parbattanews

উপজাতি ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন: উত্তপ্ত জাবি ক্যাম্পাস, ছাত্রলীগ নেতাসহ বহিষ্কার ৮

জাবি
ডেস্ক রিপোর্ট:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পহেলা বৈশাখের দিন রাতে এক উপজাতি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাবি ক্যাম্পাস। নিপীড়কদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রশাসনকে আল্টিমেটামও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ আল্টিমেটাম দেয় বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখা, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চ যৌন নিপীড়নের বিচারের দাবিতে আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টায় মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিপীড়নকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের, নিপীড়িত ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে মঞ্চ থেকে।

এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পহেলা বৈশাখের দিন রাতে ঐ উপজাতি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ৮ শিক্ষার্থীকে (তদন্তকালীন সময়ে সাময়িক) বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

উপাচার্য অধ্যাপক ফারাজানা ইসলাম নিজ ক্ষমতা বলে এ বহিষ্কার করেছেন বলে শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে আটজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী কারো নামই প্রকাশ করা হচ্ছে না।’

৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে তদন্তধীন থাকায় নীতিমালা অনুযায়ী বহিষ্কৃতদের নাম গোপন রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখে বিভাগের অনুষ্ঠান শেষে রাত ৮টার দিকে বিভাগের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে প্রীতিলতা হলে ফিরছিলেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এক উপজাতি শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের পরিবহন চত্বর সংলগ্ন চৌরঙ্গীতে আসার পর শহীদ সালাম বরকত হলের পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কথা বলার অজুহাতে তাদের পথ রোধ করে।

এক পর্যায়ে তাদের একজন ওই ছাত্রীর ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে ঢুকে যায়। পরে ব্যাগ উদ্ধারে গেলে যৌন হয়রানির শিকার হন। এ সময় তার মোবাইল ফোন ও ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং সঙ্গে থাকা বন্ধুকেও মারধর করে।

পরদিন রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই ছাত্রীর হলে গিয়ে সমঝোতা চেষ্টা চালায়। সমঝোতা ব্যর্থ হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ওই ছাত্রীর এক বন্ধুর কাছে জোর করে মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে চলে আসে।

পরে বৃহস্পতিবার সকালে ছাত্রলীগ কার্যকরী সদস্য নিশাত ইমতিয়াজ বিজয়, শশাব হল শাখা প্রচার সম্পাদক নাফিজ, কর্মী আবদুর রহমান  ইফতি, রাকিব, নুরুল কবীরের বিরুদ্ধে লাঞ্ছিত হওয়ার লিখিত অভিযোগ দিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন ওই ছাত্রী। অভিযোগটি যৌন নিপীড়নের হওয়ায় প্রক্টর এবং উপাচার্য উভয়েই অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে পাঠানো হয়।

উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিতে যাওয়া অর্থনীতি বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আতিয়া ফেরদৌসী চৈতি বলেন, আমরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি অভিযোগটি যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের সদস্য-সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন। উপাচার্য দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করার আশ্বাস দেন।

যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, যৌন নিপীড়নের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি সেলের সদস্য সচিব রহিমা কানিজের কাছে পাঠানো হয়েছে। শনিবার ফাইল প্রস্তুত করে কাজ শুরু করা হবে।

এদিকে, যৌন নিপীড়নের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে নিশাত ইমতিয়াজ বিজয়, নাফিজ ইমতিয়াজ, আবদুর রহমান ইফতি, রাকিব হাসান, নুরুল কবীরকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

Exit mobile version