কক্সবাজারে আসন্ন পৌর ও ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে কোণঠাসা আওয়ামী লীগ

30.01.2016_Matiranga Union Election NEWS Pic

নিজস্ব প্রতিনিধি: কক্সবাজারে আসন্ন পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জের সম্মুক্ষিণ হয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারনে। এই বিদ্রোহীদের ঠেকাতে নানামুখি তৎপরতা চালালেও কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলটির জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও হুশিয়ারি দেয়া হলেও ইতিমধ্যে দলটির মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হওয়া ১১ জন প্রার্থী বিদ্রোহ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

একজন ইউপি চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর ‘বিদ্রোহ’ দেখিয়ে দলীয় টিকিট পেয়েছেন। যার কারণে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হয়েছে। আর একারনে অনেকেই এই সুযোগ গ্রহণ করে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মনোনয়োন পত্র জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা মনে করছেন।

অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত প্রথম ধাপের তফসিল মতে, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ করা হবে আগামী ২২ মার্চ। এছাড়াও চকরিয়া ও মহেশখালী পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হবে ২০ মার্চ। উভয় নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো গত ২২ ফেব্রুয়ারি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এবারই প্রথম দলীয় মোড়কে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের টিকিট (মনোনয়ন) পেয়েছেন বর্তমান মেয়র মকছুদ মিয়া। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ইতিমধ্যে মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম ও তার ছোট ভাই মোহাম্মদ হামিদুল হক। সরওয়ার আজম উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সদস্য ছিলেন।

চকরিয়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন আলমগীর চৌধুরী। এ অবস্থায় দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদি। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় চাপের মুখে তিনি মনোনয়পত্র দাখিল করেননি।

অপরদিকে, প্রথম দফায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কক্সবাজারের ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয় এনামুল হককে। ওই ইউনিয়নে বিদ্রোহ করে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ উল্লাহ।

কালামারছড়া ইউনিয়নে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম উদ্দিন চৌধুরীকে। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত পাল্টে তারেক বিন ওসমান শরীফকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হোসাইন ইব্রাহিমের আপন ভাইপো ও সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত ওসমান গণির ছেলে। সেলিম উদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তারেকের কর্মী-সমর্থকরা ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এলাকায় কলা গাছ রোপণ করেন এবং বিক্ষোভ করেন। তারেক শেষ মুহূর্তে দলীয় মনোনয়ন পেলেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন কিনা তা এখনো অনিশ্চিত।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আলম। কিন্তু ওই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান মিয়া ও তার ভাই দিদার মিয়া। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে।

সাবরাং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সোনা আলীকে। সেখানে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুর হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

হ্নীলা ইউনিয়ে নৌকা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এসকে আনোয়ার। তার বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সাংসদ ও বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মো. আলীর ছেলে রাশেদ মোহাম্মদ।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নে দলীয় টিকিট পেয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফরিদুল আলম জুয়েল। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর চৌধুরী। তিনি টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আলম চৌধুরীর ছেলে।

কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুলতান হক কুতুবী। ওই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা সিরাজ উদ দৌলা।

এছাড়াও আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা নুরুচ্ছফাকে। কিন্তু সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা কাইয়ুম হুদা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘অনেকে আবেগের বশে, না পাওয়ার বেদনা নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আবার অনেকে আশা করেছেন, যাচাই-বাছাইয়ে মনোয়ন পাওয়া কোন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল হলে সে ক্ষেত্রে তারা সুযোগ পেতে পারেন। আমরা আশা করছি, শেষ পর্যন্ত কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন