উখিয়ায় ইমন হত্যাকাণ্ড: বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
উখিয়ার ভালুকিয়াপালংয়ের ইমন বড়ুয়া (৩৫) হত্যাকান্ডের ঘটনা ও কারা জড়িত ছিলেন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।
পুলিশের হাতে আটক ড্রাইভার প্রদীপ কুমার বড়ুয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারা মতে জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা ও কে কে জড়িত ছিল তাদের নাম ঠিকানা বলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় খোদ স্বাক্ষীরাও মামলায় আসামী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে ইমন হত্যাকান্ড মামলায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে সাবেক চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া, তার সহোদর বাবুল বড়ুয়া ও প্রদীপ বড়ুয়া শিবুকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা আসামী করার ঘটনা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাবেক চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া, বাবুল বড়ুয়া ও প্রদীপ বড়ুয়া শিবুর নাম বলেনি।
সাবেক চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া দাবি করে আসছিলেন রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন এবং স্থানীয় নির্বাচনের জের ধরে আক্রোশমূলক প্রতিপক্ষগং আমাকে সহ আমার অপরাপর ভাইকে জড়িয়ে ইমন হত্যা মামলায় মিথ্যা আসামী করেছে। আমরা উল্লেখিত সময়ে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলাম। কোন ভাবেই এই ঘটনায় বিন্দুমাত্র জড়িত ছিলাম না।
জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু মৌজার মনজয় পাড়া গ্রামে গত ২৪ এপ্রিল এক হামলার ঘটনায় ইমন বড়ুয়া নিহত হন। তিনি উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পুতুল রাণি বড়ুয়ার ছেলে। গত ২৫ এপ্রিল এই ঘটনায় বোন তান্নি বড়ুয়া বাদি হয়ে ৭ জনকে আসামী করে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন।
যার মামলা নং- ০৯/৩৪ ধারা ৩০২/৩৪ দ:বি। এতে বিবাদী করা হয় সাবেক চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া তার সহোদর সমিরন বড়ুয়া, বাবুল বড়ুয়া ও প্রদীপ বড়ুয়া, হলদিয়াপালং খেওয়াছড়ি গ্রামের মোহাম্মদ করিম জালিয়াপালং পাইন্যাশিয়া গ্রামের শাহজাহান ও রুপন বড়ুয়া।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় ১নং বিবাদীর দীপক চেয়ারম্যান কিরিস দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ইমন বড়ুয়াকে মাথায় আঘাত করে এবং অপরাপর ভাই ও বিবাদীগণ লোহার রড এবং দা দিয়ে আঘাত করায় ইমন বড়ুয়া মারা যায়।
ঘটনাস্থলের কয়েকজন প্রতেক্ষ্যদর্শী ও গগন বালা বড়ুয়া জানান, ঘটনার সময় সাবেক চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া ও তার সহোদর বাবুল ও শিবু উপস্থিত ছিল না এবং তাদেরকে কেউ দেখেনি। ঘটনায় জড়িত না থাকার পরেও কিভাবে কিরিস দিয়ে তারা ইমনকে আঘাত করে হত্যাকান্ডে অংশ নেন তা কিছুতে মানতে পারছে না সচেতন নাগরিক সমাজ।
গ্রামবাসীরা জানায়, ইমন বড়ুয়া মাদকসাক্ত যুবক। ঘটনার আগের দিন ২৩ এপ্রিল উখিয়ার ভালুকিয়া পালং থেকে তিনি ঘুমধুমের মনজয় পাড়া গ্রামে অবস্থান করেন। অনেকের ভাষ্যমতে পরের দিন ২৪ এপ্রিল সকালে মাতালবস্থায় দীপক চেয়ারম্যানের স’মিলে ঢুকে ভাংচুর করাসহ তান্ডব চালায়। এক পর্যায়ে উশৃংখল অবস্থায় লম্বা দা নিয়ে কেয়ারটেকারকে মারধর করে। খবর পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যানের ছোট ভাই সমিরণ বড়ুয়াসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে যান। হামলার এক পর্যায়ে গুরুতর আহত হন ইমন বড়ুয়া। চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।
সূত্রে জানা গেছে, ঘুমধুম পুলিশের হাতে আটক মৃত বিধু বড়ুয়ার ছেলে ড্রাইভার প্রদীপ বড়ুয়া গত ২৮ এপ্রিল বান্দরবান আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি প্রদান করেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসানের নিকট ইমন হত্যাকান্ডের তিনি সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আরও বলেন, সমিরণ বড়ুয়া, জাফর ও ড্রাইভার শাহজাহানসহ অংশ নেন।
তিনি বলেন, ইমন বড়ুয়া লম্বা দা হাতে নিয়ে সমিরণ বড়ুয়াকে মাথায় আঘাত করতে এসে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়।
স্বাক্ষী প্রবাল বড়ুয়া জানান, প্রকৃত আসামীদের শাস্তি হউক। কিন্তু দীপক চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামী করার বিষয়টি তিনি অবগত নয়। কারণ তারা জড়িত আছে মর্মে কারও কাছ থেকে শুনেনি।
ঘুমধুম ইউনিয়নের গ্রাম চৌকিদার ছৈয়দ আলম, ইমন হত্যাকান্ডে প্রকৃত দোষীদের বিচার দাবি করে বলেন, যারা জড়িত নাই এমন সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে আসামী করা দু:খজনক।
নাগরিক সমাজের মতে সরজমিনে অধিকতর তদন্তপূর্বক ঘটনায় জড়িতদেরকে আসামী করা এবং নিরাপরাধ ব্যক্তিদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।