parbattanews

উত্তর ধুরুং ইউপি নির্বাচন: বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজদ্দৌল্লাহ নৌকা পেতে মরিয়া

২০১৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজদ্দৌল্লাহ এবার নৌকা পেতে মরিয়া। ঘুম নেই তার। নেতাদের ম্যানেজ করতে মহাব্যস্ত। জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শুরু করেছেন জোর লবিং।

যেভাবেই হোক, নৌকা প্রতীক ভাগিয়ে নিতে নাছড় সিরাজদ্দৌল্লাহ। অথচ তার কারণেই দলের জনপ্রিয় প্রার্থী মো. ইয়াহিয়া খানের ভরাডুবি হয়েছিল। বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে জিতে যায় জামায়াত নেতা আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী। সেই বিদ্রোহী সিরাজদ্দৌল্লাহ আগামী ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কক্সবাজার ছেড়ে তিনি এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় সিরাজদ্দৌল্লাহর নাম নেই। কিন্তু জেলা থেকে কেন্দ্রে পাঠানো ৬ জনের প্যানেলে তার নাম রয়েছে। যে কারণে তৃণমূলে ব্যাপক অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রে পাঠানো তালিকায় সিরাজদ্দৌল্লাহর নাম আছে স্বীকার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি জানান, প্যানেলে নাম থাকলেও ‘গত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু সিরাজদ্দৌল্লাহ নয়, প্যানেলভুক্ত অন্যান্যদের মধ্যে যাদের নামে মামলা কিংবা বিভিন্ন অভিযোগ আছে তাও কেন্দ্রকে অভিহিত করা হয়েছে। এসব বিবেচনা করেই দলীয় মনোনয়নবোর্ড ‘নৌকা প্রতীক’ বরাদ্দ দিবে।

এদিকে, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কিংবা গত নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী কাউকে এবার মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও একই ঘোষণা দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিসহ দলের শীর্ষস্থানীয় প্রায় নেতা। তবে, সেই ঘোষণা আগামী নির্বাচনে কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তা দেখার অপেক্ষায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এদিকে, কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ ছাফা বিকম স্বাক্ষরিত একটি পত্র এই প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে। ২০১৬ সালের সেই পত্রে উল্লেখ আছে, নৌকা প্রত্যাশী সিরাজদ্দৌল্লাহ ছাত্র জীবনে শিবিরের ক্যাডার ছিলেন। তার বড় ভাই শামসুল আলম বাহাদুর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক (পত্র ইস্যুকালে কক্সবাজার শহর শাখার আমীর)। ছোট ভাই ছৈয়দ মোহাম্মদ বশির উত্তর ধুরুং বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। আরেক ভাই ছৈয়দ নুর জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত।

সিরাজদ্দৌল্লাহর পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের বিরোধী রাজনীতিতে সক্রিয়। এমন একজন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগে ন্যুনতম স্থান দেওয়াকেও সমীচীন মনে করছে না তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

কুতুবদিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, ভাঙচুর, নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা জিআর মামলা নং-২৭/১৬ এর ২ নং আসামি সিরাজদ্দৌল্লাহ। একই মামলার প্রধান আসামি উপজেলা জামায়াতের আমীর আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরী। মামলাটি চার্জ গঠন হয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের মারধর, নিপীড়নসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে সিরাজদ্দৌল্লাহর বিরুদ্ধে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরসহ অন্তত তিনটি মামলারও আসামি। যে কারণে মাঠে ময়দানে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আগামী উত্তর ধুরুং ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ইয়াহিয়া খান কুতুবী বলেন, বিগত নির্বাচনে আমি নৌকা প্রতীক পেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজদ্দৌল্লাহর কারণে পরাজিত হয়েছি। আমি চরম ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি বলেন, যারা দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন; তৃণমূলের রাজনীতি থেকে ওঠে এসেছে, প্রার্থীতা মনোনয়নে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। বসন্তের কোকিলদের যেন স্থান দেয়া না হয়। নৌকা প্রতীকের আমি প্রকৃত হকদার।

Exit mobile version