ইউপিডিএফের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এদিনে গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রাম এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে নানা আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করা হয়।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা : খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোন ছড়া ও পেরাছড়া ইউনিয়নে ইউপিডিএফ’র ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। সকাল ৯টায় ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘আমরা করবো জয়…’ গানটি বাজিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এরপর ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরার নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি জেলা ও উপজেলা ইউনিটের সংগঠকরা অস্থায়ী শহীদ স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর একে একে শহীদ পরিবারবর্গ, অগ্রণী শিশু-কিশোর সংগঠন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ-এর নেতৃবৃন্দ শহীদ স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, শিশু-কিশোর, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা ও কেন্দ্রীয় কমিটির বার্তা পড়ে শোনান খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা হয়। শপথ বাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় সদস্য দেবদন্ত ত্রিপুরা। শপথ বাক্য শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সভা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

অপরদিকে একই সময় উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করা হয়। ‘‘জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ইউপিডিএফ-ই একমাত্র অবলম্বন, ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হোন, লড়াই এগিয়ে নিন’ শ্লোগানে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ-এর খাগড়াছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক প্রকাশ চাকমা।

সভা শুরুর আগে ইউপিডিএফ ও পেরাছড়া এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অস্থায়ী শহীদ স্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

এছাড়াও ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে উপলক্ষ করে ভাইবোনছড়া ও পেরাছড়া এলাকার জনগণ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যের দাবি জানিয়ে পৃথকভাবে সমাবেশ করেছে।

মাটিরাঙ্গা-গুইমারা : ‘ইউপিডিএফ’র পতাকাতলে সমবেত হোন, লড়াই এগিয়ে নিন’ এই শ্লোগানে ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে ইউপিডিএফ গুইমারা-মাটিরাঙ্গা ইউনিট। সকালে দলীয় সংগীতের মাধ্যমে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন উচনু মারমা। পরে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন ইউপিডিএফের পক্ষে উচনু মারমা, ঝিমিত চাকমা ও জিতেন ত্রিপুরা, পিসিপি ও যুব ফোরামের পক্ষে শান্ত চাকমা, স্বপন চাকমা ও শুভ চাকমা, শহীদ পরিবারের পক্ষে চিত্রা রাণী ত্রিপুরা ও পাইম্রাচাই মারমা এবং এলাকার সাধারণ জনগণের পক্ষে অংগ্যজয় মারমা ও ক্যহ্লাচিং মারমা।

এরপর দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের মাটিরাঙ্গার ইউনিটের সংগঠক জিতেন ত্রিপুরা, পিসিপির মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা ডিওয়াইএফ, মাটিরাঙ্গা উপজেলা শাখার সভাপতি শুভ চাকমা। সভায় সভাপতিত্ব করেন ও পার্টির কেন্দ্রীয় বার্তা পড়ে শোনান উচনু মারমা ও সঞ্চালনা করেন তৈফাং ত্রিপুরা।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তিতে জুম্মদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না বুঝতে পেরে পূর্ণসায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে ইউপিডিএফ গঠিত হয়। চুক্তি নিয়ে তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃত্ব যা আশঙ্কা করেছিল বর্তমানে তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে।

তারা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইউপিডিএফ নিপীড়িত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। শত দমন-পীড়নেও পার্টি তার অভিষ্ট লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

মানিকছড়ি : খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ‘জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ইউপিডিএফ-ই একমাত্র অবলম্বন’ এই শ্লোগানে সকাল ৮টায় অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের সম্মান জানিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।

এরপর অনুষ্ঠিত সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক চিনু মারমার সভাপতিত্বে ও সুদীপ্ত ত্রিপুরার সঞ্চালায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সদস্য আনুমা মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য উবাই মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানিকছড়ি কলেজ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অংচালা মারমা ও এলাকাবাসীর পক্ষে কংজরী মারমা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জুম্ম জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের এই দিনে ইউপিডিএফ গঠন করা হয়। জন্মলগ্ন থেকেই ইউপিডিএফ শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

বক্তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকার ইউপিডিএফের ওপর দমন-পীড়ন জারি রেখেছে। বর্তমানে এই দমন-পীড়নের মাত্রা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত অন্যায়ভাবে ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ, কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে।

বক্তারা সকল প্রকার দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে ইউপিডিএফের পতাকাতলে সমবেত হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বেগবান করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

লক্ষ্মীছড়ি : একই শ্লোগানে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফ’র ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সকাল ৮টার সময় দলীয় সংগীত ও দলীয় পতাকা উত্তলন করার পরে অস্থায়ী শহীদ স্তম্ভে পার্টি, গণফ্রন্ট, শহীদ পরিবার ও এলাকাবাসী পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। এরপর শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর অনুষ্ঠিত সভায় ইউপিডিএফের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক চন্দন চাকমার সভাপতিত্বে ও সরল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক তড়িৎ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উৎপল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি শাখার নেতা পাইসুইমং মারমা, কুদুকছড়ি স্কুলের সহকারী শিক্ষক এচিং মারমা, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য বিনোদ মুন্ডা ও খিরাম ইউনিয়নের মেম্বার লালন জয় চাকমা।

সভায় বিনোদ মুন্ডা বলেন, আমরা ব্রিটিশ আমল থেকে র্নিযাতিত নিপীড়িত হয়ে আসছি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আমরা জাতিসত্তার জনগণ কী পেলাম? বর্তমান সরকার ইউপিডিএফের মতো একটি গণতান্ত্রিক দলকে ধ্বংস করার জন্য যেভাবে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে তা পাকহানাদার বাহিনী কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংসের নীলনকশার কোন পার্থক্য নেই। তিনি লেজুড়বৃত্তি-দালালি না করার জন্য বর্তমান প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।

সভায় বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিকামী জনগণের ওপর সরকার যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

কাউখালী (রাঙামাটি) : রাঙামাটির কাউখালীতে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ইউপিডিএফ’র ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। আজ সকালে “আমরা করবো জয়” গানটি বাজিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

এরপর আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দুই মিনিট নিরবতা পালনের পর অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান ইউপিডিফের পক্ষে অমিয় চাকমা, তারেক মারমা, ডিএস চাকমা। এরপর এলাকার হেডম্যান, বিভিন্ন গ্রামের কার্বারী, জনপ্রতিনিধি, শহীদ পরিবার, তিন গণসংগঠন,পার্টি পরিবার ও বিভিন্ন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অমিয় চাকমা, রুপন মারমা ও কনিকা দেওয়ান এবং পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির বার্তা ও প্রতিজ্ঞা পড়ে শোনান বাবলু চাকমা।

বান্দরবান : ইউপিডিএফ’র ২১তম প্রতষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলটির বান্দরবান জেলা ইউনিটের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টায় বান্দরবান সদরের বালাঘাটায় ইউপিডিএফ’র জেলা কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার শুরুতে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তার সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

ইউপিডিএফ’র বান্দরবান জেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন প্রতীম চাকমা, হ্লাচিং মারমা, সুপ্রিয় চাকমা।

বক্তারা বলেন, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দরকার সু-উচ্চ আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত গণআন্দোলন। ইউপিডিএফ এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে অধিকারহারা জনগণের মুক্তির জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ইউপিডিএফের নেতৃত্বেই এ অঞ্চলের ভাগ্যাহত নিপীড়িত জনগণের মুক্তি অর্জন সম্ভব বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

তারা আরো বলেন, সরকার ইউপিডিএফের নেতৃত্বে পরিচালিত গণআন্দোলনকে ধ্বংস করে দিতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারপরও ইউপিডিএফ তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া তিন জেলার অন্যান্য ইউনিটেও ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন