parbattanews

উখিয়ায় বালু ও মাটি পাচার: ঝুঁকিতে খাল পাড়ের শতাধিক জনবসতি

নদী বা খালের বুকে নির্দিষ্ট বালুমহাল থেকেই তোলা যায় বালি। বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রশাসনের হাতে। কিন্তু উখিয়ার কোথাও সরকারি আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই যেখান সেখান থেকে তুলে পাচার হচ্ছে বালি ও মাটি। এতে খালের পাড়ের জনবসতিগুলো সহায় সম্পদসহ অস্তিত্ব হারানোর মত চরম ঝুঁকিতে জীবন কাটাচ্ছে।

আইনানুসারে সরকারীভাবে ইজারাকৃত নির্দিষ্ট মহাল থেকে বালি উত্তোলন করা যায়। কিন্তু ইজারাদার, প্রভাবশালী সিন্ডিকেট আইনের তোয়াক্কা না করে নির্দিষ্ট মহালের বাইরেও বিস্তৃত অনেক স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু ও পলি মাটি উত্তোলন করে প্রকাশ্যে পাচার করে চলেছে। ফলে পুরো উখিয়া জুড়ে খাল, বিল ও পাহাড় ভাঙন তীব্রতর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ক্ষমতাধর একশ্রেণির বালি ও মাটি খেকো সিন্ডিকেট করে বেপরোয়াভাবে বালি ও মাটি পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, বর্ষাকালে নদী বা খালে ধূয়ে এসে স্তুপীকৃত ভূ উপরিস্থ বালি বা মাটি উত্তোলনের জন্য নির্দিষ্ট মহাল একসনা ইজারা প্রদান করা হয়।সেক্ষেত্রে জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, জলবায়ু,পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন নির্দিষ্ট মহাল ইজারা প্রদান করে থাকে।

শর্ত রয়েছে, নির্দিষ্ট মহালে বর্ষাকালে ভেসে আসা ও স্তুপাকৃত বালি কোদাল ও ঝুড়ি দিয়ে কুড়িয়ে মজুদ করা যাবে। কোনভাবে যান্ত্রিক মেশিনের সাহায্যে বালি আহরণ করা যাবে না। এছাড়াও খাল, বিল, জনবসতি, রাস্তাঘাটের ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় এমন কোন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট তৈরি করা যাবে না।

কিন্তু উখিয়ায় বালি ও মাটি পাচারকারী সিন্ডিকেট গুলো এসব সরকারি কেতাবি বিধি নিষেধ ও আইনের কোন ধারই ধারছে না। সরজমিন দেখা যায়, উখিয়ায় প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত রাজাপালং ইউনিয়নের রেজুখালের হিজলিয়া এলাকা থেকে বালি ও মাটি পাচার চলছে দেদারসে। সরকারি বিধি নিষেধের কোনরূপ তোয়াক্কা না করেই খালের মধ্যে ডাম্প ট্রাক দিয়ে প্রকাশ্যে খাল খুঁড়ে পলিমাটি ও বালি উত্তোলন করে পাচার করছে।

রেজুখালের হিজলিয়া অংশে বালি ও পলিমাটি খুঁড়ে পাচার কাজের ইজারাদার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ক্লাস পাড়ার মনির আহামদ বলেন, কক্সবাজার ডিসি থেকে ইজারা নিয়েছি, তাতে একবছর ধরে মেশিন না গাড়ি নিয়ে তুলবো।

খাল খুঁড়ে বালি ও পলিমাটি পাচারকারী প্রভাবশালীদের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হিজলিয়া খাল পাড়ের বাসিন্দারা এনিয়ে চরম ক্ষোভ জানান। তারা জানান, গত কয়েকবছর ধরে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল ও স্রোতের কারণে খালের হিজলিয়া অংশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে খালপাড় সংলগ্ন জন চলাচলের রাস্তাসহ গ্রামবাসীদের বেশকিছু জমিজমা, গাছপালা খালে বিলিন হয়ে পড়ে।

ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সহায় সম্পদ রক্ষার্থে উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় জিওট্যাকস দিয়ে ভাঙ্গন থেকে জনবসতি রক্ষা করেন। তাদের ক্ষোভ যেভাবে খালে গাড়ি নামিয়ে খুঁড়ে বালি ও পলিমাটি পাচার চলছে তাতে সামনের বর্ষাতে আবারও খাল ভেঙ্গে ¯স্থানীয় জনবসতির চরম ঝুঁকি ও ক্ষতি হবে।বাঁধ এলাকা থেকে অবাধে বালু ও পলি কেটে তোলার ফলে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে বাঁধের নিরাপত্তা নিয়ে। এলাকার পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী লোকজন।

উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিমুল এহসান খান বলেন, ইজারাদারের সাথে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী কঠোরভাবে প্রতিপালনের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু চোরে কি আর কেতাবি কথা শোনে! সরকারি নির্দিষ্ট মহাল ও এর বাইরে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে উখিয়ার সর্বত্র হতে খাল, ছড়া, বিল, পাহাড়, টিলা সাবাড় করে বালু, মাটি ও পলিমাটি পাচারযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি তেমন কার্যকর না হওয়ায় খাল পাড়ের মানুষ ঘর-বাড়ি, জমি হারিয়ে নিঃস্বের মুখে পড়েছে উখিয়ার হিজলিয়াসহ বিভিন্ন ¯হানের মানুষ। সেখানে রক্ষা বাঁধের কাছ থেকে অবাধে বালু ও পলিমাটি কেটে উজাড় করছে বালুদস্যুরা। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

Exit mobile version