parbattanews

উখিয়ায় টানা প্রবল বর্ষণে বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কালভার্ট, ব্রিজ, সেতু ও ড্রেনের মুখ বন্ধ করে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করায় প্রবল বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় তাদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ও ফসলহানি ঘটছে। পাশাপাশি টানা বর্ষণে সড়ক উপসড়ক লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। পানি নিষ্কাশনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, এলজিইডি, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও এনজিও বিভিন্ন এলাকায় জনগুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে কালভার্ট, ব্রিজ, সেতু নির্মাণ করেছে। অনেকে এসবের মুখ বন্ধ করে দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে বসতবাড়ি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা; যার কারণে অনেক পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে এবং কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই সব অনিয়ম দেখেও নির্বিকার। এলাকা ঘুরে ও অভিযোগে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলায় শতাধিক ব্রিজ, কালভার্ট, সেতু ও ড্রেনের মুখবন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

রবিবার সরজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের ফলিয়াপাড়া সড়ক হয়ে মধুরছড়া ক্যাম্পে যাতায়াত করে এনজিও সংস্থা, মালবাহী, বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে, এই সড়কে রয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর বাড়ি। এই সড়কে দিয়ে যেতে হয় এলাকার হাজার হাজার মানুষকে। প্রবল বর্ষণে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তার একপাশ সংস্থার না করা হলে যেকোন সময় পুরো সড়ক খালের পানিতে ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজাপালং ইউনিয়নের সিকদার বিল মৌলভী পাড়া এলাকায় নাম মাত্র এসব ব্রীজের মুখে পানি নিষ্কাশনের জায়গা রেখে বাকীটা দখলে নিয়েছে স্থানীয় আব্দু শুক্কুর। যার কারণে ওই এলাকার গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। ব্রিজটির মুখবন্ধ হওয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। যাতায়াত রাস্তার ব্রিকগুলো পানি উঠে ফসল জমিতে নিয়ে গেছ।

রাজাপালং ইউনিয়নের সিকদার বিল গ্রামের একাধিক কৃষক জানান, আষাঢ় মাসে আমন ধান রোপন করেছি সে ধান পানিতে ডুবে আছে আজ ১৫ দিন ধরে। আগে যদি পানি চলাচলের মাধ্যমগুলো ভরাট করা না হতো তাহলে আজ এ অবস্থায় পড়তে হতো না। তবে অনেকে এটাকে কপালের লিখন বলে আখ্যায়িত করেন বলেন, কি আর করার!

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, বিষয়টি নিয়ে ব্রিজের মুখের জমির মালিক আব্দু শুক্কুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে বারণ করার পরও ঘর নির্মাণ করছেন। এই বসতবাড়ি নির্মাণ করার কারণে প্রায় আট গ্রামের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এই আমন ধান মৌসুমে কৃষকের মথায় হাত দিতে হয়েছে।

পালংখালী ইউনিয়ন এবং হলদিয়াপালং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিলের পানি নিষ্কাশনের নালা বন্ধ করে দিয়েছেন কয়েক প্রভাবশালী ব্যক্তি। যার কারণে ওই বিলের প্রায় এক হাজার বিঘা জমির ফসল প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে। জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, আমার ইউনিয়নে অপরিকল্পিত ভাবে বসতবাড়ি নির্মাণ করায় বৃষ্টি ও উজানের পানি নিষ্কাশনের জায়গা সংকুলন না হওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সেই সাথে ফসল জমি পানির নিচে ডুবে আছে গত দশদিন ধরে। কোন কোন রাস্তায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগনের। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে। উপজেলা কৃষি অফিসার প্রসেনজিৎ তালুকদার জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে এ অবস্থায় কৃষকদের পড়তে হতো না।

তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নালার মুখ খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তা আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন আহমেদ জানান, অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ করায় উপজেলার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যা নিরসনে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Exit mobile version