কক্সবাজারের মহেশখালীতে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর জয়

78819_1

নিজস্ব প্রতিনিধি, কক্সবাজার:

কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীবাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। তারা দল সমর্থিত কোনো প্রার্থীর পক্ষে রায় দেননি। এর মধ্যে চমক করার মত হলো উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। অথচ এই দলটিকে সংগঠিত এবং দলীয় কোন্দলমুক্ত বলা হয়ে থাকে।

শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হোসাইন ইব্রাহিম। তিনি ৩৬ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে ৫ হাজার ৫৯২ ভোট কম পেয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিব উল্লাহ। তিনি পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭৮১ ভোট।

চেয়ারম্যান পদে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি পেয়েছেন ২১ হাজার ৩৩১ ভোট। তবে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরীকে ভোটের মাঠে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৭৩১ ভোট।

নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর বিদ্রোহী প্রার্থী মাওলানা জহির উদ্দিন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহানারা জাহাঙ্গীর বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে মাওলানা জহির উদ্দিন ৩১ হাজার ৭০২ ভোট ও জাহানারা জাহাঙ্গীর ৪১ হাজার ২৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আনোয়ারুল নাসের কেন্দ্রওয়ারি ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এবার মহেশখালী উপজেলায় ৬৮টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিজের ভাতিজা হাবিব উল্লাহকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে চেয়ারম্যান প্রার্থী করায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া হোসাইন ইব্রাহিম দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে দলের উপজেলা আমির জাকের আহমদকে প্রার্থী করলেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়া জামায়াত নেতা মাওলানা জহির উদ্দিন ‘ব্যক্তিগত’ বিরোধের কারণে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে জামায়াতও জনপ্রিয়তার বিচারে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণের পর কেন্দ্রে কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তায় ভোটগণনা শুরু করা হয়। রাত ৮টার পর থেকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কেন্দ্রওয়ারি ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। ফলাফল ঘোষণার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর যথাক্রমে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমর্থিত প্রার্থী এগিয়ে থাকেন। কিন্তু ৪০ কেন্দ্র ফলাফল ঘোষণার পর থেকে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী পিছিয়ে পড়েন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আনোয়ারুল নাসের ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হোসাইন ইব্রাহিম ৩৬ হাজার ৩৭৩ ভোট, ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর বিদ্রোহী প্রার্থী মাওলানা জহির উদ্দিন ৩১ হাজার ৭০২ ভোট  ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জাহানারা জাহাঙ্গীর সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ২৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী ও উপজেলা জামায়াত আমির জাকের আহমদ। তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৮২৬ ভোট। এই পদে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাসান রাসেল। তিনি পান ১৬ হাজার ৮৪৪ ভোট।

নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থী শিরিন ফারজানা। তিনি পেয়েছেন ৩৫ হাজার ২৬১ ভোট। এই পদে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন শাকিলা আকতার। তিনি পান ২৩ হাজার ৪০২ ভোট।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন