parbattanews

কক্সবাজারের ফুলছড়ি ও খুটাখালী বনের ছড়াখাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে জনপদ

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি ও খুটাখালীর সংরক্ষিত বনের ভেতরের ছড়াখাল ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তারা মানছে না নিয়ম নীতি।

বালুভর্তি ট্রাকে ভরে পাচার করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গর্জন, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তাতে হাত রয়েছে বন রক্ষকদের।

এতে একদিকে পরিবেশ-প্রতিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ অবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে ছড়াপাড়ের বাসিন্দা, এলাকার বসতবাড়ি, সামাজিক বনায়নসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে নুর মোহাম্মদ পেটান, আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম। তাদের সঙ্গে বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সখ্য রয়েছে। যে কারণে বেশ কয়েকবার অভিযানের পরও থামছে না তারা।

অবশ্য বন বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, যে স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, সেখানে দ্রুত যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। জনবলও সংকট। যে কারণে অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে বন এলাকা থেকে বালু তোলা ও বনের গাছ কেটে পাচারে জড়িতদের কাছ থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা পান।

অভিযানের আগেই তাঁদের মাধ্যমে খবর পেয়ে যায় বালু দস্যুরা। পালিয়ে যেতে সহজ হয় তাদের।

লোক দেখানো অভিযানে কাউকে আটক করা যায় না। অভিযান শেষ করে চলে আসার পরপরই আবার বালু উত্তোলন শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের অধিন ফুলছড়ি বনবিট ও খুটাখালী বন বিটের চড়িবিল, হরইখোলা, খেশাহলা, টিপডেবা, গোলডেবা,বাগাইন্ন্যা পাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার মহোৎসব চলছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, অন্তত ৫০টি শক্তিশালী শ্যালো মেশিন (ড্রেজার) বসিয়ে ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে আশপাশের এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বিপন্ন হয়ে পড়েছে সামাজিক পরিবেশ। হুমকির মধ্যে রয়েছে জীববৈচিত্র্য। শুধু ফুলছড়ি ও খুটাখালী বন বিটের জীববৈচিত্র্যই নয়, অব্যাহত বালু উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, সামাজিক বনায়ন, সেগুন বাগিচা, মধুশিয়ার শত বছরের গর্জন বাগানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটছে। বিগত সময়ে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে পাহাড় ভেঙে বালু নেমে এসে ছড়া ভরাট হয়ে যায়। তাই এখনই বালু উত্তোলন ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে কাঠ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এলাকাবাসীকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, খুটাখালী ছড়ায় অন্তত ৩০টি পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা অব্যাহত রয়েছে।

এ কারণে ঢলের পানি চলাচলের একমাত্র ছড়াটি এখন ক্ষতবিক্ষত। অন্যদিকে প্রতিদিন এসব বালু পরিবহনের সময় ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে পুর্বপাড়া, ছড়িবিল, হরইখোলা সড়ক বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

দেখা গেছে, ফুলছড়ির সংরক্ষিত বনের আকাশমণি গাছ কেটে অসংখ্য বসতি তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। একইভাবে কেটে পাচার করা হয়েছে মধুশিয়া, ফাণ্ডাছড়ি, মহিষের কাটা এলাকার শত শত গর্জন গাছ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু উত্তোলনকারী এক প্রভাবশালী দাবি করেন, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছেন তাঁরা। তাই এসব নিয়ে কেউ অভিযোগ বা অন্য কিছু করলে কিছুই যাবে-আসবে না।

বালু মহালের ইজারাদার ও অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ পেটানের মোবাইলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, বন এলাকা থেকে যারা বালু উত্তোলন ও পাচার করছে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অাইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Exit mobile version