ইউপিডিএফ’র মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১৩ সালে নিহত ৭, অপহৃত ৬২

bow

জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি :

পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০১৩ সালে বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় ৭ জন নিহত এবং ৬২ জন অপহৃত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল (Human Rights Monitoring Cell)।

গতকাল বুধবার ইউপিডিএফ’ প্রচার ও প্রকাশণা  বিভাগের  নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছর ৩ আগস্ট জেলার মাটিরাঙা উপজেলার তাইন্দংয়ে পাহাড়িদের উপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে ২৫ জানুয়ারি একই উপজেলার হরিধন মগপাড়া ও হেমঙ্গ কার্বারিপাড়ায় হামলা চালানো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আরো কমপক্ষে ৪টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে মাটিরাঙা উপজেলায়। অপর ঘটনাটি ঘটে বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের মুরুংঝিড়ি এলাকায়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্য গ্রেফতার হয়েছে ২১ জন এবং নিরীহ গ্রামামবাসী গ্রেফতার হয়েছেন ২৪ জন। জেএসএস সন্তু গ্রুপের হামলায় নিহত হয়েছে ৪ জন ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্য এবং অপহৃত হয়েছে ৫৩ জন সমর্থক।

অপরদিকে, বোরকা পার্টির হামলায় ১ ইউপিডিএফ কর্মীসহ ২ জন নিহত ও ১ গ্রামবাসী আহত হয়েছে। এ ছাড়া অপহৃত হয়েছেন ৯ জন গ্রামবাসী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরেও জেএসএস সন্তু গ্রুপ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে আহত করে।  এছাড়া পাহাড়ি নারী, শিশু ও কিশোরী ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৭ জন। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হন ৮ জন। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ১ জন, ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছে ৬ জন, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ১ জন ও শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ১ জন। অপরদিকে ৫ জন বাঙালি নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ করা হয়। 

প্রকাশিত তথ্যে আরও বলা হয়, বান্দরবানের ফাক্ষ্যংপাড়ায় গোপনে বন্দোবস্ত নেওয়া মোহাম্মদ আলীর পক্ষে উপজেলা সার্ভেয়ার কর্তৃক প্রতিবেদন প্রদান ও মামলা দায়েরের ফলে ৩৩টি মারমা পরিবারের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

২০১৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা হচ্ছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার তাইন্দংয়ে ৩ আগস্ট হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বৌদ্ধমন্দিরসহ পাহাড়িদের ৩৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ হামলায় ৩৪টি বাড়ি, একটি বৌদ্ধবিহারের দেশনাঘর ও একটি দোকান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়। বগাপাড়া, সর্বেশ্বর পাড়া, বান্দরশিংপাড়া, মনুদাসপাড়া, তালুকদার পাড়ায় ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাটসহ ১২টি গ্রামে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এ হামলায় কমপক্ষে তিন সহস্রাধিক পাহাড়ি পালিয়ে ভারতের সীমান্তে, পানছড়ি উপজেলায় ও জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। কামাল হোসেন নামে এক বাঙালিকে অপহরণের ঘটনায় এ হামলা চালানো হয়। এর আগে ২৫ জানুয়ারি একই উপজেলার হরিধন মগপাড়া ও হেমঙ্গ কার্বারিপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ২টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩৪টি বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা হরিধন মগপাড়ার জিতাসুখা বৌদ্ধবিহারের মাইকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ও বিহারের বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর করে।

বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসিত বাঙালি হামলা : ২০১৩ সালের ২ ও ৫ এপ্রিল এবং ১৮ জুন খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলায় পুনর্বাসিত কর্তৃক সংঘটিত ৩টি হামলায় টাকারমনিপাড়াসহ কয়েকটি পাড়া থেকে কমপক্ষে ৬৭টি পাহাড়ি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। এ হামলায় কমপক্ষে ১১ জন পাহাড়ি আহত হয়।

বান্দরবানের লামা উপজেলার রূপসী পাড়া ইউনিয়নের মুরুংঝিড়ি এলাকায় সেটলারদের হামলায় আহত হয়েছে ১১ জন পাহাড়ি। এ ছাড়া রামগড় ও পানছড়ি উপজেলায় পাহাড়িদের দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে রাঙামাটির নান্যাচর, খাগড়াছড়ি সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় সেটলার কর্তৃক কমপক্ষে ২৩ জন পাহাড়ি মারধরের শিকার হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন