উত্তর কোরিয়ার গোয়েন্দা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ

fec-image

উত্তর কোরিয়ার প্রথম স্পেস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির প্রথম স্পেস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরপরই সাগরে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।

রকেট উৎক্ষেপণের পরপরই জাপানে ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে জানানো হয় যে তাদের ভূখণ্ডে সেটি আঘাত হানার কোনো আশঙ্কা নেই।

এর আগে উত্তর কোরিয়া জানায় যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রমের ওপর নজর রাখতে ১১ জুনের মধ্যে তারা একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে।

উৎক্ষেপণের প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর দেশটি বলছে খুব শিগগিরই তারা দ্বিতীয় উৎক্ষেপণের প্রচেষ্টা চালাবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুকিও কিশিদা বলেছেন, উত্তর কোরিয়া একটি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুঁড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে দেখছে তার সরকার।

তিনি আরো জানান যে- এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে জাপান হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, দেশটির ভূখণ্ডে হুমকিস্বরূপ কিছু এলে সেটাকে গুলি করে ফেলে দেয়া হবে।

স্থানীয় সময় বুধবার সকালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সউলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। সেখানকার মানুষের ঘুম ভেঙেছে বিমান হামলার সাইরেনের শব্দ এবং একটি জরুরি সতর্কবার্তায়, যেখানে তাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাবার জন্য প্রস্তুত হতে বলা হয়েছিল। তবে ২০ মিনিট পরে তাদের জানানো হয় যে ভুল করে সাইরেন বাজানো হয়েছিল ও জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছিল।

কোরীয় উপদ্বীপ- যেখানে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৭০ বছর ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে সেখানে জরুরি অ্যালার্ম ব্যবস্থা বেজে উঠাটা বেশ চিন্তারই বিষয় এবং এ ধরনের ভুল অ্যালার্ম দেশটির সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে যদি এমন কোনো সতর্কতা থাকে তাহলে সেটা গুরুত্বের সাথে দেখা হবে নাকি আরেকটি ভুল বলে বন্ধ করা হবে সেটাই এখন একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, উত্তর কোরিয়া যে রকেট উৎক্ষেপণ করেছে তা মাঝ আকাশেই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এটি উৎক্ষেপণের পরপরই রাডার থেকে হারিয়ে যায়। এ বিষয়ে আরো তদন্ত করা হচ্ছে -এমনটাই বলা হচ্ছে ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে।

উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান রি পিয়ং চোল মঙ্গলবার উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে বলেন যে- যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার ‘বেপরোয়া সামরিক কর্মকাণ্ডের’ জবাবে তারা একটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে।

তিনি অভিযোগ করেন যে দেশগুলো ‘প্রকাশ্যে আগ্রাসনের জন্য বেপরোয়া’ হয়ে গেছে।

বুধবার উৎক্ষেপণের আগে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছিল যে- ব্যালিস্টিক মিসাইল টেকনোলজি ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়া যদি কোনো রকেট উৎক্ষেপণ করে তাহলে তা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাব লঙ্ঘন করবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও চলতি সপ্তাহের শুরুতে উত্তর কোরিয়ার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটা নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের গুরুতর লঙ্ঘন যেখানে বলা হয়েছে, ‘ব্যালিস্টিক মিসাইল টেকনোলজি ব্যবহার করে সমস্ত উৎক্ষেপণ নিষিদ্ধ’।

‘যদি উত্তর কোরিয়া শেষ পর্যন্ত স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সফল হয়, তবে তাকে এর উচ্চমূল্য দিতে হবে’ জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন মনে করেন তার দেশের প্রতিরক্ষায় সামরিক গোয়েন্দা স্যাটেলাইট স্থাপন করা জরুরি।

সিউলের ইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিফ-এরিক ইজলি বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সরকার সম্ভবত নিজেকে স্পেস রেস (মহাকাশ দৌড়ের) মধ্যে দেখছে এবং তার যে স্যাটেলাইট মিশন তা সফল হোক বা না হোক- সেটা রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা হিসেবে কাজ করবে এটা নিশ্চিত’। সূত্র : বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন