা ও প্রশস্ততা কম হওয়া এবং পাশাপাশি দুটি বাঁক থাকায় ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের চেয়ে বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে নোঙর করতে পারে না। ফলে ২,৫০০-২,৮০০ টিইইউ এর বেশি কনটেইনার কিংবা ২০,০০০-৩০,০০০ মেট্রিকটনের অধিক পণ্য নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না।
১৯০ মিটারের অধিক দৈর্ঘ্যের ও ১১ মিটার পর্যন্ত ড্রাফটের জাহাজের পণ্য চট্টগ্রামের বহির্নোঙ্গরেই লাইটার জাহাজের মাধ্যমে খালাস করা হয়। তবে লাইটার জাহাজ স্বল্পতার কারণে পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে পণ্য খালাস করতে হয়। এতে একদিকে যেমন সময় বেশি লাগে, অন্যদিকে ব্যয়ও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।