parbattanews

এক স্কুলকে ঘিরে ৩টি ইটভাটা, শ্বাস কষ্টে ভুগছে শতশত শিক্ষার্থী

Rowangchari pic 22.02

রোয়াংছড়ি প্রতিনিধি :

রোয়াংছড়ির তারাছা ইউপি’র ছাইঙ্গ্যা অঞ্চলে প্রভাবশালী ও সরকার দলীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে ৩টি  ইটভাটা। গত ৩/৪ বছর ধরে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে মূল্যবান কাঠ কেটে জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে এসব ইটভাটায়। অন্যদিকে তিনটি ইট ভাটার মাঝ খানে ৫০ গজে ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে তিনশ কোমলমতি শিক্ষার্থী অসস্থিতে আছে।

ইটভাটাগুলোর চিমনি থেকে নির্গত দূষিত ধোঁয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের শ্বাস কষ্ট ও অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে অভিভাবকদেরও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অপরদিকে পার্শ্ববর্তী বন বিভাগের সংরক্ষিত বনের সেগুন, গামার, মেহগনিসহ মূল্যবান কাঠ কেটে জ্বালানো হচ্ছে ইট ভাটাগুলোতে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার গণ্যমান্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বান্দরবানে সরকার দলীয় নেতা প্রভাবশালী  আব্দুর রহিম চৌধুরী’র মেয়ের জামাই মোহাম্মদ নুরুল, পাহাড়িকা আবাসিক হোটেলের মালিক উজ্জ্বল কান্তি দাশ ও মোহাম্মদ মিলন সরকারি বিধিবিধানকে তোয়াক্কা না করে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ পন্থায় ইট ভাটাগুলোতে সংরক্ষিত বনের কাঠ কেটে পোড়ানো হচ্ছে।

তিনটি ইট ভাটা মাঝ খানে ৫০ গজের মধ্যে ছাইঙ্গ্যা সরকারি প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক উন্নীত বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের ৫০ গজেরও অদূরে দক্ষিণ প্রান্তে আব্দুর রহিমের জামাতা নুরুল, ঠিক উত্তরে মোহাম্মদ মিলন এবং পূর্বে দিকে উজ্জ্বল কান্তি দাশের ইট ভাটায়  চিমনি থেকে প্রচুর ক্ষতিকারক ধোঁয়ায় নির্গত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা শ্বাস কষ্টে ভুগছেন। প্রতিনিয়ত ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা ও শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে পাঠ দানও ব্যাহত হচ্ছে।

ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ সরবরাহকারী শ্রমিক ফোরকান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত তিনটি ইটভাটায়  জ্বালানি কাঠ সরবরাহ করে আসছেন। উপজেলা বন বিভাগের সংরক্ষিত বাগান হতে কাঠ কেটে আনার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, জ্বালানি কাঠের জন্য কোন অনুমোদন লাগে বলেও তার জানা নেই। তাছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনকে ইটভাটার মালিকরা ম্যানেজ করেন। জ্বালালি কাঠ বহনকারী গাড়ি চট্টমেট্রো-ট-১১-১৯০৭ এর ড্রাইভার মো. দুলালও একই কথা বলেন।

ওই বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সকলেই প্রায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ইটভাটায় নির্গত ধোঁয়ার কারণে প্রচুর শ্বাস কষ্টে ভুগছি। ধোঁয়া ও ধুলাবালি কাপড়-চোপড়ও নষ্ট হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক সুনীতি বড়ুয়া বলেন, স্কুলের পাশে ৩টি ইটভাটা থাকাতে এখানে যারা আছে সবাই শ্বাস কষ্টে ভুগছে। আমি নিজেই একজন রোগী। প্রতিদিন ৪০-৫০টি গাড়ি যাতায়াতের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসাও বিপদজনক হয়ে উঠছে। কয়েক দিন পূর্বেও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের পাঠাতে অভিভাবকগণও শঙ্কিতবোধ করছেন। বিষয়টি ইতোমধ্যে বিদ্যালয় পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহিত করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা করা হয়নি।

এসএমসি সভাপতি আইয়ব আনসারি বলেন, এ বিদ্যালয়ে যথেষ্ট ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। কিন্তু দৈনিক ইটভাটার গাড়ি বেপরোয়া যাতায়াতের কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আসছেন না। কদিন আগে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একজন ছাত্রী  মারা গেছেন। স্কুলে এলেও ছাত্ররা শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে ধুলাবালি ও ধোঁয়ার কারণে। এব্যাপারে স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে কয়েক বার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হচ্ছে, কোন সুরাহা হয়নি।

ইট ভাটা ম্যানাজার দিনো, জামাল উদ্দীন, আবুতৈয়ব বলেন, এখানে দৈনিক প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তার মধ্যে ১০-১২ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক ৮ জন আছে। সরকারি অনুমতিপত্র আছে কিনা তা তারা জানেন না।

যোগাযোগ করা হলে উজ্জ্বল কান্তি দাশ বলেন, ইটভাটার স্থাপনের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু অনুমতি পত্র এখনো পাইনি। তাই হাইকোর্টে রিট করেছি। যতদিন ডিসি সাহেব লাইসেন্স দিতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত হাইকোর্টের রিট নিয়ে কাজ করতে পারব।

মোহাম্মদ মিলন মুঠোফোনে বলেন, পাহাড়িকা আবাসিক মালিক উজ্জ্বল দাদার সাথে যোগাযোগ করুন তিনি আপনাদের, সাংবাদিককে ম্যানেজ করবেন। এব্যাপারে জানতে চেয়ে উপজেলার শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। রোয়াংড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দাউদ হোসেন চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ডিসি অফিসের ট্রেনিং-এ আছি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

Exit mobile version