parbattanews

এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’

বান্দরবান শহরের রেস্তোরাঁয় মদ চেয়ে না পেয়ে হামলার যে অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মংনেথোয়াই মারমা। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি বলেছেন, ‘ওই রেস্তোরাঁয় মদ বিক্রি হয় না। কেন আমরা সেখানে মদ কিনতে যাবো? এটি আমাদের বিরুদ্ধে তাদের মিথ্যা অভিযোগ। মদ খেতে নয়, সেখানে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লার এএসপি মংনেথোয়াই মারমা ও তার স্ত্রীর বাড়ি বান্দরবান শহরে। নববর্ষের ছুটিতে কুমিল্লা থেকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন তারা। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শহরের মধ্যমপাড়া এলাকার তোহজাহ রেস্তোরাঁয় মদ চেয়ে না পেয়ে মংনেথোয়াই মারমা ও তার স্ত্রী হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এতে রেস্তোরাঁর মালিক, তার স্ত্রী ও শিশুসন্তানসহ পাঁচ জন আহত হন।

ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে এএসপি মংনেথোয়াই মারমা বলেন, ‘আমি, আমার স্ত্রী ও শ্যালক ওই রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেতে যাই। তখন রেস্তোরাঁর মালিক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। আমরা তার কাছে বসার আসন চাইলে খারাপ ব্যবহার করে বলেন, খাইলে খান; না খাইলে চলে যান। পরিবার সঙ্গে থাকায় বিষয়টি সম্মানে লেগেছে। তাই আমরা ফিরে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমার ফোনে কল আসায় কথা বলতে বলতে দরজার সামনে চলে আসি। স্ত্রী ও শ্যালক আমার পেছনে ছিল। বের হওয়ার পথে তাদের সঙ্গে আবারও খারাপ ব্যবহার করেন রেস্তোরাঁর মালিক। এ নিয়ে প্রতিবাদ করে স্ত্রী ও শ্যালক। তখন দুই পক্ষের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সুযোগে স্ত্রী ও শ্যালকের ওপর হামলা চালান মালিক ও তার স্বজনরা। এলোপাতাড়ি কিলঘুষি দিতে থাকলে আমি থামাতে যাই। তখন আমার গায়েও ঘুষি লাগে। তখন বান্দরবান সদর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর আমরা সেখান থেকে চলে আসি। এরই মধ্যে মদ চেয়ে না পেয়ে হামলার অভিযোগ তুলেছেন রেস্তোরাঁর মালিক। বিষয়টি শোনার পরই স্থানীয়ভাবে সমাধান করতে চেয়েছি। সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে দুই পক্ষ বসে বিষয়টি মীমাংসা করেছি। এখানে মদের যে অভিযোগ তারা তুলেছেন, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

একই কথা বলেছেন বান্দরবা‌নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী। তিনি ব‌লেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি আজ পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধান করা হয়েছে।’

তবে তাদের এই দাবি অস্বীকার করে রেস্তোরাঁর মালিকের ভাই জসাই মারমা বলেন, ‘জেলা পরিষদে আধা ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তারা সমাধানের জন্য চাপ দিয়েছেন আমাদের। কিন্তু সমাধান হয়নি। আপসের কথা বলেছিলেন তারা। আমরা বিচার চেয়েছি। এ অবস্থায় সেখান থেকে চলে এসেছি। তবে বিচার না পেলে আদাল‌তে মামলা করবো আমরা।’

রেস্তোরাঁর মালিক শোয়েসাই মং বলেন, ‘আমাদের অভিযোগ মিথ্যা নয়; রেস্তোরাঁয় অনেক অতিথি ছিলেন। তারা পুরো ঘটনা দেখেছেন। রাত ৯টার দিকে এএসপি মংনেথোয়াই মারমা, তার স্ত্রীসহ চার জন রেস্তোরাঁয় ঢুকে ভাতের সঙ্গে মদ দিতে বলেন। আমি বলেছি, মদ নেই। আশপাশের কোথাও খোঁজ নিতে। এতে রেগে যান এএসপি ও তার স্ত্রী। তখন বাধ্য হয়ে বলেছিলাম, আধা ঘণ্টা সময় দিলে এনে দেবো। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এএসপির স্ত্রী বলেন, ‘আমি এএসপির বউ, মদ এখনই দিতে হবে। না দিলে বান্দরবানের পুলিশ সুপারকে বলে আজীবনের জন্য দোকান বন্ধ করে দেবো’—এই কথা বলেই হইচই শুরু করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর শুরু করেন তারা। এতে আমার স্ত্রীর কোলে থাকা শিশুটি মাটিতে পড়ে আহত হয়। আমাদের ছেড়ে দিতে এএসপির স্ত্রীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চান বৃদ্ধা মা পাইনুচিং। তবু শান্ত হচ্ছিলেন না। খবর পেয়ে আমার ভাই খিংসাই মং এসে মারধর থামাতে গেলে তাকেও ঘুষি মেরে আহত করা হয়। শেষে দোকানের অতিথি ও স্থানীয়দের অনুরোধে রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে যান তারা। এ ঘটনায় আমি, আমার স্ত্রী উম্যাশৈ, দুই বছরের সন্তান উখ্যাই, ভাই খিংসাই মং ও মা পাইনুচিং আহত হয়েছি। আমরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এটা পুলিশের কোনও ইস্যু নয়। ওই পুলিশ কর্মকর্তা সিগারেট খায় না, ড্রিংকসও করে না। আমার ধারণা তাকে ফাঁসাতে স্থানীয় একটি পক্ষ এসব মিথ্যা ঘটনা রটিয়েছে। শুনেছি, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। যদি মীমাংসা হয়ে যায় তাহলে তো কথা নেই। যদি না হয়, বিষয়টি আমরা দেখবো।’

Exit mobile version