উখিয়ায় ছেলেকে নির্যাতনের দৃশ্য দেখে মায়ের মৃত্যু, এলাকায় থমথমে অবস্থা
উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নান্নুর বাড়িতে রাম দা, কিরিচ ও লাটিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে এলাকার কতিপয় সন্ত্রাসীরা। এসময় ছেলেকে নির্যাতনের দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান মা। এতে আরো ৪ জন আহত হয়েছে।
শুক্রবার (৩ এপ্রিল) এ ঘটনাটি ঘটলে এখনও উখিয়ার সর্বত্রে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ সোনাইছড়ি মাঠে ক্রিকেট খেলা নিয়ে সাবেক ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি নুরুল আবছার নান্নুর সাথে সাইফুদ্দিন ও শাহীন সরওয়ারের মাঝে ঘটনা হয়।
এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। উখিয়া থানায় এজাহার দায়ের করে উভয় পক্ষ। অজ্ঞাত কারণে নান্নুর মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি।
মামলার জের ধরে শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে আসামি আটকের নামে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি নুরুল আবছার নান্নুর বাড়িতে ধারালো রাম দা, কিরিচ ও লাটিসোটা নিয়ে হামলা চালায় সাইফুদ্দিন ও শাহীন সরওয়ারের নেতৃত্বে ২০/৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ।
এসময় তারা ঘরের ভেতর গিয়ে তাণ্ডব চালায় এবং মারধর করে নান্নু এবং তার বড়ভাই আহামদ শরীফ (৩০) কে। বাধা দিতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের লাটির আঘাতে গুরুতর আহত হন নান্নুর পিতা আলী হোসেন।
এসব দৃশ্য দেখে মা নুর নাহার হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনার পর দ্বিতীয় দফায় আবারো হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলায় সানা উল্লাহসহ ৩জন আহত হয়।
হামলায় আহত সানা উল্লাহ জানান, সাইফুদ্দিন ও শাহীন সরোয়ারের নেতৃত্বে তাদের সন্ত্রাসীরা আমি, আমার দু,ভাই মোহাম্মদ উল্লাহ (৩৬) ও কক্সবাজার জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোছাইন (৫০) কে উপর্যপুরী হামলা চালিয়েছে।
আমার দু,ভাইকে গুরুতর আহত অবস্থায় উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ উল্লাহর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,মোহাম্মদ উল্লাহর অবস্থা আশংকাজনক।
এদিকে বর্বরোচিত এই হামলার ঘটনার ব্যাপার জালিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রাসেল বলেন,নান্নুর বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা দুঃখজনক, পুলিশের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বাধা দিলে মৃত্যু ও আহতের ঘটনা এড়ানো যেত। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মুজিবুল হক আজাদ বলেন, এ জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা ইতোপূর্বের একটি ঘটনার জের। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিলাম।
তিনি আরো বলেন, আমি শুক্রবার বেলা ৩ টায় ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য একটি স্টাটাস ও দিয়েছিলাম। কিন্ত তারা আমার কথা শুনেননি, স্টাটাস দেওয়ার দু‘ঘণ্টা পর পরিকল্পিতভাবে নান্নুর বাড়িতে হামলা চালায়।
আমরা উখিয়া উপজেলা যুবলীগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও এ হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবি করছি।
এ হামলার বিষয়ে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মকবুল হোসেন মিথুন বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে জানতে ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিদ্বার্থ সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা আসামি গ্রেফতার করার জন্য ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পর নান্নুর বাড়িতে হামলা করেছে বাদী পক্ষ, এরকম শুনেছি ।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরে শুনলাম আসামি নান্নুর মা মারা গেছে। ব্যাপারটি আমি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ ঘটনায় নতুন করে মামলা হয়েছে কি না জানার জন্য শনিবার সকালে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় ইনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ এবং উখিয়া থানার ওসির নিকট থেকে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।