parbattanews

উখিয়ায় মা-ছেলেসহ একই পরিবারের ৪ জনকে গলাকেটে হত্যা

সকালে ঘরের ভিতর থেকে ৪টি লাশ উদ্ধার করে উখিয়া থানা পুলিশ

আপডেট

উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্বরত্না গ্রামে এক প্রবাসীর বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তানসহ একই পরিবারের ৪ জনকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতদের মধ্যে ১ ছেলে, ১ মেয়ে শিশু ও ২জন নারী। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে যেকোন সময় এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।

নিহতরা হলেন, ওই এলাকার মৃত প্রবীণ বড়ুয়ার স্ত্রী সখি বড়ুয়া (৬২), তার ছেলে কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৩), ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও শিবু বড়ুয়ার মেয়ে সনি বড়ুয়া (৬)। তাদের প্রত্যেককে ওই বাড়িতে গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোকেনদের চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই রবিসন বড়ুয়ার ইঞ্জিন ওয়ার্কশপের দোকান আছে। মেজ ভাই দীপু বড়ুয়া এক সময় স্থানীয় কোটবাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। তবে বছর দেড়েক ধরে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামে। সেজ ভাই শিপু বড়ুয়া কোটবাজারে একটি ফার্নিচারের দোকান চালান।

আর সবার ছোট রোকেন গত দশ বছর ধরে কুয়েতে থাকেন। মাস ছয়েক আগে দেশে এসে বেশ কিছুদিন থেকে গতমাসে আবার কুয়েতে ফিরে যান। পূর্বরত্নাপালংয়ে তার বাড়ির পাশেই আলাদা দুটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন তার দুই ভাই দীপু ও শিপু।

শিপু বড়ুয়ার স্ত্রী মিনু বড়ুয়া বলেন, তার মেয়ে সনি মাঝে মধ্যেই রোকেনের বাড়িতে দাদীর সঙ্গে থাকত। বুধবার রাতেও সে ওই বাড়িতে ছিল।

“মিলা সন্ধ্যার দিকে কোটবাজার স্টেশনে গিয়েছিল ঘরের বাজার করতে। সাড়ে ৭টার দিকে ও বাসায় চলে আসে। রাতে খেয়ে চারজন ঘুমিয়ে পড়েছিল বলেই আমরা জানি। আর কেউ ওই বাসায় থাকে না।”

দিপালী বড়ুয়াথর জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফ্রীজে রাখা মাছ আনতে গিয়ে কারো কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে নিহত সখি বড়ুয়াথর ছেলে শিপু বড়ুয়াথর স্ত্রীকে বিষয়টি জানালে সে কেন জানি বিষয়টি এড়িয়ে যায়। পরে রবিসন বড়ুয়াসহ জানালা দিয়ে দেখি সখি বড়ুয়াথর নিথর দেহ পড়ে আছে।

স্থানীয়রা আরো জানিয়েছেন, কিছুদিন পূর্বে গাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে শিপু বড়ুয়াথর পরিবারের সাথে তার মায়ের বাকবিতন্ডা হয়। ওই সময় গাছ কাটার লোকজনের গতিবিধিও সন্দেহজনক ছিল বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নিহত সখি বড়ুয়ার মেয়ে বেণু বড়ুয়া জানান, গতরাত ১০টার দিকেও নিহত মিলি বড়ুয়াথর সাথে ফোনে কথা হয় জানান।

রত্নাপালং ইউনিয়নের খাইরুল আলম চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট টীম তদন্ত করছে। এখনো কোন ক্লু পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, পারিবারিক কলহ, জমি সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা আভ্যন্তরীণ কোন দ্বন্ধ থেকে এ ঘটনা হতে পারে। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। তবে কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তা এখনো জানা যায়নি।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিকারুজ্জামান চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উখিয়া সার্কেল নিহাদ আদনান তাইয়ান, গোয়েন্দা সংস্থা, পিবিআই এবং সিআইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আমরা এখন ঘটনাস্থলে আছি। চারজনকেই গলাকেটে হত্যা করা হয়েছে। তবে কীভাবে, কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা কিছুই বলা যাচ্ছে না।তিনি বলেন, যে বাড়িতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, বাড়িটি পাকা বিল্ডিং। ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা আগে থেকে ঘরের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে ছিল। অথবা বাড়ির ছাদের ওপরের দরজা দিয়ে ঢুকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলে সিআইডি উচ্চ পর্যায়ের টিম বিভিন্ন আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘাতককে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।

এ হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সম্পৃক্ততা বা সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয় আছে কি-না জানতে চাইলে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে এ ধরনের কোনো বিষয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। এছাড়া ঘটনাস্থল রোহিঙ্গা শিবির থেকে অনেক দূরে। ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোনো বিষয়ও জড়িত বলে মনে হচ্ছে না। তবে এটা বলা যায়, ঘটনাটি অবশ্যই পূর্বপরিকল্পিত। একইসঙ্গে ওই পরিবারের জানাশোনা লোকজন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

তিনি বলেন, ঘটনার আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, বাড়িটি ছাদ দেওয়া পাকা বিল্ডিংয়ের। বাইরে থেকে লোহার গ্রিলে তালা লাগানো। দরজাও বন্ধ অবস্থায় ছিল। এ অবস্থায় ঘরের ভেতরের একটি কক্ষে শাশুড়ি, অন্য কক্ষে বউ এবং আরেকটি কক্ষে দুই শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, ছাদের ওপরের সিঁড়ি বেয়ে দুর্বৃত্তরা ভেতরে প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হয়তো এমনও হতে পারে খুনিদের চিনে ফেলায় তাদের হত্যা করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। আর আইন আইনের গতিতে চলবে। এছাড়াও শোকাহত পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে ভোর সকালে ঘটনাস্থলে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহেরর কাজ শুরু করেন পিবিআই এর ফরেনসিক টিম। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের সাথে যুক্ত হন চট্টগ্রাম থেকে সিআইডি’র ক্রাইম সিন টিম। তারা দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার মর্গে প্রেরণ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার ২ শিশুসহ ৪জনকে।

Exit mobile version