আল্লামা শফির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারিরা চিরতরে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে: হেফাজতে ইসলাম
আবদুল্লাহ নয়ন, কক্সবাজার:
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন। এটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্টির ঐক্যের সুসংহত প্ল্যাটফর্ম।’ তিনি হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ‘রাসূলের (স.) ওয়ারিশ’ ও ‘এ যুগের দরবেশ’ দাবি করে বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে নাস্তিকরা প্রগতিবাদের নামে কতিপয় নারীদের মাঠে নামিয়েছে।’
‘এসব ষড়যন্ত্র করে আল্লাহর ওলী আল্লামা আহমদ শফীর সুনাম বিন্দুমাত্রও ক্ষুন্ন করা যাবে না’ বলেও দাবি করেন তিনি। মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘আল্লাহর ওলীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারিরাই চিরতরে আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।’
তিনি সোমবার বিকালে হেফাজতে ইসলাম কক্সবাজার জেলা শাখার ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ‘রোজাদারদের সম্মানে’ শহরের নিরিবিলি অর্কিডে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরও বলেন, “আগামি নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকে ইসলামের পক্ষে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে হবে। অন্যথায় জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।” তিনি মনে করেন, ‘টুপি, দাঁড়ি, ইসলামি তাহযীব তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অতীতেও কেউ পার পায়নি, ভবিষ্যতেও পার পাবে না।’
হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো বা ক্ষমতাসীন করার জন্য নয়। তবে কাউকে ক্ষমতায় থাকতে হলে কিংবা যেতে হলে হেফাজতের ১৩ দফা ঈমানি দাবি মানতে হবে।’
তিনি ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে ইসলামবিদ্বেষি শক্তিকে জনগণ যেভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাতেই প্রমাণিত হয়েছে এদেশে তৌহিদী জনতার শক্তি বেশি না নাস্তিক্যবাদীদের শক্তি বেশি!’ মাওলানা ইসলামাবাদী মনে করেন, ‘আল্লাহদ্রোহী অপশক্তি পীর মাশায়েখের এই দেশকে নাস্তিকদের চারণভূমি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। কিন্তু মুসলমানদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতেও এদেশে নাস্তিকদের কোন স্থান হবে না।’
হেফাজতে ইসলামের কক্সবাজার জেলা সভাপতি ও জোয়ারিয়ানালা এমদাদুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আবুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আরও বলেন, ‘হেফাজতের আন্দোলন সরকার পতনের জন্য নয়, কিন্তু এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ১৩ দফা ঈমানি দাবি বাস্তবায়ন না করার পরিণতিতে সরকারের পতন ঘন্টা বেজে গেলে হেফাজতের কিছু আসে যায় না।
রোজাদারের এই আয়োজনে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘৫ মে দিবাগত গভীর রাতে ঢাকার শাপলা চত্বরে যিকিররত ঘুমন্ত শত শত আলেমকে সরকারি বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শহীদ করেছে। এতে আহত হয়েছেন হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম, মুমিন-মুসলমান। আলেম, ওলামা ও মুমিনদের এই নজিরবিহীন ত্যাগ ও রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই ঘটনার বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবেন।’
‘ঈমান-ইসলাম রক্ষার তাগিদে আগামিতে যে কোন কঠিন কর্মসূচির ডাক আসলে তাতেও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে সকল মুমিন মুসলমানদের প্রস্তুত থাকতে হবে’ বলেও উদাত্ত্ব আহবান জানান মাওলানা ইসলামাবাদী। আলোচনার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা ক্বারি মুহাম্মদ আছেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইয়াসিন হাবিব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা মুফতি হারুন ইজহার ও ঢাকা মহানগর যুগ্ম-সম্পাদক মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন। ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বর থেকে ফেরার পথে কুমিল্লায় সরকার সমর্থকদের হামলায় শাহাদত বরণকারি মাওলানা মতিউর রহমানের বাবা আমানত উল্লাহও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
হেফাজতে ইসলাম জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফেজ হারুন ও প্রচার সম্পাদক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বক্তব্য রাখেন জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা হাফেজ নুরুল আলম আল মামুন, জেলা ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ শোয়াইব, হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগরের অর্থ সম্পাদক মাওলানা আনোয়ার হোসাইন রব্বানী, রামু চাকমারকুল ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আবদুর রাজ্জাক প্রমূখ। এছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-জেলার বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন মাওলানা শেখ সুলাইমান, হ্নীলা জামেয়া দারুচ্ছুন্নাহর নির্বাহী পরিচালক মাওলানা আফসার উদ্দিন চৌধুরী, রাজারকুল আজিজুল উলুম মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক মাওলানা মোহছেন শরীফ, রামু মাজহারুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ হারুন, কক্সবাজার পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মোহাম্মদ আলী, হেফাজতে ইসলাম কক্সবাজার পৌর সভাপতি মাওলানা হাফেজ মুবিনুল হক, সহ-সভাপতি মাওলানা মঞ্জুরে ইলাহী, সাধারণ সম্পাদক সায়েম হোসেন চৌধুরী, এম. নুরুল হক চকোরী প্রমূখ।