parbattanews

হতাশা আর নিরাশায় মিলবে না মুক্তি, আল্লাহর উপর আস্থা রাখুন অটুট

আজ পুরো পৃথিবী হতাশায় নিমজ্জিত। হতাশার কালো ঘ্রাসে আমরা আচ্ছাদিত। পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মালম্বী লোকদের সাথে আমরা মুসলিমরাও আজ হতাশার মাঝে আছি। এই করোনাতে আমরা আমাদের ভাগ্যটাকে করোনার হাতেই তুলে দিতে কার্পণ্য করি নাই। আমরা মনে করি করোনা হয়েছে তো মৃত্যু নিশ্চিত কিংবা নেগেটিভ এসেছে তো বেঁচে ফিরলাম বোধ হয়। আমার মৃত্যুটা আর বোধ হয় এবারের যাত্রাই হচ্ছে না!

অথচ আমার যারা মুসলিম বলে দাবি করি তারাও আজ এই বিভীষিকাময় ভয়াল পরিস্থিতিতে যেখানে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস আর আস্থার সমন্বয়ে আক্বিদাকে আরো পরিপক্ক করে তাকদিরের উপর নির্ভর করার কথা, সেখানে আমরা আমাদের মৃত্যুকে নির্ধারণ করে রেখেছি করোনা পজেটিভ আর নেগেটিভ আসার উপর!!

করোনা একটা রোগ মাত্র। এটা দিয়েছেন আল্লাহ। এই রোগটা একটা ভাইরাসের মাধ্যমে আমাদের দেহে ছড়াচ্ছে। আর এই ভাইরাসটা যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টি, সুতরাং এটার নিজস্ব কোন ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করা মুসলিমদের জন্য অতিব গুনাহের কাজ। অতএব এই ভাইরাস যেহেতু আল্লাহর হুকুম মেনে অন্যান্য সৃষ্টির মত চলে, ‍সুতরাং এই ভাইরাস আক্রান্ত মানেই মৃত্যু না আর আক্রান্ত না হলেই মানে জীবিত না। এটা কেবল একটা মাধ্যম। সব ইশারা মহান সৃষ্টিকর্তার।

এই ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য কোটি টাকা খরচ করেও মৃত্যুর নজির যেমন আছে, তেমনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সামান্য লেবু আর গরম পানি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ হওয়ারও নজির আছে। সুতরাং রোগকে মৃত্যু নয় আর প্রতিষেধককে জীবন মনে না করে রোগ এবং প্রতিষেধক এই দু‘টোর সমন্বয়ে এই ভাইরাসের স্রষ্টার মুখাপেক্ষি হতে হবে।

আমরা মানুষ খুবই দুর্বল প্রাণী। অল্পতেই হতাশ হওয়া আদের স্বভাব। আমরা অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ি। মহান আল্লাহ কোরআন বলেন, ‘আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায়। আর তাকে অনিষ্ট (বিপদ) স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে যায়।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৮৩)

সুখ-দুঃখ , আনন্দ-বেদনায় ঘেরা আমাদের জীবন। আমরা যখন সুখে থাকি তখন ভুলে থাকি দুঃখকে আর যখন কষ্টে থাকি তখন নিমজ্জিত হয়ে থাকি হতাশায়। মনে হয় এই বুঝি আমি শেষ। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ—আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৫৩)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে, প্রতিবছর সারা পৃথিবীতে আট লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। সম্ভবত এর কারণ হলো, এসব মানুষ বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পায় না।
এই সকল মানুষের দৃষ্টিতে বিষন্নতা ও বিপদাপদ মানেই সব কিছু শেষ! কিন্তু কোনো অবস্থাতেই মুসলমানের সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। বিশ্বাসী মানুষ কখনো হতাশ হয় না।

ইয়াকুব (আ.) তাঁর শিশুপুত্র ইউসুফ (আ.)-কে হারানোর বহু বছর পরও তাঁর মনে আশার আলো জ্বলে ছিল। তিনি তাঁর অন্য সন্তানদের বলেন, ‘হে আমরা পুত্ররা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে না। কেননা অবিশ্বাসী সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় না।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৭)

আমরা হতাশা আর নিরাশার মাঝে না থেকে বিশ্বাসের জায়গাতে আরো মজবুত হওয়া উচিত। আমরা আক্রান্ত হলে শেফা দিবেন আল্লাহ, আবার সুস্থ থাকলে অসুস্থতাও আসে আল্লাহর কাছ থেকে এই বিশ্বাস অন্তরে স্থাপন করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সুরা : ইনশিরাহ, আয়াত : ৫-৬)

সুস্থতার পরেই আমাদের জন্য থাকতে পারে কষ্ট আবার কষ্টের পরেই আমাদের থাকতে পারে সুখ। এই বিশ্বাসকে আরো গাঢ় করতে হবে আমাদের।

সুতরাং এই করোনাতে আমাদের ভেঙ্গে না পড়ে শারীরিক আর মানসিক মনোবলকে আরো মজবুত করার মাধ্যমে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হতাশাকে দূরীভূত করে আশার বাতিঘরকে প্রজ্জলিত করতে হবে।

আমাদের ভালো মন্দ সব তাকদীরের উপর ছেড়ে দিয়ে আমরা আমাদের সুস্থ থাকার কাজ চালানোর মাধ্যমে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। আর বিশ্বাস করতে হবে হায়াৎ এবং মৃত্যু সব আল্লাহর হাতে। এই বিশ্বাস ই হবে ‍মুমিনের বেঁচে থাকার সম্বল আর মারা যাওয়ার তৃপ্তি।

Exit mobile version