উপজাতিদের স্বাধীনতার গণভোট চাইতে অধিকার দেবো কি?

জেনারেল ইব্রাহীম

♦ সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক

এই কলাম লেখার নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট
বুধবার ১১ মার্চ ২০১৫ থেকে শুরু করে আজ বুধবার ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছয়টি কলাম লিখলাম ধারাবাহিকভাবে। বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান সমস্যার বিভিন্ন আঙ্গিক। এর মধ্যে অনেকবার অনেকেই বলেছেন যে, দেশে একটি রাজনৈতিক ক্রাইসিস যাচ্ছে, আপনি রাজনৈতিক বিষয়ে না লিখে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখছেন কেন? বাংলাদেশের আমজনতা তথা এই পত্রিকার কলামের পাঠকেরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জানতে কি এতই আগ্রহী যে, আপনাকে এখনি কলামগুলো লিখতে হবে? আমার উত্তর হচ্ছে, চলমান রাজনীতি নিয়ে কলাম নয়া দিগন্ত পত্রিকায় সর্বদাই লিখেছি। ঢাকা মহানগর থেকে প্রকাশিত অন্যান্য পত্রিকায়ও লিখি। আরো অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি আছেন যারা চলমান রাজনৈতিক সমস্যা বা বর্তমানের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে লিখেছেন ও লিখবেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সাবলীলভাবে এবং নিশ্চয়তা নিয়ে (ইংরেজি পরিভাষায় : অথরিটিটেভলি) লেখার জন্য জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত। তাই ভাবলাম এই বিষয়টিকে ভাবসম্প্রসারণ করে, রেকর্ডে রাখা উচিত। এ জন্যই লেখা। গত বুধবার ৮ তারিখের কলামে আদিবাসী বিষয়টি নিয়ে আলাপ শুরু করেছিলাম। আজকের কলামেও সেটা নিয়েই আগাব। তবে যেকোনো সচেতন নাগরিক যদি এই বিষয়ের গভীরে যেতে চান, তাহলে শুধু কোনো একটা কলাম পড়লে সেটা সম্ভব হবে না। যেহেতু একটি পত্রিকায় কলামের আকার সীমিত রাখতেই হয়, সেহেতু আমি কলামগুলোকে ওই রকমভাবেই সাজিয়েছি। আর এক দিনে সব কথা লিখলে, সম্মানিত পাঠক তাদের শত ব্যস্ততার মধ্যে ওই দীর্ঘ কলামটি পড়ার এবং উপলব্ধি করার সময় ও সুযোগ নাও পেতে পারেন। এরূপ দ্বিমুখী কারণে, কলামগুলোকে নির্দিষ্ট আকারে রাখতে হয়। পুরনো কলামগুলো অবশ্যই, এই নয়া দিগন্ত পত্রিকার ওয়েবসাইটে গিয়ে আর্কাইভসে পাওয়ার কথা। অথবা আমার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেও এই কলামগুলো অবশ্যই পাওয়া যাবে। আমার ওয়েবসাইট এই কলামের একদম নিচেই মুদ্রিত আছে। ধারাবাহিকভাবে লেখা যেহেতু জাতিসঙ্ঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই শব্দটির সাথে জড়িত, তাই তাদের কিছু ডকুমেন্ট বা দলিলের পরিচয় দিয়ে শুরু করছি।

জাতিসঙ্ঘের সংশ্লিষ্টতা
জাতিসঙ্ঘের সাংগঠনিক কাঠামোতে যে কয়েকটি অঙ্গ বা বিভাগ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ (ইংরেজি পরিভাষায় : দি জেনারেল এসেম্বলি অব দি ইউনাইটেড নেশনস)। জাতিসঙ্ঘে যত সদস্য, সবাই নিঃশর্তভাবে এই সাধারণ পরিষদের সদস্য এবং ভোটাধিকার রাখেন। এরকম আরো আছে- ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল কাউন্সিল, সিকিউরিটি কাউন্সিল ইত্যাদি। গত ৭০ বছরে জাতিসঙ্ঘ অনেক উপসংগঠন বা সহসংগঠন বা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন কাজ উপলক্ষে কোনোটিকে বলা হয় অর্গানাইজেশন, কোনোটিকে প্রোগ্রাম, কোনোটিকে কমিশন, কোনোটিকে বলা হয় কাউন্সিল বা পরিষদ ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ ইউনেস্কো বা আইএলওর নাম বলা যায়। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে যেসব জনগোষ্ঠীকে জাতিসঙ্ঘ আদিবাসী মনে করে, সেসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিবিধ প্রকারের অধিকার নিয়ে জাতিসঙ্ঘ গত ২৫-৩০ বছর যাবৎ সোচ্চার। কোনো সময় তারা ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন বা আইএলওর মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছে; কোনো সময় তারা মানবাধিকার পরিষদের মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছে। কোনো সময় তারা ইন্ডিজেনাস পিপলস কমিটির মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছে। আমরা তিনটি ভিন্ন ডকুমেন্ট বা দলিলের সাথে পরিচিত হবো।

আইএলও কনভেনশন নম্বর ১০৭ অব ১৯৫৭
ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনকে সংক্ষেপে আইএলও বলা হয়। আইএলওর সাধারণ পরিষদের (অফিসিয়াল পরিভাষায় : দি জেনারেল কনফারেন্স অব দি আইএলও) ৪০তম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ৫ জুন ১৯৫৭ তারিখে। ওই অধিবেশন বা সম্মেলন বেশ কয়েক দিন আলাপ-আলোচনার পর ২৬ জুন ১৯৫৭ তারিখে একটি কনভেনশন অনুমোদন করে। বিষয়বস্তু : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী, আদি-অধিবাসী বা ইন্ডিজেনাস বা উপজাতীয় জনগণের নিরাপত্তা এবং জাতি-রাষ্ট্রের ভেতর বৃহত্তর জনগণের সাথে আত্তীকরণ। এই কনভেনশনটি হচ্ছে ১৯৫৭ সালের কনভেনশন নম্বর ১০৭। এই কনভেনশনটির বক্তব্য (বা ভাষ্য) ছয়টি অংশ বা পার্টে বিভক্ত এবং এতে ৩৭টি আর্টিক্যাল আছে। উপযুক্ত সংখ্যক সদস্যরাষ্ট্র, অনুমোদন করার পর, কনভেনশনটি ২ জুন ১৯৫৯ তারিখ থেকে কার্যকারিতা পায়। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই কনভেনশনটি অনুমোদন করেনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগেই তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার এই কনভেনশনটি অনুমোদন করে। এ প্রসঙ্গে যদি কোনো পাঠক অধিকতর জানতে চান তাহলে এই লিংকে যেতে পারেন:
http://en.wikipedia.org/wiki/Indigenous_and_Tribal_Populations_Convention,_1957

আইএলও কনভেনশন নম্বর ১৬৯ অব ১৯৮৯
এরপর, উপজাতীয় জনগোষ্ঠী নিয়ে আলাপ-আলোচনা, ঘটনা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলতেই থাকে। একপর্যায়ে ১৯৫৭ সালের ১০৭ নম্বর কনভেনশনটির নবতর বা যুগোপযোগী সংস্করণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে দি জেনারেল কনফারেন্স অব দি আইএলও তাদের ৭৬তম অধিবেশনে, ২৭ জুন ১৯৮৯ তারিখে আরেকটি কনভেনশন গ্রহণ করে এবং অনুমোদন করেন। এই কনভেনশনটির পরিচয় হচ্ছে ১৯৮৯ সালের কনভেনশন নম্বর ১৬৯। এই ১৬৯ নম্বর কনভেনশনটিতে ৯টি অংশ বা পার্ট আছে এবং ৪৪টি আর্টিক্যাল আছে। উপযুক্তসংখ্যক সদস্যরাষ্ট্র, অনুমোদন করার পর ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখ থেকে এটি কার্যকারিতা পায়। ১৯৮৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সরকারই এই ১৬৯ নম্বর কনভেনশনটি (সঙ্গত কারণেই) অনুমোদন করেনি। অতএব এই কনভেনশনটি বাংলাদেশ মেনে চলতে বাধ্য নয়। এই প্রসঙ্গে যদি কোনো পাঠক অধিকতর জানতে চান তাহলে এই লিংকে যেতে পারেন:
http://en.wikipedia.org/wiki/Indigenous_and_Tribal_Populations_Convention,_1989

জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্র বা ডিকারেশন
এরপর ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন তথা আইএলও অন্য কোনো কনভেনশন গ্রহণ ও প্রকাশ না করলেও জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ একই বিষয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ তাদের রেজিলিউশন নম্বর ৬১/২৯৫ পাস করে বা গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে তারা ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিকারেশন অন দি রাইটস অব ইনডিজেনাস পিপলস’ প্রচার করে। এই ডিকারেশন বা ঘোষণায় ৪৬টি আর্টিক্যাল আছে। এই ঘোষণাটি প্রাথমিকভাবে পাস বা গ্রহণের পর ঘোষণাটির বিভিন্ন বক্তব্য এবং তার তাৎপর্য পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করার জন্য জাতিসঙ্ঘের ‘কমিশন অন হিউম্যান রাইটস’-এর প্রতি দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে, ‘কমিশন অন হিউম্যান রাইটস’ তাদের অভ্যন্তরে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়ার্কিং গ্রুপটি ১১ বার বৈঠকে বসে। বিভিন্ন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ঘোষণার কিছু কিছু বক্তব্য প্রসঙ্গে গুরুতর আপত্তি তোলা হয়। বিশেষত ঘোষণার যেখানে উপজাতীয় বা ইন্ডিজেনাস জনগোষ্ঠীকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়েছে এবং যেখানে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ব্যবহার-অধীন জমির ওপর তাদের একচ্ছত্র মালিকানার কথা বলা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি আপত্তি আসে। ইতোমধ্যে জাতিসঙ্ঘ’র ‘কমিশন অন হিউম্যান রাইটস’ নাম ও পরিচয় বদলিয়ে ‘হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল’ হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিল। এই অবস্থাতেই, ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস ডিকারেশন অন দি রাইটস অব ইনডিজেনাস পিপলস’-এর চূড়ান্ত রূপ বা চূড়ান্ত ভাষ্য গৃহীত হয়। যখন গৃহীত হয় তখন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ৪৭ জন ভোট-প্রদানযোগ্য সদস্য ছিল। এই ৪৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩০ জন সদস্য পক্ষে ভোট দেয়, দুইজন সদস্য বিপক্ষে ভোট দেয়, ১২ জন সদস্য ভোটদানে বিরত থাকে এবং তিনজন সদস্য অনুপস্থিত থাকে। হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ভোটাভুটির এই তারিখটি ছিল ২৯ জুন ২০০৬। অতঃপর ঘোষণাটি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সামনে ৬১তম নিয়মিত অধিবেশন চলাকালে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে উপস্থাপিত হয়। তখন ১৪৩টি সদস্যরাষ্ট্র পক্ষে ভোট দেয়, চারটি সদস্যরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেয় এবং ১১টি সদস্যরাষ্ট্র (বাংলাদেশসহ) ভোটদানে বিরত থাকে। এই তারিখের (১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭) পরে কয়েকটি দেশ তাদের বিরোধিতা বা বিরত থাকা প্রত্যাহার করে নিলেও, সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ ভোটদানে বিরত থাকার স্ট্যাটাস এখনো প্রত্যাহার করেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকার ক ১৬৯ বা এই জাতিসঙ্ঘ ঘোষণাপত্র এখনো গ্রহণ বা অনুমোদন করেনি।

তুলনার প্রথম বিষয় : উভয় কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য
এখন আমরা দু’টি আইএলও কনভেনশন পার্বত্য চট্টগাম বিষয়ে কী বক্তব্য বহন করে, তার সারবস্তু উল্লেখ করব। কনভেনশন ১০৭ (সংক্ষেপে ক ১০৭ বলব) এবং কনভেনশন ১৬৯ (সংক্ষেপে ১৬৯ বলব)-এর বক্তব্যে কতটুকু মিল বা অমিল আছে সেটা প্রথমে তুলে ধরব। তুলনার প্রথম বিষয় উভয় কনভেনশনের মূল প্রতিপাদ্য। তিনটি পয়েন্ট আছে। প্রথম পয়েন্ট। ক ১০৭ এর মতে : উপজাতি জনগোষ্ঠীকে মূল ধারার সমকক্ষ হতে সহায়তা করা হবে। ক ১৬৯ এর মতে : উপজাতি জনগোষ্ঠী, চিরস্থায়ী জনগোষ্ঠী এই ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এই ধারণাই বিকশিত করা হবে। দ্বিতীয় পয়েন্ট। ক ১০৭ এর মতে : উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে, রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ কর্তৃক সহায়তা করা। ক ১৬৯ এর মতে : সর্বক্ষেত্রেই উপজাতীয় জনগোষ্ঠী আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হবে এবং রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ সেটা নিশ্চিত করবে। তৃতীয় পয়েন্ট। ক ১০৭ এর মতে : আত্মপরিচয় নিরূপণের ক্ষেত্রে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। ক ১৬৯ এর মতে : উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় নিরূপণের ক্ষেত্রে, তারা মূল জাতিগোষ্ঠী থেকে ভিন্নতর, নিজস্ব সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক মানদণ্ডে বিবেচিত হবে।

তুলনার দ্বিতীয় বিষয় : উভয় কনভেনশনে ভূমিসংক্রান্ত বক্তব্য
তিনটি পয়েন্ট আছে। প্রথম পয়েন্ট। ক১০৭ এর মতে : ভূমির ওপর উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ নিশ্চিত করবে। ক ১৬৯ এর মতে : ঐতিহ্যগতভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মালিকানার পাশাপাশি তাদের জীবনধারণ ও বিবিধ কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত জমির ওপর অধিকার এবং দখল রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় পয়েন্ট। ক ১০৭ এর মতে : রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ, নিরাপত্তা বা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জমি ব্যবহার করতে পারবে, তবে এ ক্ষেত্রে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বাধীন মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ক ১৬৯ এর মতে : উপজাতীয় জনগোষ্ঠী যেই ভূখণ্ডে বাস করে সেই ভূখণ্ডে কোনো খাস জমি থাকবে না; এমনকি প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মতামত প্রাধান্য পাবে। তৃতীয় পয়েন্ট। ক ১০৭-এ উপজাতীয় নয় এমন মানুষ জমির মালিক হতে পারবে কি পারবে না এই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করা নেই। ক ১৬৯-এর মতে : উপজাতীয় জনগোষ্ঠী যেই ভূখণ্ডে বাস করে সেই ভূখণ্ডে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বাইরের কোনো মানুষ, কোনো জমির মালিক হতে পারবে না; এবং এই বিষয়টি রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ নিশ্চিত করবে।

তুলনার তৃতীয় বিষয় : উভয় কনভেনশনে বিচার-আচার সংক্রান্ত বক্তব্য
ক ১০৭ এর মতে : উপজাতীয় জনগোষ্ঠী দেশের প্রচলিত ধারায় বিচারযোগ্য হবেন। ক ১৬৯ এর মতে: উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধ করলে তাকে যদি কারাভোগের দণ্ড দেয়া হয়, তাহলে কারাভোগ করবে। কিন্তু, যদি অন্য কোনো দণ্ড প্রযোজ্য হয় তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত ধারার দণ্ড না দিয়ে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে প্রচলিত ধারায় শাস্তি প্রদানকে প্রাধান্য দিতে হবে।

জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্রের বক্তব্য
এই ঘোষণাপত্রটিকে এই কলামে, সংক্ষেপ ঘোপ-০৭ বলে পরিচিত করা করা হচ্ছে। এই কলামের এই অনুচ্ছেদে ঘোপ-০৭ আলোচনা করার সময় আমি, ঘোষণাপত্রের বাংলা ভাষায় যেই ভাষ্য কনসাল্ট করেছি সেটি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন জনাব মঙ্গল কুমার চাকমা (আমার ব্যক্তিগত জানামতে, জনসংহতি সমিতির অন্যতম জ্যেষ্ঠ সদস্য)। অনুবাদটির প্রকাশকাল (দ্বিতীয় প্রকাশ) মার্চ ২০১১; পুস্তিকা আকারে অনুবাদটির যৌথ প্রকাশকের প্রথমজন হচ্ছেন কাপ্যেং ফাউন্ডেশন নামের রাঙ্গামাটি ও ঢাকায় কর্মরত একটি এনজিও এবং দ্বিতীয়জন হচ্ছেন: আইএলও কর্তৃক গৃহীত একটি প্রকল্প যার নাম- ‘বাংলাদেশে আদিবাসী ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সমতা বৃদ্ধি প্রকল্প’। প্রকাশনার আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন রয়েল ডেনিশ অ্যাম্বাসি, ঢাকা। এই ঘোষণাপত্রে মোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে (অর্থাৎ ঘোপ-০৭-এ) যে সকল অধিকারগুলোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, ঐরূপ ১৪টি অধিকার আমি এখানে উল্লেখ করলাম; ঘোপ-০৭-এর অনুচ্ছেদ নম্বরসহ। (এক) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৩ ও অনুচ্ছেদ ৪ দ্রষ্টব্য। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, অভ্যন্তরীণ এবং স্থানীয় বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন বা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। (দুই) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ১০, ২৫ এবং ২৬ দ্রষ্টব্য। ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর অধিকার। (তিন) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৩০ দ্রষ্টব্য। উপজাতীয় তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার। (চার) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ১০ দ্রষ্টব্য। উপজাতীয় তথা আদিবাসীদের ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকার (এমনকি ক্ষতিপূরণ প্রদান পূর্বক স্থানান্তরিত হলেও সেটাও নিরুৎসাহিত হওয়ার অধিকার)। (পাঁচ) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ২৯ দ্রষ্টব্য। স্বাধীন সম্মতি তথা পূর্ব-অবহিতিপূর্বক সম্মতি ছাড়া, উপজাতীয় তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠী থেকে হরণ করে নেয়া বা যেকোনো নিয়মে নিয়ে যাওয়া ভূমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের পুনরুদ্ধার ও সম্পদ ফেরত পাওয়ার অধিকার। (ছয়) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ১৪ দ্রষ্টব্য। মাতৃভাষায় শিার অধিকার। (সাত) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ১৬ দ্রষ্টব্য। নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠার অধিকার। (আট) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ২০, ২১ এবং ৩২ দ্রষ্টব্য। উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য অগ্রাধিকার তালিকা ও কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং কর্মকৌশল গ্রহণের অধিকার। (নয়) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ২৪ দ্রষ্টব্য। নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ঔষধি ও স্বাস্থ্যসেবা সংরণের অধিকার। (দশ) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ১১ এবং ১২ দ্রষ্টব্য। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা, চর্চা ও পুনরুজ্জীবিতকরণের অধিকার। (এগারো) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৮ এবং ৯ দ্রষ্টব্য। উপজাতীয় তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজেদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, নৃতাত্ত্বিক উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করার অধিকার। (বারো) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৪১ দ্রষ্টব্য। জাতিসঙ্ঘের সহায়তা কামনা বা ইন্টারভেনশনের মতোই হস্তক্ষেপ কামনা। জাতিসঙ্ঘ এবং অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা এই কনভেনশনের অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা বা বাস্তবায়নের জন্য যেন রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে, ঐ নিমিত্তে জনমত গঠন বা ইংরেজি পরিভাষায় মোবিলাইজেশন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা কারিগরি সহায়তার ফোরাম গঠন করার অধিকার। (তেরো) ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৩৬ দ্রষ্টব্য। ট্রান্সবর্ডার বা সীমানা রেখার উভয় পাড়ে বসবাসরত একই প্রকারের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির অধিকার, সহযোগিতা বৃদ্ধির অধিকার এবং এই কাজে রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশের সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা (ইংরেজি পরিভাষায় এসিওরেন্স) পাওয়ার অধিকার।

জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্রের তাৎপর্য (এক)
অনেক তাৎপর্যের মধ্যে, আমি শুধু দু’টি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য এখানে আলোচনা করব। বাকিগুলো সম্মানিত পাঠক অনুমান ও কল্পনা করে নেবেন। প্রথম তাৎপর্য। আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার সম্পর্কিত। ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৩ ও ৪ দ্রষ্টব্য। সাম্প্রতিককালের একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পাঠকের জন্য বুঝতে সহজ হবে। যুক্তরাজ্যের উত্তর অংশে অবস্থিত স্কটল্যান্ড, নিজেদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বাস্তবায়ন করেছে। সেখানে রেফারেন্ডাম হয়েছে। স্কটল্যান্ডের জনগণ ভোট দিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের মেজরিটি ভোটার এই বলে ভোট দিয়েছেন যে, আমরা স্কটল্যান্ডবাসী স্বাধীন রাষ্ট্র হতে চাই না; বরং আমরা ইংল্যান্ডের সাথে সহাবস্থান করে যুক্তরাজ্যে অন্তর্ভুক্ত যেমন আছি তেমন থাকতে চাই। সম্মানিত পাঠক; আমরা কি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যত্র বসবাসরত উপজাতি জনগণকে, জেনেশুনে আদিবাসী স্বীকৃতি দেবো? কারণ, আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতি দিলে তাদেরকে একটি সুযোগ দিতে হবে। সুযোগটি হলো এই যে, তোমরা ভোট দাও এবং তোমরাই নির্ধারণ করো যে, তোমরা কি একটি স্বাধীন দেশ হবে, নাকি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রদেশ হবে নাকি যেমন আছে তেমন থাকবে, নাকি উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলোর সাথে মিলিত হয়ে ভারতের অংশ হয়ে যাবে?

সম্মানিত পাঠক, বাংলাদেশ সরকার যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ক ১৬৯ এবং ঘোপ-০৭ মেনে নেয় বা রেটিফাই করে, তাহলে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী জনগণ ঠিক এই অধিকারটির বাস্তবায়ন চাইবে এবং বাস্তবায়নের নিমিত্তে জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতা চাইবে। এখন সম্মানিত উপজাতীয় অনেক নেতাই বলাবলি করছেন যে, আমাদেরকে আদিবাসী ঘোষণা দিলে বাংলাদেশের কোনো অসুবিধা হবে না, কারণ এটি একটি অলঙ্কারিক উপাধি এবং সম্মানজনক উপাধি। আপনারা বাঙালি আমরা আদিবাসী- এই তফাতটুকুই আমরা উপজাতি জনগণ আপনাদের মুখ থেকে শুনতে চাই। কিন্তু একবার যখন বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে, তখন এই সম্মানিত উপজাতীয় নেতৃবর্গই, আইনানুগ তাৎপর্য মোতাবেক আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার চাইবেন।

সম্মানিত পাঠক বুঝে দেখুন। আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত সরকার বা ভারতের সংবিধান ভারতে বসবাসরত শত শত উপজাতীয় জনগোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। আমাদের দক্ষিণ-পূর্বের প্রতিবেশী সাবেক বার্মা বর্তমানের মিয়ানমার নামে রাষ্ট্রও তাদের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী ঘোষণা দেয়নি। ভারত বা বার্মা, কেন স্বীকৃতি দেয়নি তার কারণ ভারত বা বার্মা সরকারই জানে; আমরা শুধু কারণগুলো সম্বন্ধে বাস্তবসম্মত অনুমান করে নিতে পারি। একটা কারণ উল্লেখ করি; উদাহরণস্বরূপ আলোচনা করছি। ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৩৬ মোতাবেক বাংলাদেশের রাঙ্গামাটিতে বসবাসরত চাকমা সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখার অপরপাড়ে ভারতের মিজোরাম প্রদেশে বসবাসরত চাকমা সম্প্রদায় এর মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, সমঝোতা বৃদ্ধি, সহযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে কোনো প্রকার বাধা বাংলাদেশ সরকার দিতে পারবে না; যদি বাংলাদেশ সরকার ঘোপ-০৭ অনুমোদন করে। ভারত সরকারও দিতে পারবে না, যদি ভারত সরকার ওই মানুষগুলোকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ যদি বাধা দেয়, পৃথিবীর শক্তিশালী মুরব্বিরা, বাংলাদেশ সরকারের কাছে ঘোপ-০৭ তুলে ধরবে এবং উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ পৃথিবীব্যাপী প্রচারণা চালাবে।

জাতিসঙ্ঘের ঘোষণাপত্রের তাৎপর্য (দুই)
দ্বিতীয় তাৎপর্য। ঘোপ-০৭ অনুচ্ছেদ ৩০ দ্রষ্টব্য। সামরিক বাহিনী মোতায়েন ও কার্যক্রমসংক্রান্ত। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান মোতাবেক ও বর্তমান কার্যপ্রণালী বিধি মোতাবেক, বাংলাদেশ সরকার, তিনটি বাহিনীর সদর দফতরের মাধ্যমে, বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ বা অনুমোদন দিতে পারেন। সামরিক কার্যক্রম বলতে দুর্যোগ মোকাবেলাও হতে পারে, ইলেকশন ডিউটিও হতে পারে, রাষ্ট্রবিরোধীদের সাথে যুদ্ধ করাও হতে পারে, বিদ্রোহ দমনও হতে পারে অথবা সীমান্তে গিয়ে বাইরের শত্রু মোকাবিলা করাও হতে পারে। সামরিক কার্যক্রম শুরু করার আগে সরকার কর্তৃক, অন্য কোনো ব্যক্তির বা অন্য কোনো পরে অনুমোদন নেয়া বা তাদের সাথে আলোচনা করা ইত্যাদির কোনো অবকাশ বর্তমান সংবিধান বা কার্যপ্রণালীতে নেই। বাংলাদেশ সরকার যদি, আনুষ্ঠানিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা মারমা ত্রিপুরা ইত্যাদি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেকোনো প্রকারের সামরিক কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে আঞ্চলিক পরিষদ (জনাব সন্তু লারমা) অথবা সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা করতে হবে।

উপসংহার
এই কলামের সম্মানিত পাঠকরা আপনারাই কষ্ট করে নিজেরাই মূল্যায়ন করুন, বাংলাদেশ সরকার কি পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা মারমা ত্রিপুরা ইত্যাদি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসী স্বীকৃতি দিয়ে, স্বার্থান্বেষী বিদেশীরা কর্তৃক এবং কিছু জ্ঞানপাপী বাংলাদেশীরা কর্তৃক পাতা ফাঁদে পা দেয়া উচিত? আমার কাজ আমি করলাম। সম্মানিত পাঠকের কাজ সম্মানিত পাঠক করবেন। তারপর কপালে যা থাকে তাই হবে। সর্বশেষ বাক্য হলো, একটি ইংরেজি প্রবাদ: ‘ইটার্নাল ভিজিলেন্স ইজ দি প্রাইস অব লিবার্টি’ অর্থাৎ সার্বণিক সচেতনতা ও সাবধানতাই হলো স্বাধীনতার মূল্য। আগামী কলাম অর্থাৎ এই প্রসঙ্গে শেষ কলামটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর, ইনশাআল্লাহ।

লেখক : মেজর জেনারেল (অব:), চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.generalibrahim.com

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “উপজাতিদের স্বাধীনতার গণভোট চাইতে অধিকার দেবো কি?”

  1. এ গুলো লিখে লাভ কী? মানুষ মরলে এই গুলি (পাপ/পূণ্য)সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে? আমরা সবাই পৃথিবীতে দুদিনের অতিথি মাত্র। তাই আসুন আমরা পরস্পরের সমালোচনা না করে মানুষের কল্যানের জন্য কিছু করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন