ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান দাবিতে চার সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার:

পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর অন্যতম সংগঠক ও মুখপাত্র এবং শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমার সন্ধান দাবিতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোাক্রেটিক ফ্রন্ট), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

আজ শুক্রবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরাম খাঁ হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চার সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে গত ৯ এপ্রিল বিকালে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকায় সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে মাইকেল চাকমা নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে বলে জানানো হয়।
গত ১৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও এখনো মাইকেল চাকমার কোন খোঁজ না পাওয়ায় তাঁর জীবন নিয়ে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

মাইকেল চাকমার প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্দ করে দিতে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় ‘রাজনৈতিক মহলে মাইকেল চাকমা একজন পরিচিত নেতা। তিনি শ্রমজীবী ফ্রন্ট (ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাদেও ইউপিডিএফ এর মুখপাত্র ও ঢাকা অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং টিমের সদস্য এবং জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদেরও একজন সংগঠক।

নিজ সংগঠনের পাশাপাশি দেশের প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের নিয়মিত পরিচিত মুখ হচ্ছেন মাইকেল চাকমা। মিডিয়ায়ও তার যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ট কন্ঠস্বরের নাম হচ্ছে মাইকেল চাকমা। মূলত তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর স্তব্দ করে দিতে তাকে তুলে নেয়া হয়েছে বলে আমরা আশঙ্কা করছি’।

মাইকেল চাকমা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্য সমতলও যে নিরাপদ নয় তা মাইকেল চাকমার নিখোঁজের হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হল। তাঁর মত পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিখোঁজ হওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ঘটনা কেবল পাহাড়ের জন্য নয়, সমতলের গণতান্ত্রিক মুক্তমনা রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির জন্যও অশনি সংকেত বলে আমরা মনে করি। আমরা আরো মনে করি, মানুষের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক ও মুক্তমত চর্চার স্বার্থে মাইকেল চাকমার সন্ধানের জন্য মানবধিকার সংগঠন, মিডিয়া ও গণতান্ত্রিক শক্তির সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন’।

সংবাদ সম্মেলনে মাইকেল চাকমার সন্ধান দাবি করে সরকারের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্ব সরকার ও রাষ্ট্রের। কাজেই মাইকেল চাকমাকে সন্ধান দেয়াও সরকার-রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যদি সরকার তথা রাষ্ট্র মাইকেল চাকমাকে সন্ধান দিতে ব্যর্থ হয় এবং মাইকেল চাকমার যদি কোন কিছু হয়, তাহলে এর সকল দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে’।

সংবাদ সম্মেলন থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. অবিলম্বে মাইকেল চাকমার সন্ধান দিতে হবে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে; ২. রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় খুন-গুম-অপহরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে; ৩. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মুক্তমত চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং ৪. পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় ধরপাকড়-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা ও মাইকেল চাকমার বড় বোন সুভদ্রা চাকমা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শ্রমজীবী ফ্রন্টের সহসাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন