parbattanews

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, সৈকতের ৩ কিলোমিটার জুড়ে জনসমুদ্র

ঈদের সাথে যুক্ত হল পহেলা বৈশাখের ছুটি। টানা ছুটিতে ঈদ আনন্দে ভাসছে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সকাল থেকে সৈকতজুড়ে নেমেছে লাখো পর্যটকের ঢল। ঈদের পাশাপাশি পহেলা বৈশাখের ছুটি যোগ হওয়ায় আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকের আনাগোনায় মুখর সৈকতের শহর কক্সবাজার। হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের তৃতীয় দিনে সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। এতে অন্তত সোয়া লাখের বেশী পর্যটক সমাগম ঘটেছে। এ নিয়ে দারুণ খুশি তারা। এদিকে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগত পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও নিরাপত্তায় সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঈদের প্রথমদিন পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও দ্বিতীয় দিন থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে। ঈদের ছুটিতে কেউ এসেছেন পরিবারের সাথে, কেউ স্বজন ও বন্ধুদের সাথে ছুটে এসেছেন সমুদ্রজলের নীলদিগন্ত ছুঁয়ে দেখতে। আগত পর্যটকদের অনেকে লোনাজলে দাপাদাপির পাশাপাশি কেউ কেউ ঘোড়া, জেটস্কি ও বিচ বাইকে চড়ে বিনোদনে মেতেছেন। আবার কেউ কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছেন ছবি। আর পর্যটকদের পাশাপাশি ঈদ উৎসব উদযাপনে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় দর্শনার্থীরাও। এতে সৈকতের কবিতা চত্তর থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।

বেড়াতে আসা পর্যটকরা বলছেন, যান্ত্রিক জীবনের একগেঁয়েমি কাটানো এবং ঈদের আনন্দ একটু ভিন্নভাবে উপভোগে তারা সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য্যের টানে কক্সবাজার ছুটে এসেছেন।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক রেজাউল চৌধুরী জানান, ‘কক্সবাজার মানেই বাড়তি আনন্দ। যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি নিয়ে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভাল লাগছে। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য এই ভ্রমণ খুবই আনন্দের। তবে অন্য সময়ের তুলনায় রুমের ভাড়া একটি বেশি রাখা হচ্ছে। যদিও এই রুম পেতে’ই অনেক কষ্ট হয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট আরেক পর্যটক রবিউল হাসান জানান, ‘অনেককে বলতে শুনেছি কক্সবাজারে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। বিষয়টি সঠিক নয়। আমি এই নিয়ে ১০-১২ বার এই শহরে বেড়াতে এসেছি। আমার কাছে একবারের জন্যও তা মনে হয়নি। বরং দিন দিন বাড়ছে নিরাপত্তা। তবে হঠাৎ এক-দুইটা বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যটন নগরী নিয়ে এমন মন্তব্য কোনভাবেই কাম্য নয়। সব মিলে ভ্রমনটা অসাধারণ লাগছে।

সিলেট থেকে বেড়াতে আসা মাইমুনা আক্তার নামে এক পর্যটক জানান, ‘ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার সবসময় টানে। কিন্তু এই যান্ত্রিক জীবনে সহজে ছুটি মিলেনা। এবারে একদিকে ঈদের ছুটি অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের ছুটি। এই লম্বা ছুটিতে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভাল লাগছে।’

কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের নেতা আব্দুর রহমান জানান, রমজানের পুরো এক মাসের খরা কাটিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটায় খুশি হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা। যেহেতু টানা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের একটু বাড়তি চাপ থাকে, সেই ক্ষেত্রে হোটেল কক্ষের বুকিং সহ দুর্ভোগ ও হয়রানি লাগবে আগাম তথ্য জেনে ভ্রমণে আসা উচিৎ।

বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা।

এ নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা জানান, আগত কোন পর্যটক যাতে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার না হন এ জন্য প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনী সবধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। আর টানা ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

বেড়াতে আসা পর্যটকরা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি ঝর্ণা, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহার, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত এবং শহরের বার্মিজ মার্কেটসহ জেলা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ভ্রমণ করে আনন্দ উপভোগ করছেন।

Exit mobile version