parbattanews

ঔপনিবেশিক আইনের কারণে খাগড়াছড়িতে কোটি কোটি টাকার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঔপনিবেশিক আইনে ফাঁক গলিয়ে খাগড়াছড়িতে প্রতি বছর কৌশলে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার আয়কর। ব্রিটিশ সরকার প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি-১৯০০ এ প্রদত্ত উপজাতীয়দের সুযোগ অপব্যবহার করছে বাঙালিরা ঠিকাদাররা। এই আইনে উপজাতীয়দের আয়কর মুক্ত রাখা হয়েছে। এই সুবিধা নিচ্ছে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার বাঙালী ঠিকাদারেরা।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক ঠিকাদার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই আইনকে বৈষম্যমূলক ও অপ্রাসঙ্গিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, যে প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার এই আইন করেছিল তার প্রেক্ষাপট এখন অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার তাদের শাসন, শোষণ ও দখলদারিত্ব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এই আইন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ এ আইন অচল। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন আর আগের মতো পিছিয়ে নেই। তাই সকলকে সমভাবে আয়করের আওতায় আনা উচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উপজাতীয় ঠিকাদারদের লাইন্সেস দিয়ে সমতলেও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিযোগিতা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজাতীয়দের লাইন্সেস ব্যবহার করার কারণে বাঙালি ঠিকাদাররা সাময়িক লাভবান হলেও বাঙালিদের লাইন্সেসের কার্যক্ষমতা হারাচ্ছে।

অপরদিকে আয়করের অফিস না থাকায় খাগড়াছড়ির বৈধ ও যোগ্য করদাতারা হয়রানীর শিকার হচ্ছে। ফলে সক্ষম ব্যক্তিরাও আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে।

খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, জেলা পরিষদ, গণপূর্ত বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পৌরসভা, সড়ক বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি- ১৯০০ অনুযায়ি পাহাড়িরা আয়কর আওতামুক্ত। আর সে সুযোগটি কৌশলে ব্যবহার করছে বাঙালি ঠিকাদাররা। বাঙালি ঠিকাদাররা নিজের লাইন্সেস ব্যবহার না করে পাহাড়িদের লাইন্সেস ব্যবহার করে আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে। এতে করে পাহাড়িরা কোনো কাজ না করেই ঘরে বসে ২%-৩% লাভ ঘরে নিচ্ছে। ঘরে বসেই তারা লাখপতি, কোটিপতি হচ্ছে। সম্প্রতি লাইসেন্স ব্যবহার করার লভ্যাংশ থেকে খাগড়াছড়ির এক উপজাতীয় ব্যবসায়ীকে ৩০ লাখ টাকার গাড়ি উপহার দিয়েছে বাঙালী এক ঠিকাদার।

অভিযোগ, বছর দুয়েক ধরে খাগড়াছড়ি জেলার কতিপয় বাঙালী ঠিকাদার আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন উপজাতীর ঠিকাদারের লাইন্সেস ব্যবহার করে সমতলে সারা দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ভাগিয়ে নিচ্ছে। আয়করের আওতামুক্ত থাকায় লো প্রাইসে বিড করে সহজেই তারা সমতলের ঠিকাদারদের হারিয়ে কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছেন।

উপজাতীয় ঠিকাদার অনিমেষ দেওয়ান নন্দিত বলেন, আমরা অনগ্রসর জাতি হিসেবে বৃটিশ সরকারের আমল থেকে আয়করের আওতামুক্ত। তবে অপর উপজাতীয় ঠিকাদার খনি রঞ্জন ত্রিপুরার মতে, দেশের স্বার্থে সবাইকে আয়করের আওতায় আনা প্রয়োজন। কারন এখন পাহাড়িরা আর অনগ্রসর নয়।

খাগড়াছড়ি জেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো: জসিম উদ্দিন মজুমদার এটাকে দূর্নীতি সাথে তুলনা করে বলেন, আয় করলে কর দিতে হবে এমন নিয়ম থাকলেও খাগড়াছড়ি জেলা তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্বৈত নীতির কারণে ঠিকাদাররা লাভবান হলেও সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল বলেন, আয়করের অফিস না থাকায় খাগড়াছড়ির করদাতারা হয়রানীর শিকার হচ্ছে। সক্ষম ব্যক্তিরাও আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে।

খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহউদ্দিন চৌধুরী জানান, তার দপ্তরে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় ঠিকাদাররা অংশ নিয়ে থাকেন। তবে কে কার লাইন্সেস ব্যবহার করছে তারা জানা নেই।

খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্টু বলেন, বৃটিশের ১১৬ বছরে দ্বৈত বিধির কারণে শুধু আয়কর নয়, এ অঞ্চলের মানুষ সর্বক্ষেত্রে মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আইনের অপব্যবহার করে কেউ আয়কর ফাকি দিচ্ছে কিনা মনিটরিং প্রয়োজন।

তবে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আয়কর প্রদানের সক্ষম সকলকে আয়করের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।

Exit mobile version