কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটনস্পটে শিশু নিখোঁজের ঘটনা বাড়ছে


কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের মধ্য থেকে দলছুট হয়ে শিশুদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা শঙ্কায় ফেলেছে ভ্রমণপ্রেমী অভিভাবকদের। বিশেষ করে দেশীয় পর্যটনের সবচেয়ে বড় গন্তব্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে গিয়ে শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি, যা পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তাদেরও দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোসহ সঙ্গের শিশুদের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
২ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান কার্যালয়ের তথ্য নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ মাসে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে দলছুট হয়ে নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা ছিল ৪৪৩ জন। যাদের উদ্ধার করে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটটি। এর মধ্যে গত ৯ মাসে শুধু কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ ১৬০ শিশুকে উদ্ধার করেছেন তারা।
ট্যুরিস্ট পুলিশের মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার ফুয়াদ সাকিব এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশের বিভিন্ন পর্যটনস্পটে ভ্রমণপ্রেমীদের সঙ্গে থাকা শিশুদের দলছুট বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ভ্রমণ আনন্দকে একেবারে বিষাদে পরিণত করে। অনেক সময় পর্যটকদের মধ্যে ভ্রমণ বিষয়ে নেতিবাচক ধারণাও তৈরি হয়। তবে এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় সতর্ক ও তৎপর। হারানো শিশুদের উদ্ধার করে অভিভাবক বা মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া পেশাদারিত্বের অংশ। তবে টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদ বা বড় কোনো উৎসবের ছুটিতে সৈকতে যখন পর্যটকদের ঢল নামে তখন শিশু নিখোঁজের ঘটনা বেড়ে যায়।
মিডিয়া সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট থেকে হারিয়ে যাওয়া ৩৭১টি শিশু উদ্ধারের পাশাপাশি ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে টুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুরা অনেক বেশি কৌতূহলী। সেই সঙ্গে তারা অনেক বেশি দুরন্ত ও ডানপিটে। নতুন জায়গায় গেলে তারা আরও বেশি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। সেজন্যই তারা দলছুট হয়ে যায়। তবে এসব ব্যাপারে অভিভাবকদের আগে সচেতন হতে হবে। শিশুদের নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।
জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইপিজি মো. মাইনুল হাসান প্রতিবেদককে বলেন, এরকম প্রায় হাজারের বেশি ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। আমরা যখন কোনো শিশুকে খুঁজে পেয়ে পরিবারের কাছে তুলে দিই, সেই আবেগময় মুহূর্ত অসাধারণ হয়ে ওঠে। ভ্রমণকে নিরাপদ করার পাশাপাশি পর্যটকদের অভিজ্ঞতাকে নির্বিঘ্ন করতে নিরলসভাবে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজার সৈকতে যে হারে শিশু হারিয়ে যাচ্ছে এজন্য শিশু উদ্ধারে আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের আলাদা টিম করেছি। এছাড়া সৈকতে ২৭টি সিসিটিভি ক্যামেরাও আছে। এর মধ্যে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং করেন একজন অফিসার। তাও শিশুদের ওপর। এই স্পেশালাইজ মনিটরিংয়ের কারণে লাখ লাখ মানুষের মধ্য থেকে শিশুদের উদ্ধার করে বাবা-মায়ের কাছে দিতে পেরেছি। এর মাধ্যমে উদ্ধারকাজও সহজ হয়। এছাড়া বাইনোকুলারের মাধ্যমে শিশুদের ওপর আমরা নজর রাখি। যে শিশুটি দলছুট হয়ে যাচ্ছে বা কান্নাকাটি করে ঐ শিশুটাকে আমাদের টিম গিয়ে উদ্ধার করে। তিনি বলেন, আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি, শিশু হারালে এবার অভিভাবকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে, শিশুদের প্রতি উদাসীনতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করা হবে। থানায় মুচলেকা দিয়ে তবেই শিশুকে কাছে পাবেন অভিভাবক।
প্রসঙ্গত, সারা দেশের প্রায় দেড় হাজার স্কট পর্যটন স্কটে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় গত ২০১৩ সালে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট টুরিস্ট পুলিশ গঠন করা হয়। বর্তমানে ঢাকা (ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম), খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী (রংপুর) এই চার বিভাগের ১১টি অঞ্চলে সেবা দিচ্ছে টুরিস্ট পুলিশ। তবে পর্যটকের অনুপাতে টুরিস্ট পুলিশের জনবল খুব কম হওয়ায় নানা সংকট দেখা দিচ্ছে।
















