parbattanews

আসছে লবণ মৌসুম : উপকূল রক্ষায় বেড়িবাঁধ সংস্কার জরুরী

beribad

নিজস্ব প্রতিনিধি :
পর্যটন জেলা ও প্রসিদ্ধ লবণ শিল্প নগরী কক্সবাজার জেলার উপকুলীয় ও সীমান্ত এলাকায় ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে ষাঠের দশকে নির্মিত সি-ডাইক ও ইন্টারিউর ডাইক বেড়িবাঁধ। বন্যা, জলোচ্ছাস, জোয়ারের পানিসহ বিভিন্ন সময়ের প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভাংছে জেলার বাঁধগুলো। দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসইভাবে নির্মাণ না করে শুধুমাত্র মাটি দিয়ে তৈরী ও শুষ্ক মৌসুমে নকশা অনুযায়ী কাজ না করায় প্রতি দূর্যোগে বাঁধ ভাঙ্গনের প্রধান কারন হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সমুদ্র উপকূলজুড়ে মেনগ্রোফ ফরেষ্ট উজাড় হওয়াকেও বাঁধ ভাঙ্গার কারন বলে মনে করছেন অনেকে।

তথ্য সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে গেল ভয়াবহ বন্যায় বিলীন হয়ে গেছে ৭টি উপজেলার সাড়ে ৪০ কিঃ মিঃ বেড়িবাঁধ। ঝুকিঁপুর্ণ হয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলার উপকূলীয় অন্যান্য বেড়িবাঁধগুলো। পাশাপাশি উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের বিলীন হওয়া অংশগুলো দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি ঢোকায় দিন দিন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বার বার বন্যা এবং সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে জেলার মোট ৫৯৬ কিঃ মিঃ বেড়িবাঁধের মধ্যে ভেঙ্গে যাওয়া বা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ সাড়ে ৪০ কিঃ মিঃ অংশের মেরামতের জন্য ২৯ কোটি ১৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে বলে কক্সবাজার পাউবো সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজারের বেড়িবাঁধগুলো শুধুমাত্র মাটির তৈরী। তবে টেকনাফসহ কিছু ঝুকিপুর্ণ অংশে মাত্র ৮ থেকে ১০ কিঃ মিঃ সিসি ব্লক বা প্রতিরক্ষা মূলক বাঁধ রয়েছে। তবে জেলার উপকূলীয় এলাকার সকল বিড়িবাঁধগুলো যদি সিসি ব্লক পদ্ধতিতে নির্মাণ করা যায় তাহলে বাঁধ ভাঙ্গার সম্ভবনা অনেক কমে আসবে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন করে সিসি ব্লক পদ্ধতিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না। এর ফলে উপকূলীয় এলাকাগুলো সেই ঝুকিঁর মধ্যেই রয়ে গেলো। তাছাড়া অনেক সময় শুষ্ক মৌসুমে বেড়িবাঁধের নকশা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় প্রতি বছর বন্যা বা অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে বিলীন হচ্ছে কোন না কোন স্থানের বাঁধ।

পাউবো সূত্রে আরো জানা গেছে, জেলার ২১টি পোল্ডারে গেল বন্যায় বেড়িবাঁধগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে চকরিয়ার ৬৫ নং পোল্ডারের ২.০৫০ কিঃমিঃ, ৬৫/এ নং পোল্ডারের ১ কিঃমিঃ, ৬৫/এ-১ নং পোল্ডারের ১.৫৫০ কিঃ মিঃ, ৬৫/এ-৩ নং পোল্ডারের ১.৫২০ কিঃমিঃ, টেকনাফের ৬৭/এ নং পোল্ডারের ৩.৫০০ কিঃমিঃ, ৬৭/বি নং পোল্ডারের ০.০৮০ কিঃমিঃ, ৬৮ নং পোল্ডারের ০.২৯০ কিঃমিঃ। সদর ৬৬/৪ নং পোল্ডারের ০.০৩০ কিঃমিঃ, ৬৬/৩ নং পোল্ডারের ০.৫০৯ কিঃমিঃ, ৬৬/৩ নং পোল্ডারের ০.১৫০ কিঃমিঃ। সদর ও রামুর ৬৬/২ নং পোল্ডারের ০.৬৫০ কিঃমিঃ, সদর ৬৬/১ নং পোল্ডারের ১.২৫০, কক্সবজর শহর রক্ষা প্রকল্প এর ০.৩০০ কিঃমিঃ, বাঁকখলী নদী সংরক্ষণের ০.৫০০ কিঃমিঃ ও ০.৩০০ কিঃমিঃ, ৬৯ নং পোল্ডারের ০.৪৭০ কিঃমিঃ। মহেশখালী ৬৯ নং পোল্ডারের ০.৪০০ কিঃমিঃ ও ২.০০০ কিঃমিঃ, ৭০ নং পোল্ডারের ২০.১৫০ কিঃমিঃ। কুতুবদিয়ার ৭১ নং পোল্ডারের ২.৩৮১ কিঃমিঃ এবং ৬৪/২বি নং পোল্ডারের ১.৪৭০ কিঃমিঃ অংশগুলো এবারের বন্যায় বিলীন হয়েছে। কক্সবাজরে সর্বোমোট ৪০.৫৫০ কিঃমিঃ সি ডাইক ও ইন্টারিউর ডইক বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। বর্তমানে তা অধিকাংশই সংস্থার বা নতুন ভাবে নির্মানের করা হয়নি।

এছাড়া জেলার লবণ ব্যবসায়ী ও চাষীরা আশংকা করছেন, দ্রুত বেরিবাধ সংস্কার না করলে লবণ চাষ না হওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশেষ করে পেকুয়া ও টেকনাফের অধিকাংশ এলাকার বেরিবাধ ভাংগা। সে কারনে প্রচুর পরিমান জমি লবণ চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার পাউবো সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় দু’দফা বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে জেলায় সাড়ে ৪০ কিঃমিঃ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এসব বাধগুলো পরির্দশ করে আমরা একটি প্রতিবেদন এবং এসব বাঁধ সংস্কারের প্রয়োজনীয় টাকার হিসাব ইতোমধ্যে ঢাকা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করার আশা প্রকাশ করেন।

সরওয়ার আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরনের উপায় হচ্ছে জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুরু করতে হবে। আর শুষ্ক মৌসুমে নকশা অনুযায়ী কাজ করলে আগামীতে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন অনেকাংশে কমে আসবে।

কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে ২৩ লক্ষ মানুষকে ঘিরে রেখেছে বিশাল বঙ্গোপসাগর, নাফ-নদী, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি। এ পানি কক্সবাজারের মানুষের জন্য আশীর্বাদের পাশাপাশি অভিশাপও। আর এ অভিশাপ থেকে রক্ষার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের সাগর ও নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে বেড়িবাঁধ। কিন্তু সেই বেড়িবাঁধের এখন বেহল দশা। জেলার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ প্রায় সবস্থানে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বিশাল সাগর আর নদীর পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানিতে সয়লাব হয়েছে কক্সবাজারের ৮ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ।

এখনো পানির সাথে যুদ্ধ করছে কুতুবদিয়া, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া কক্সবাজার সদর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার পরিবার। এখানকার মানুষের জীবন চলছে জোয়ার ভাটার দোলাচলে। এবারের বাঁধ ভাঙ্গনে লোনা জলে বিনষ্ট হয়েছে শত শত চিংড়ি ঘেড়, গাছ-পালা ফসলি জমি, পনির নিচে তলিয়ে গেছে হাজরো বসত বড়ি, পানিতে সয়লাব হয়েছে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। তাই আগামীতে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও লবণ মৌসুম শুরুর আগে বেড়িবাঁধগুলো যেন ভাঙ্গনের কবলে না পড়ে তাই সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জনিয়েছেন জেলার সর্বোস্তরের জনসধারণ।

Exit mobile version