উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক গাছকর্তন ও শ্রমিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের সাংবাদিক সম্মেলন

S 2

আল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় গত দুই বছরে  উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক রামগড়ে হাজার হাজার গাছ কর্তন, লুটপাট ও শ্রমিকদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে শনিবার সকাল ১১ টায় খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত কপি পাঠ করেন পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ইব্রাহীম মনির, প্রচার সম্পাদক সোহাগ চৌধুরী ও রামগড় কর্ণেল বাগানের বাগান রক্ষনা-বেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত জোনাব আলী প্রমুখ।

এ সময় নেতৃবৃন্দগণ অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন যাবৎ পাহাড়ে ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়ানো হয়েছে এবং হচ্ছে। কখনো শান্তির নামে অশান্তির দূতরা পার্বত্য জনপদকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে চলেছে, আবার কখনো কখনো সহজ সরল উপজাতি জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতি-বাঙালির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে বিশেষ ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে। পাহাড়ে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি এ অঞ্চলের নিত্যদিনের ঘটনা।   

উপজাতী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজীর অব্যাহত ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে চাঁদা পরিশোধের পরও গত ১৯ মার্চ বুধবার রাত ১০ টার দিকে ‪খাগড়াছড়ি‬ জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছাড়া ইউনিয়নের হাজাছড়া এলাকার জনৈক মো. সামিউল হকের সৃজিত বাগানের আমের চারা, মূল্যবান সেগুন গাছ ও কলা গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৮ হাজার গাছ কেটে ফেলেছে ‎উপজাতীয়‬ সন্ত্রাসীরা।

ঐসময় সন্ত্রাসীরা বাগানের ১৬০০ ফুট লম্বা পানির পাইপ কেটে ফেলে এবং ১০০০ লিটারের দুটি পানির ট্যাংক, বাগানের অফিস ঘর ভাংচুরসহ একটি জেনারেটর লুট করে নিয়ে যায়। এতে বাগান মালিকের প্রায় ১২ লাখ টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সময় বাগান প্রহরীরা মালিকের কাছে ফোন করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং মো. জনাব আলী (৪৫), ইউছুফ (২৮), সাঈদ (৩৫), হামিদ (৬০), মো. এরশাদ হোসেন (২৫) ও ফারুক (২৬) সহ ২০-২২ জন বাগানের নিরাপত্তা প্রহরীর হাত-পা বেঁধে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাগানের উপর ধবংসলীলা চালায় বলে অভিযোগ করেন।

চিহ্নিত উপজাতী সন্ত্রাসী কমিন্দ্র ত্রিপুরার নির্দেশেই তার সহযোগী দেবন্দ্র ত্রিপুরা, ভারতচন্দ্র ‎ত্রিপুরা, শিব্রু ত্রিপুরা, বরেন্দ্র ত্রিপুরা, পুস্ত কুমার ত্রিপুরা, উপনন্দন ত্রিপুরা, জয় কুমার চাকমা, আমিদ চাকমা, শান্ত চাকমা, ধন কুমার ‎চাকমা‬ ও শান্তিমনি চাকমার নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসীরা একটি সশস্ত্র দল এই নির্মম নারকীয় কর্মকান্ড চালিয়েছে বলে জানান।

‪বাগান মালিক মো. সামিউল হক তার নিজ নামীয় ২০০ একর ভূমির ৮০ একর জায়গা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ, বনজ এবং ঔষধি গাছের বাগান সৃজন করতে গেলে উপজাতী সন্ত্রাসীদের আঞ্চলিক সংগঠন ‎পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস এম.এন লারমা গ্রুপ)‬ এবং ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (‎ইউপিডিএফ) এর পে তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে বাগান সৃজনের পর হতে এ পর্যন্ত ঐ দুই সংগঠনের সন্ত্রাসীদের প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ‎চাঁদা‬ পরিশোধও করেছেন বাগান মালিক মো. সামিউল হক। তবে দাবীকৃত চাঁদা পরিশোধ করার পরও বাগানের সৃজিত গাছগুলো রক্ষা করতে পারেন নি বাগান মালিক।

উল্লেখ্য যে, এর আগেও গত বছরের ১৩ ও ১৫ অক্টোবর এবং চলতি মাসের ১৪ ও ১৯ তারিখ চার দফায় একই বাগানের প্রায় ২০ হাজার গাছ কেটে ফেলে ওই সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও ইতিপূর্বে রামগড়ের ‪পাতাছড়া‬ সহ আশেপাশের এলাকায় চাঁদার দাবীতে বাঙালি মালিকানাধীন বেশকয়েকটি বাগানের সৃজনকৃত গাছ কেটে ফেলেছে উপজাতী সন্ত্রাসীরা।
 ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা আদালতে মামলা দায়ের করলেও আজ অবধি কোন আসামীকেই গ্রেফতার করতে পারেনী পুলিশ। ফলেই সন্ত্রাসীরা বার বার এ জাতীয় ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নেতৃবৃন্দরা।
পার্বত্যাঞ্চলের বনায়ন রক্ষার্থে প্রশাসনের কাছে এ সকল উপজাতী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন। অন্যথায়, সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা হরতাল অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচী দেওয়ার হুশিয়ারী জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন