parbattanews

ইস্তাম্বুলে বিস্ফোরণের জবাবে সিরিয়া-ইরাকে বিমান হামলা তুরস্কের

ইরাকে ও সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। শনিবার সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল ও ইরাকের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় তুর্কি সামরিক বিমানগুলো। মূলত সপ্তাহখানেক আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে একটি বিস্ফোরণের জবাবে পাল্টা এই হামলা চালানো হলো। ইস্তাম্বুলের সেই হামলায় ছয়জন নিহত এবং ৮০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, ইস্তাম্বুলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতরা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ও ইরাকের ওই লক্ষ্যবস্তুগুলো ব্যবহার করত। তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার ভোরে সামরিক বিমানের রাত্রিকালীন অপারেশনে উড্ডয়নের ছবি-সহ টুইট করে বলেছে, ‘হিসেবের সময় এসে গেছে’। এতে আরও বলা হয়েছে, যেসব বিশ্বাসঘাতক হামলা করেছে তাদের জবাবদিহি করা হবে। আল-জাজিরা বলছে, আঙ্কারা গত ১৩ নভেম্বর ইস্তাম্বুলে বোমা হামলার জন্য নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে) এবং সহযোগী সিরিয়ান কুর্দি গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। তবে কুর্দি যোদ্ধারা বোমা বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

এদিকে রোববার ভোরের ওই টুইটের পর পৃথক আরেকটি টুইট করে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। একটি ভিডিওসহ পোস্ট করা ওই টুইটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সন্ত্রাসীদের হটবেড’ ধ্বংস করতে ‘নির্ভুল হামলা’ করছে বিমান বাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ভূত আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পেন্স কিলিক বিমান অভিযানটি ইরাক এবং সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে পরিচালিত হয়েছে। এসব লক্ষ্যবস্তু সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আমাদের দেশে হামলার ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।’ তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-কে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করে।

তবে সিরিয়ায় আইএসআইএল (আইএসআইএস) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ওয়াশিংটনের সাথে জোটবদ্ধ সিরিয়ার কুর্দি গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে আসছে ওয়াশিংটন। অপর দিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগানকে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কাতারের রাজধানী দোহায় গেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। রোববার এমন তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ। দোহার আল বাইত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে পর্দা ওঠবে ২০২২ বিশ্বকাপের। এ অনুষ্ঠান উপভোগে বিশ্ব নেতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কাতারের আমন্ত্রণে এর আগে শনিবার দেশটিতে পৌঁছান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এছাড়া মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাতাহ আল সিসি, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এবং ইকুয়েডরের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলফ্রেদো বোরেরো কাতারে পৌঁছেছেন।

এদিকে তুরস্ক ও এবং কাতারের মধ্যে সম্পর্কটা আলাদা। বিশেষ করে ২০১৭ সালের পর এ দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। ওই বছর কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ। তারা কাতারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। এমন সময় কাতারের পাশে দাঁড়ায় তুরস্ক। এরপর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও কাতারের আমিরের মধ্যে আলাদা সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সাপ্রতিক বছরগুলোতে কাতার ও তুরস্ক নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করেছে। ২০২১ সালে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হয় তুর্কি-কাতার স্ট্র্যাটেজিক কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে ঐকমত্যে পৌঁছায় তারা। আল-জাজিরা, ডেইলি সাবাহ।

Exit mobile version