উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আটকের প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াতের থানা ঘেরাও

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পেকুয়ায় নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার জামায়াতের শীর্ষ স্থানীয় নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মঞ্জু’সহ তিন নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে পেকুয়া থানা  ঘেরাও করেছে বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীরা।

রোববার (২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসিনা আহমেদ আটক জামায়াত নেতাকর্মীদের ছাড়িয়ে আনতে থানায় গেলে তাঁর সাথে থাকা দলীয় নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে রাখেন।

আটক জামায়াত নেতারা হলেন, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের উত্তর মেহেরনামা এলাকার মো. কালুর ছেলে ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান মঞ্জু, টইটং ইউনিয়নের পশ্চিম নাপিতখালীর মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে মেজবাহ উদ্দিন ও নাপিত খালীর বদরুল আলমের ছেলে জসিম উদ্দিন।

একইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পেকুয়া সদরের উত্তর মেহেরনামা এলাকা থেকে জামায়াত ইসলামের পেকুয়া উপজেলার দায়িত্বশীল এ তিন নেতাকর্মীকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। এ অভিযানে বিএনপি-জামায়াতের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী গোপন সংবাদ পেয়ে পুলিশি অভিযানের পূর্বেই পালিয়ে যায় বলে দাবি করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানায়, জামায়াত নেতাদের আটকের প্রতিবাদে রোববার বিকেলে আকস্মিক বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসিনা আহমেদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু ও বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ্’র নেতৃত্বে সরকার ও পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা থানা ঘেরাও করে।

পরে পেকুয়া উপজেলা বিএনপির ৭ সিনিয়র নেতাকে সাথে নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসিনা আহমেদ পেকুয়া থানার ওসির সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় তারা আটক জামায়াত নেতাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেন।

পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাহাদুর শাহ ও পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু’সহ আরো কয়েকজন বিএনপি নেতা ওসি জাকির হোসেন ভূঁইয়াকে তাঁর কক্ষে উচ্চস্বরে বকাবকি করেন। বিএনপি নেতারা তাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করলেও তিনি শান্তভাবে তাদের প্রশ্নের জবাব দেন।

এদিকে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে থানায় গেলে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি পেকুয়া উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহাবুব উল করিম ও নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুসা নাসের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদল সহ-সভাপতি মাহাবুব করিম, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. আহসান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক এহেসান খোকন, বিএনপি নেতা সদর ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. ইসমাঈল, বিএনপি নেতা আবু বক্কর, শ্রমিকদল নেতা মনছুর আলম’সহ দুই শতাধিক নেতা চৌমহুনী মোড়ে অবস্থান নেন। পরে তিন শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হাসিনা আহমেদের গাড়িবহর চৌমহুনী মোড়ে আসলে তারা গাড়ি থেকে নেমে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত আজিজ রাজু ও যুবদল সম্পাদক কামরান জাদিদ মুকুট’সহ আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা জামায়াত নেতাকে আটকের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে থানা অভিমুখে রওয়ানা করে। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকায় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা কঠোর অবস্থানে যেতে পারেনি।

তারা আরও জানান, হাসিনা আহমেদ’সহ বিক্ষোভ মিছিলটি থানার দিকে অগ্রসর হয়ে থানার গেইটে পুলিশি বাধার মুখে পড়লে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা থানার গেইট ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরে থানার গেইট খুলে হাসিনা আহমেদসহ শীর্ষ নেতারা ওসি’র সাথে সাক্ষাত করতে যান। এ সময় থানা গেইটে অবস্থান নেয় বিএনপি জামায়াতের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। তারা জামায়াত নেতাকে ছেড়ে না দিলে পুরো পেকুয়ায় নাশকতার হুমকি দিলেও পুলিশ সহনশীলভাবে অবস্থান করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার ওসি জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জামায়াত নেতা নুরুজ্জামান মঞ্জু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী’সহ জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিয়ে নুরুজ্জামান মঞ্জুর বাড়িতে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল এমন তথ্যের ভিত্তিতে নুরুজ্জামান মঞ্জু’সহ তিন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, জামায়াত নেতাকে আটকের প্রতিবাদে চৌমহুনীতে বিক্ষোভ করার পর বিএনপি নেত্রী হাসিনা আহমেদ বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে সাথে নিয়ে জামায়াত নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে থানায় আসে। এ সময় তার সাথে থাকা কিছু নেতাকর্মী থানার বাইরে খুব বিশৃঙ্খলা করে। যা পুলিশ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। আটক জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন