উসকানি নয়, মর্টারশেল পড়াকে ভুলবশত বলছে মিয়ানমার

fec-image

বান্দরবানের সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল পড়ার বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে। এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি তলব করে কূটনৈতিক পত্র হস্তান্তরের সময় রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

প্রথমে ২০ আগস্ট, এরপর ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে মর্টারের গোলা এসে পড়ে বাংলাদেশের সীমানায়। প্রতিবারই দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। দেওয়া হয় কূটনৈতিক পত্রও। কিন্তু তাতেও থামেনি মিয়ানমার। গত শনিবার মিয়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি হেলিকপ্টার থেকে বান্দরবানে বাংলাদেশের সীমানায় গোলাবর্ষণ করা হয়। এবারও রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রাষ্ট্রদূতকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তলব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মাইনুল কবির। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন এবং প্রতিবেশী সুসম্পর্কের পরিপন্থী—বলে রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে। রাখাইন থেকে যাতে আর কোনো বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না ঘটে তা নিশ্চিত করতেও রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মিয়ানমার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যার বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে ভুলবশত বাংলাদেশ সীমানায় তাদের গুলি এসে পড়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত হচ্ছে। সেই সংঘাতের কারণে আমাদের এখানেও দুটি বোমা পড়েছে। এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা আমাদের উসকানি দিচ্ছে না।’

এ অবস্থায় সীমান্তে পাহারা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মোটামুটিভাবে আমাদের অবস্থান শক্ত করেছি। মিয়ানমারে বেশ সংঘাত হচ্ছে। আমাদের ভয় হলো সেখানকার কোনো নির্যাতিত লোক যদি আবার আমাদের দেশে ঢুকে পড়ে। এ জন্য আমরা আমাদের বর্ডার গার্ডসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিতি ছিলেন।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘২০১৭ সালে আমাদের কাছে যে তথ্যগুলো ছিল না এখন কিছুটা হলেও আছে। সেটা (সংঘাত) মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা মন্তব্য করতে চাই না। তবে আমরা এবার অন্ততপক্ষে কোনো অনুপ্রবেশ আশা করছি না।’

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমারের যে এলাকায় সংঘাত হচ্ছে সেখানে রোহিঙ্গারা থাকে না। রোহিঙ্গারা থাকে ঠিক তার বিপরীত দিকে, পূর্বাঞ্চলে। সংঘাত হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চলে। আমাদের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে। যে জায়গাটা ইতিমধ্যে একেবারেই রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে গেছে।’

মিয়ানমার সীমান্ত থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী ‘আরাকান আর্মির (এএ)’ সঙ্গে দেশটির সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। এমন অবস্থায় গত ১৫ দিনে বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে দুই দফায় গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন