parbattanews

কক্সবাজারের শালিক রেঁস্তোরায় কর্মচারীদের নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি, মালিকের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার শহরে অভিজাত ‘রেঁস্তোরা শালিকের’ নারীসহ চার কর্মচারিকে ‘নির্যাতন কক্ষে’ আটকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মালিকসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বাদীসহ ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রেঁস্তোরা মালিক একজন দুশ্চরিত্র প্রকৃতির লোক। নারী কর্মচারিরা তার কুপ্রস্তাবে রাজী না হলে যে কোন অজুহাত দেখিয়ে চালাতো অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। গত বুধবারও (১১ অক্টোবর) ছুটি নিয়ে নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়ার অজুহাতে রেঁস্তোরার টর্চার সেলে আটকে নারীসহ চার কর্মচারিকে মারধর এবং শ্লীলতাহানি চালানো হয়েছে।

এ নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় ভুক্তভোগী এক তরুণী বাদী হয়ে রেঁস্তোরা মালিকসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্তকাজ চালাচ্ছে।

গত বুধবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ৫ মিনিটের ছুটি নিয়ে মুচির কাছে সেলাই করতে দেওয়া জুতা আনতে যান আব্দুল্লাহ ও খালিদ নামের রেঁস্তোরাটির দুই কর্মচারি। এসময় সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে তাদের সঙ্গে দেখা হয় রেঁস্তোরাটির কিংসাই ও মংচিনু নামের অপর দুই নারী কর্মচারির। ওই দুই নারী কর্মচারিও অসুস্থতার কারণে ছুটিতে ছিলেন। পরে ওই দিনরাতে ৪ কর্মচারিকে ডাকেন রেঁস্তোরা মালিক নাছির। এসময় চারজনকেই ছুটি নিয়ে যথাসময়ে কর্মস্থলে না ফেরা এবং স্টাফ কোয়ার্টারে অবস্থান না করে বাহিরে ঘুরাঘুরি অজুহাতে প্রকাশ্যে বেদড়ক পেটানো হয়। এক পর্যায়ে রেঁস্তোরাটির বিশেষ একটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের উপর চালানো হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। শুধু তা-ই নয়, মারধরের এক পর্যায়ে নারী কর্মচারিদের শ্লীলতাহানিও করা হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনায় অভিযুক্ত রেঁস্তোরা মালিক ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবিতে শনিবার দুপুরে কক্সবাজার শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে হোটেল রেঁস্তোরা শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ। এতে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করেন।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক রুহুল কাদের মানিক জানান, এসময় নারী কেলেঙ্কারি ও মাদক কারবারিতে জড়িত রেঁস্তোরা মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি চাই। নয়ত বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দুঃখজনক মন্তব্য করে বাংলাদেশ রেঁস্তোরা মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল জানান, ঘটনাটি অবহিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সংগঠনের নেতারা কথা বলেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে শনিবার রাতে সংগঠনের জরুরি সভা আহবান করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী এক নারী কর্মচারি বাদী হয়ে রেঁস্তোরাটির মালিকসহ ৩ জনকে আসামি করে থানা এজাহার দিয়েছেন। পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে তদন্তকাজ চালাচ্ছে।

এদিকে নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে বেশ আলোচিত-সমালোচিত পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অভিজাত রেঁস্তোরাটি। আর রেঁস্তোরা মালিকের অল্পদিনে কোটিপতি হওয়া নিয়ে জনমুখে প্রচার রয়েছে অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য। এসব অপকর্মের কারণে পর্যটন শিল্পে জড়িতদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট মহলের।

Exit mobile version