ইয়াবা চোরাচালানের নতুন রোড বান্দরবান সীমান্তের ১০টি পয়েন্ট

fec-image

উপজেলার ১০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। স্থানীয়দের মতে, টেকনাফের মতো এখানে নেই যত্রতত্র অভিযান, টহল, তল্লাসী, ধরপাকড়। আর এই সুযোগে সীমান্তের ঘুমধুম, বাইশফাঁড়ি, রেজু আমতলী, সোনাইছড়ি, নিকুছড়ি, চাকঢালা, আশারতলী, চেরারকুল, কম্বনিয়া ও ফুলতলী পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসে।

ইয়াবা পাচারের নতুন রুট হয়ে উঠেছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত। এ উপজেলার অন্তত ১০টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে থেকে আসছে মরণ নেশা ইয়াবা। তারপর সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে। এই অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ১০টি সিন্ডিকেটের শতাধিক মাদককারবারী।

বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের বাণিজ্য কেন্দ্র টেকনাফ ইতিপূর্বে ইয়াবার স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাড়াশি অভিযানের কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা রুট পরিবর্তন করেছে। এখন অনেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তকে মাদক পাচারের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করছে।

এই উপজেলার ১০টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা আসছে বাংলাদেশে। স্থানীয়দের মতে, টেকনাফের মতো এখানে নেই যত্রতত্র অভিযান, টহল, তল্লাসী, ধরপাকড়। আর এই সুযোগে সীমান্তের ঘুমধুম, বাইশফাঁড়ি, রেজু আমতলী, সোনাইছড়ি, নিকুছড়ি, চাকঢালা, আশারতলী, চেরারকুল, কম্বনিয়া ও ফুলতলী পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসে।

স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা যায়, ইয়াবার চালান মিয়ানমার থেকে আনার পর সীমান্ত ঘেঁষা এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়ি ও জঙ্গলে মজুদ করা হয়। পরবর্তী মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস, চাঁদের গাড়ি, রিক্সা এমনকি কাঠ বোঝাই ট্রাকে যাত্রী ও কর্মজীবী সেজে এসব ইয়াবা পাচার হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল ও সড়ক পরিবর্তন করে থাকে। যেমন-চাকঢালা, আশারতলী, কম্বনিয়া, চেরারকুল সীমান্ত থেকে আসা ইয়াবা নাইক্ষ্যংছড়ির কলেজ রোড, রেস্ট হাউজ রোড, সোনাইছড়ি রোড, রূপনগর রোড ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে রামু উপজেলার মৌলভীরকাটা, কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ও শাহ সুজা সড়ক হয়ে পাচার হয়। সীমান্তের নিকুছড়ি থেকে আসা ইয়াবা আমতলীমাঠ, চাকঢালাসহ সোনাইছড়ি-ভগবান টিলা ও মরিচ্যা হয়ে পাচার হয়। রেজু আমতলী পয়েন্ট হয়ে আসা ইয়াবা ঘুমধুম-উখিয়া-সোনাইছড়ি নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে পাচার হয়।

এই ক্ষেত্রে ঘুমধুম কাস্টম, বৈদ্যছড়া বাজার, গর্জনবনিয়া, সোনাইছড়ি হেডম্যানপাড়া, লামারপাড়া, চাকঢালা বাজার, আশারতলী ব্রিজ, আমতলীমাঠ, নাইক্ষ্যংছড়ি থানা মোড়, উপজেলা পরিষদ চত্বর, সোনাইছড়ি বটতলী, নাইক্ষ্যংছড়ি মসজিদঘোনা, বিছামারা, রূপনগর, জারুলিয়াছিড়, কচ্ছপিয়ার তুলাতলী স্টিল ব্রিজ, সিকদারপাড়া-শাহসুজা সড়ক, মৌলভীরকাটা, তিতারপাড়া, রামুর বাইপাস, রাবার বাগান এলাকা থেকে ইয়াবার চালান হাতবদল হয়।

মাদককারবারীরা পরিবহনযোগে ইয়াবা পাচারের সময় একাধিক মোটরসাইকেল, সিএনজি, চেকপোস্টের কর্মচারী ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সোর্সের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করে থাকে। ফলে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও টহলের আগাম তথ্য পেয়ে যায় মাদককারবারীরা। মাদক কারবারীরা কৌশল পরিবর্তন করে নাইক্ষ্যংছড়ি পার হয়ে গেলেও অনেক সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে আটক হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির বহু ইয়াবার চালান।

বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়িতে ইয়াবা ব্যবসার সাথে কথিত জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার, ইলেক্সট্রিক্স ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, কাঠ ব্যবসায়ী, ইজারাদার, ফার্মেসী ব্যবসায়ী, মোটরসাইকেল চালক, বাগান মালিক, মোবাইল দোকানদার, চাকুরিজীবী, ঔষধ কোম্পানীর এমআরসহ বিভিন্ন পেশার অন্তত শতাধিক ইয়াবা পাচারকারী সক্রিয় রয়েছে। যারা নিজেদের পূর্বেকার পেশাকে পুঁজি করে বর্তমানে মরণ নেশা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। তারা এলাকায় কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ঠিকাদার, আবার কেউ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে মাদক ব্যবসা করে অবৈধ টাকা মজুদসহ ঘরবাড়ি ও ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবর্তন করেছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্বত্যনিউজকে জানান, রাস্তার ধারে বসে দৈনিক ৫০-১০০ টাকা আয় করা ছেলে লক্ষ-কোটি টাকার মালিক। অন্যের প্রতিষ্ঠানে সামন্য বেতনে চাকরী করা যুবক আলিশান গাড়ি-বাড়ির মালিক। টেক্সী চালিয়ে কিংবা ক্ষুদ্র দোকান করে কিভাবে কোটিপতি বনে? এভাবে নাইক্ষ্যংছড়ির অসংখ্য মানুষ রাতারাতি পরিবর্তন হয়েছে। অবৈধ মাদক ব্যবসা ছাড়া এই পরিবর্তন মুঠেও সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশাসন তাদের বিষয়ে কখনো খোঁজ নিয়েছে বলে মনে হয় না।

সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ‘বক্তব্য দিয়ে কি হবে’। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনীতির আশ্রয়ে থেকে ইয়াবা ব্যবসা করছে অনেকে। এসব মাদককারবারীরা চিহ্নিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন রকম এ্যাকশন হচ্ছে না।

অন্যদিকে সোনাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান এ্যানিং মারমা বলেন, সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে আনার পর তাঁর ইউনিয়নে মাদক ব্যবসা হয় সত্য। এসব মাদককারবারীদের বিষয়ে প্রশাসনকে তথ্য সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু মাদক ব্যবসা কমছে না। আগামী প্রজম্মকে বাঁচাতে হলে মাদক নির্মূল করতে হবে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার জেরিন আকতার বলেন, সীমান্ত দূর্গম এলাকা হওয়ায় অপরাধীরা পাহাড়ের একটা সুবিধা নিতে চায়। এই ক্ষেত্রে তাদেরকে অনুসরণ করা, ধাওয়া করা আইন শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই কারণে সীমান্ত পয়েন্ট তারা অপরাধের জন্য বেছে নিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি-ঘুমধুম সীমান্তে পুলিশের প্রচুর অভিযানের ফলে তারা তেমন সুবিধা নিতে পারছে না আগের মতো। তবে ইয়াবা পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন