উষাতন তালুকদারের হাত ধরে সংসদের পথে জনসংহতি সমিতি?

1533449_551789234915368_1884554734_n

স্টাফ রিপোর্টার :

আগামী ৫ জানুয়ারির আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এখন মাঠে। প্রচার-প্রচারণা চলছে পুরোদমে। শহর এলাকাসহ সব জায়গা এখন পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর মধ্যরাত অবধি চলছে মাইকিং। প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগ নিয়ে। চলছে তুমুল লড়াই। ঘটছে ছোটোখাটো মারামারির ঘটনাও। রাঙ্গামাটি আসনে এবার লড়াই হবে দ্বিমুখী। আর লড়াই জমবে আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার, জেএসএস সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের মধ্যে।

হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দীপঙ্কর তালুকদার (নৌকা) এবং ঊষাতন তালুকদারের (হাতি) মধ্যে। ১৮দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এবার জেএসএস নেতা ঊষাতন তালুকদারের জয় লাভের উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে নৌকা প্রতীকের ভরাডুবির। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট আবছার আলী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি জামায়াত ভোট বয়কট করা ও বাঙালী সংগঠনগুলো তার পক্ষে প্রকাশ্যে না নামায় তেমন কোনো প্রভাব সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।

আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইউপিডিএফ সমর্থিত সচিব চাকমা (উড়োজাহাজ) এবং জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের সুধাসিন্ধু খীসার (বই) তেমন কোনো প্রচারণা নেই রাঙামাটি শহরে। তাছাড়া জেএসএস’র প্রতিরোধের মুখে তারা প্রচারণায় খুব বেশী এঁটে উঠতে পারছেন না। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ডা: রুপম দেওয়ান নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন বলে জানালেও প্রার্থীতা প্রত্যাহৃত হয়নি।

এদিকে প্রচারণায় এগিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপঙ্কর তালুকদারের পোস্টারে নির্বাচনী এলাকা ছেয়ে গেছে। মাইকিং চলছে শহর এলাকায়। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদারের সমর্থকদের উপচেপড়া ভিড়ে গ্রামাঞ্চলে প্রচারণায় সুবিধা নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তিনি গত নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও আসনটি ধরে রাখতে চান তিনি।

এদিকে আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার। প্রতিদিন জনসংযোগে ব্যস্ত তিনি। এবার নির্বাচনে বিপুল জমসমর্থন নিয়ে পুরোদমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ঊষাতন তালুকদার। গত নির্বাচনে ৫৮ হাজার ভোট পেয়েছেন তিনি। এবার জয়ের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত তার দল ও সমর্থকরা। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা মতে, এবার বিএনপি নির্বাচনে না থাকায় বিএনপি সমর্থিত পাহাড়ি ভোটারা ভোট দেবেন হাতি মার্কায়। এছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত পাহাড়ি ভোটারদের অনেকেই হাতি প্রতীকে ভোট দেবেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয়ভাবে আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী নেতিবাচক ভোট, রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জেএসএস’র প্রভাব, দীপঙ্করের সাথে আওয়ামীলীগের নেতৃবন্দের নীরব দ্বন্দ্ব, বঞ্চিত, অবহেলিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী নেগেটিভ ভোট, পার্বত্যমন্ত্রী হিসাবে দীপঙ্কর তালূকদারের বিভিন্ন দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিষয়গুলো বিবেচনা করে নেতিবাচক ভোটগুলো উষাতন তালুকদারের বাক্সে যেতে পারে। তাছাড়া গ্রামীন ও দূর্গম এলাকার ভোটাররা জেএসএস’র সন্ত্রাসীদের চাপের মুখে একচেটিয়াভাবে উষাতন তালুকদার পেতে পারে। ফলে প্রশাসনিক নির্দেশনা না থাকলে আসন্ন নির্বাচনে উষাতনের জয়লাভের উজ্জল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাড়ে তিন দশক পর পুনরায় সংসদের পথে পার্বত্য জনসংহতি সমিতি।

সবকিছু মিলিয়ে এবার নির্বাচনে নৌকা ডুবির আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসন থেকে গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী দীপংকর। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের মণিস্বপন দেওয়ান। ১৯৯৬ ও ’৯১ সালে নির্বাচত হন আওয়ামী লীগের দীপংকর তালুকদার। ১৯৮৬ সালে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির বিকে দেওয়ান। তার আগে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাসস থেকে উপেন্দ্র লাল চাকমা। স্বাধীনতাত্তোর প্রথম সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন