উৎসের পানিতেও দূষণ, কষ্টে পাহাড়ের মানুষ
ডিসেম্বর থেকে মে—ছয় মাস পানির কষ্ট লেগেই থাকে। রাঙামাটি জেলার কিছু স্থানে ঝিরিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানিতে শনাক্ত হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত কলিফর্ম।
শুষ্ক মৌসুমে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা—রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে সুপেয় পানির সংকট নতুন নয়। এবার সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দূষণ; রাঙামাটির কিছু স্থানে ঝিরিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানিতে ইকোলাই ও কলিফর্মের মতো ব্যাকটেরিয়ার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গেছে পরীক্ষায়। এতে জেলায় পানিবাহিত রোগ বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পানি পরীক্ষা করা না হলেও এই দুই জেলার ডায়রিয়া পরিস্থিতি রাঙামাটির চেয়ে খারাপ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে রাঙামাটিতে ৫ হাজার ১৭৮ জনের ডায়রিয়া হয়। এর মধ্যে শুধু এপ্রিলে চার হাজারের বেশি। বান্দরবানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় ৮ হাজার ৯৯১ জন। শুধু এপ্রিলেই ৭ হাজার ২৪০ জন রোগী পাওয়া যায়, যা সারা দেশে সর্বোচ্চ। এ সময় মারা গেছে একজন। খাগড়াছড়িতে আক্রান্ত হয়েছে তিন জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩০৩ জন। তবে এ জেলায় প্রথম তিন মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল বেশি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাঙামাটির জুরাছড়িতে রাঙাবি চাকমা (৮) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়। একই দিন বান্দরবানের আলীকদমেও এক শিশু মারা যায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ ও পাহাড়ি পাড়াপ্রধানদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, মূলত ডিসেম্বর থেকে মে—ছয় মাস তিন পার্বত্য জেলায় পানির কষ্ট লেগেই থাকে। এ সময়ই দূষণের কারণে বাড়ে পানিবাহিত রোগও। বিশেষ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বেশি। পাহাড়ি উৎসের পানি দূষিত হচ্ছে নানাভাবে। প্রাকৃতিক উৎসগুলোর পানি যে পথে আসছে, ওই পথগুলোয় মানুষের বিচরণ বেড়েছে। পানি চলাচলের পথে মিশছে মানুষ ও প্রাণীর মলমূত্র।
কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও ওষুধও মিশছে ঝিরি-ঝরনায়। আবার অগভীর নলকূপের পানিও ভূগর্ভস্থ কারণে দূষিত হতে পারে। গাছপালা ধ্বংস করা এবং বসতি বৃদ্ধিও পানি দূষিত হওয়ার আরেকটি কারণ। মূলত পাথুরে পাহাড়, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া ও সরকারিভাবে পর্যাপ্ত নলকূপ না থাকায় সংকট দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) হিসাবে, রাঙামাটি জেলায় ৬৩ শতাংশ, বান্দরবানে ৬১ শতাংশ এবং খাগড়াছড়িতে ৭৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। বাকিরা নির্ভর করে প্রাকৃতিক উৎসের ওপর। তবে পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, কাগজে–কলমে যত শতাংশ মানুষ পানি সরবরাহের আওতায় আছে বলে দাবি করা হচ্ছে, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। তিন জেলায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মানুষ পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে।
রাঙামাটিতে পানিতে দূষণ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অলক পালের তত্ত্বাবধানে রাঙামাটি সদর ও কাউখালী উপজেলার পানির উৎস নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছেন রুলি দেওয়ান নামের স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী। রুলি রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা।
‘পানিসংকটে স্বাস্থ্য সংবেদনশীলতা—রাঙামাটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের ওপর একটি কেস স্টাডি’ শীর্ষক সমীক্ষায় দুটি উপজেলার ১০টি স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেছেন। পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দাদের পানিবাহিত রোগের বিষয়টিও সমীক্ষায় উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক অলক পাল বলেন, পানিতে ইকোলাই ও কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। ঝিরি শুকিয়ে যাওয়া, গাছপালা কেটে ফেলা, মানুষের বিচরণ বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে দূষণ হতে পারে। এ কারণে তাঁরা ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগে আক্রান্ত হন। রাঙামাটির দুটি উপজেলায় সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সমীক্ষাটি এখন প্রকাশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সংগ্রহ করা নমুনার মধ্যে পাঁচটি ছিল পাতকুয়া এবং বাকিগুলো ছিল অগভীর নলকূপ ও ঝিরি। সব কটির প্রতি মিলিলিটার পানিতে গড়ে কলিফর্ম পাওয়া গেছে ২০০ থেকে ৩০০টি। পানীয় জলে যার সহনীয় মাত্রা ১০০। ইকোলাই থাকা মানে পানি দূষিত। এ ছাড়া পানির উপাদান সিওডি (রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা) ও বিওডি (জৈব অক্সিজেন চাহিদা) ছিল গ্রহণযোগ্য মাত্রার অনেক বেশি। ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে এই সমীক্ষাকাজ চলছে। এটি এখন প্রকাশনার পর্যায়ে রয়েছে।
রুলি দেওয়ান বলেন, ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের কারণে অনেকগুলো প্রাকৃতিক পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে কিছু উৎসের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে দূষণও হয়েছে। উপজেলার সাপছড়ি এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন তাঁদের পাতকুয়ায় (রিংওয়েল) ঢাকনা নেই। আর মানুষ বাড়ার কারণে ওখানে গাছপালা কমে গেছে।
সাপছড়ি ইউনিয়নের মরংছড়ি ও দেপ্পোছড়ি এলাকা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এই দুই পাড়ার অন্তত ৬০ পরিবার চরম পানিসংকটে রয়েছে। সরেজমিনে দেপ্পাছড়িতে দেখা যায়, সকালের দিকে নারীরা পানির জন্য একটি পাতকুয়ায় যান। সেখান থেকে পানি আনতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। আশপাশে কোনো অগভীর নলকূপ নেই। কুয়াটিও অরক্ষিত। ঢাকনা নেই।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বনরাম চাকমা বলেন, ‘পানির জন্য খুব কষ্টে আছি আমরা। একটা পাতকুয়া ব্যবহার করছি প্রায় ৩০ পরিবার। গোসল ও খাওয়াদাওয়ার পানি সব এক কুয়া থেকে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ডায়রিয়ার জন্য তিন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।’
কাউখালীর ছেলাছড়া থেকেও পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওখানেও একটি পাতকুয়া রয়েছে। তাতে একটি ঢাকনা ছিল। কুয়াটি ঘিরে ছেলাছড়ার ৪০টি পরিবারের বসবাস।
ঘাগড়া ইউনিয়নের ছেলাছড়ার পাড়াপ্রধান (কার্বারি) পূর্ণ বিকাশ চাকমা বলেন, পানির জন্য হাহাকার চলছে। একটি পাতকুয়া থেকে সবাই পানি ব্যবহার করছে। উপায় নেই। ঋতু পরিবর্তনের সময় ডায়রিয়া হয়। কিন্তু এটা পানির কারণে হয় কি না, তা বলতে পারবেন না।
চিকিৎসকেরা জানান, পানির সংকট বেড়ে গেলে ডায়রিয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা দেয়। পানিতে ইকোলাই ও কলিফর্ম থাকার কথা স্বীকার করেছেন সিভিল সার্জন বিপাস খীসা, শুধু ঝিরি নয়, হ্রদের পানিতেও কলিফর্ম রয়েছে। মাঝেমধ্যে ডায়রিয়া রোগী বেশি পাওয়া যায়।
রাঙামাটির জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। এখানে পানিসংকট বেশি বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন, বরকল উপজেলার মাঝিপাড়া, জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলী, কাপ্তাই, লংগদু ও কাউখালীর দুর্গম এলাকায়।
জেলাটির এক পাশে বিশাল কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদের পানি পরিশোধন করে সদর উপজেলার পৌর এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহককে সরবরাহ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
সংস্থাটির নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে বলেন, ‘বিভিন্ন পাহাড়ে পাথরের জন্য নলকূপ বসানো কঠিন হয়। এ ছাড়া পানির স্তর পাওয়া যায় না। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে ২৬টি করে নতুন নলকূপ বসানোর কাজ চলছে দুই বছর ধরে। আমরা পানি ফুটিয়ে পান করার জন্য বলে আসছি।’
বান্দরবানে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব:
রাঙামাটির মতো বান্দরবানের পানি নিয়ে গবেষণা হয়নি। তাই দূষণের বিষয়টি জানা যায়নি। তবে লামা উপজেলার প্রত্যন্ত রূপসীপাড়া ইউনিয়নের মিনতুই ও পমপং ম্রো পাড়ায় এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ঘরে ঘরে ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মিনতুই পাড়ার এক ব্যক্তি মারা যান।
এ পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত এলাকাটিতে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করতে হয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে। সিভিল সার্জন নীহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ঝিরির দূষিত পানি খেয়ে এ অবস্থা হয়েছে। ওখানে কোনো অগভীর নলকূপ নেই। মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর মলমূত্র নানা কারণে মিশে ঝিরির পানি দূষিত হতে পারে।
বান্দরবানের সদর উপজেলা, লামা, আলীকদম ও থানচিতে পানির তীব্র সংকট হয়। সদরের চিম্বুকের থাতংপাড়ায় সম্প্রতি দেখা যায়, পাহাড় থেকে নেমে এক কিলোমিটার দূরের একটি ছোট ঝিরিতে পানি আনতে যান দুই নারী তানলিয়াং ম্রো ও পাইংপাও ম্রো।
তানলিয়াং বলেন, সকালে দেড় ঘণ্টা পানি আনতে লাগে। এরপর আবার দুপুরে গোসল করতে গেলে আরও দেড় ঘণ্টা। সময় ও শক্তি দুই-ই শেষ হয়ে যায়।
পাইংপাও বলেন, গোসল করে পাহাড় ডিঙিয়ে ঘরে যেতে যেতে আবার গোসল করা হয়ে যায় ঘেমে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সহকারী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম জানান, তাদের প্রায় ১ হাজার ১৬০টি পানির উৎস চালু রয়েছে। পাথর ও পানির স্তর না পাওয়ার কারণে অনেক পাহাড়ে নলকূপ বসানো যায় না।
খাগড়াছড়িতে শিক্ষার্থীরাও কষ্টে:
খাগড়াছড়িতে স্কুলশিক্ষার্থীরাও পানির কষ্টে রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ৫৯৩টি বিদ্যালয় রয়েছে। ৬০ শতাংশ স্কুলে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলো নিজেরা স্থানীয়ভাবে পানির ব্যবস্থা করে।
পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি ইউনিয়নের রোহিন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের গ্রামে কোনো পানির উৎস নেই। স্কুল থেকে দূরে আরেকটি পাহাড় ডিঙিয়ে বিদ্যালয়ের ৬৩ শিক্ষার্থীকে পানি পান করতে যেতে হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
খাগড়াছড়ির পাঁচটি বিদ্যালয়ে নলকূপ বসিয়ে দিয়েছে শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি সামাজিক সংগঠন। নলকূপ বসাতে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতাও হয়েছে সংস্থাটির।
সংস্থার সমন্বয়ক নবলেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, ‘ভাইবোন ছড়ার হামাচংপাড়ায় পানির নলকূপে জন্য আমরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে টাকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা চেষ্টা করে জানাল ৪০০ ফুটেও পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আমরা নিজ উদ্যোগে ২৪০ ফুটে পানি পেয়েছি। তাহলে এখানে জনস্বাস্থ্যের ঠিকাদার কিংবা অন্য কারও গাফিলতি রয়েছে।’
জেলার মানিকছড়ি, গুইমারা, রামগড়, মাটিরাঙা, পানছড়ি দীঘিনালাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা গেছে। মানিকছড়ি উপজেলার ফকিরনালা এলাকার ম্রাচাপাড়ার বাসিন্দা জুলি মারমা। পানি আনতে তাঁকে আধঘণ্টা পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়। বাড়ি থেকে দূরে একটি পাতকুয়া রয়েছে। সেখান থেকে আনতে হয় খাওয়ার পানি। তবে এপ্রিলের শেষের দিকে সেটা অনেকটা শুকিয়ে যায়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাবে খাগড়াছড়িতে বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার পাতকুয়া ও নলকূপ রয়েছে।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী রেবেকা আহসান বলেন, ‘সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমরা বলি ৭৮ শতাংশ মানুষ পানি পাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। ১০ পরিবারের জন্য যেখানে একটি নলকূপ দেওয়া হচ্ছে, দেখা গেল পাহাড়ি দূরত্ব ও দুর্গমতার কারণে সবাই এর সুবিধা পাচ্ছে না। আবার পানির উৎস প্রায় পাঁচ হাজার ধরা হলেও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু নষ্ট হয়ে আছে।’
এখানকার পানি নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। এদিকে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা। জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির ডেপুটি সিভিল সার্জন মিটন চাকমা বলেন, ঝিরির পানি অনেক ক্ষেত্রে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ফুটিয়ে না খেলে ডায়রিয়া হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। সংকটের সময় বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
প্রতিবছর সংকট, সমাধানে উদ্যোগ কম:
প্রতিবছর পাহাড়ের পানিসংকট হলেও তা সমাধানে সরকারি সংস্থা কার্যকর উদ্যোগ কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পানিসংকটের কারণে পাহাড়ের লোকজনের কিডনি, মূত্রনালির সংক্রমণ, চর্মরোগ এবং ডায়রিয়ার মতো রোগ হচ্ছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি চট্টগ্রামের সদস্যসচিব ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, পানির সাশ্রয় করতে গিয়ে পাহাড়িরা ঠিকমতো পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিতে পারে না। এতে চর্মসহ নানা রোগে ভুগতে হয়। পাশাপাশি পানি সংগ্রহের জন্য নষ্ট হয় নিজেদের কর্মঘণ্টা। তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা করে যদি একেক এলাকায় একেক ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে পানিসংকটের সমাধান সম্ভব। যেমন গভীর নলকূপ, বৃষ্টির পানি ধরে রাখা, বড় কুয়া তৈরি কিংবা পাম্প দিয়ে পানি দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে সংকটের সমাধান ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে আসবে।
সূত্র: প্রথম আলো
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, বান্দরবান, জয়ন্তী দেওয়ান, খাগড়াছড়ি ও সাধন বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি)