কক্সবাজারের চৌফলদন্ডীতে গাছে বেঁধে গৃহবধূ নির্যাতনের ঘটনায় ইউএনও’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন

fec-image

কক্সবাজারের চৌফলদন্ডীতে গৃহবধূকে রাস্তায় গাছে বেঁধে নির্যাতনের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রকাশের পর অবশেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার সুইটি।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের খামারপাড়ায় পৌঁছেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চৌফলদন্ডী চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুলসহ কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় মান্যগণ্য লোকজন।

ওই সময় ভিকটিম নুর আয়েশা তার উপর বিগত ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখ একদল চিহ্নিত দূর্বৃত্ত কর্তৃক গভীর রাতে শীতের মধ্যে রাস্তার গাছের সাথে বেঁধে চলানো অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এছাড়া যার আশকারায় এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে সাংবাদিকদের নিকট ভিকটিম নুর আয়েশা ও তার স্বামী অভিযোগ করেছে, সেই ওয়ার্ড মেম্বার মোহাম্মদ মিয়া জঙ্গি ও অপর সংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তদের বক্তব্যও শুনেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ।

চেয়ারম্যান ওয়াজ করিম বাবুলের সাথে যোগাযোগ কারা হলে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভিকটিম ও নির্যাতনে জড়িতদের সাথে কথা বলেছেন, তবে ঐদিন নুর আয়েশার সাথে জাগির হোছন নামের যে লোককে গাছের সাথে বাঁধা হয়েছিল, রহস্যময় কারণে সে উপস্থিত ছিলনা।

চেয়ারম্যান আরো বলেন, এত বড় একটি ঘটনার একমাস অতিবাহিত হলেও মেম্বার বা চৌকিদার কেউ তাকে অবহিত করেনি। কেউ অপরাধ করলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার প্রতিকার দিতে অক্ষম হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান হিসেবে পরিষদে চেয়ারম্যানের নিকট সমর্পণ করবেন অথবা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করবেন।  সংঘটিত ঘটনায় এ দু’টির কোনটিই করা হয়নি । কিন্তু একজন মায়ের জাত নারীকে অপরাধীর অজুহাতে এভাবে রাস্তার গাছে বেঁধে শীতের রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানী করা মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয় কি! সুতরাং প্রচলিত দেশিয় আইন অনুযায়ী নির্যাতনে জড়িতরা অপরাধী। এদের শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিনিসহ ভিকটিম ও নির্যাতনকারী পক্ষদ্বয়কে মঙ্গলবার উপজেলায় ডেকেছেন মিমাংসা করে দিতে ।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার সুইটির সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, তিনি ভিকটিম ও নির্যাতনে জড়িতদের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন এবং মঙ্গলবার চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ উভয় পক্ষকে উপজেলায় ডেকেছেন। দেরিতে হলেও নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ভাইরালের সূত্র ধরে গণমাধ্যমে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসনের টনক নড়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।

তবে সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রকাশ্যে শীতের রাতে একজন নারীর উপর চালানো এ অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা দেশীয় প্রচলিত আইনকে পাশ কাটিয়ে কৌশলে যেন তেন ভাবে ধামাচাপা দিতে জড়িত দূর্বৃত্তচক্রের পক্ষ হয়ে মোটা অংকের লেনদেন মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী ।

তাদের দাবি, পাশবিক এ নির্যাতনের ঘটনা প্রচলিত আইনকে পাশ কাটিয়ে এ ঘটনার মিমাংসা করা যায় কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদি এভাবে দূর্বৃত্তচক্র কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে এ ঘটনা যেনতেন ভাবে মিমাংসার নামে ধামাচাপা দিলে আগামীতে আরো এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

ভিকটিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বাড়িতে এসে, তাকে নির্যাতনের ঘটনা শুনেছেন এবং তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বলেন, ঘর ছাড়া হওয়ার এক মাস পর যখন বাড়ি ফিরেন, পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার ঘরের দরজায় মল নিক্ষেপ করেছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চলে যাওয়ায় পর, তাকে নির্যাতনে জড়িত অন্যতম অপরাধী কবির আহমদ আয়েশাকে বিচার দাবি করায় ঘর এবং এলাকা ছাড়া করে জুতার মালা পরানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। যা ভিকটিম মোবাইলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এতে ভিকটিম ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং তিনি সংঘটিত ঘটনার সুষ্ট বিচার দাবি করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন