কক্সবাজারে করোনা প্রতিরোধে সেনাবাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত

fec-image

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় চলছে লকডাউন। সরকারের ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গত ২৪ মার্চ থেকে দিনরাত কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার জেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার চারটি উপজেলাকে করোনা ভাইরাস মুক্ত রাখতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে ১০ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা নিরলস কাজ করে চলেছেন।

অন্যান্য দিনের মতো বুধবার(২৯ এপ্রিল) কক্সবাজারের ৬টি এবং চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় চরম বিপাকে পড়া কর্মহীন, দুস্থ ও অসহায় মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দিতে বাড়ি বাড়ি ছুটেছেন অকুতোভয় সেনা সদস্যরা।

তারা কোন রকম জনসমাগম না করেই নিজেদের রেশন বাঁচিয়ে চাল, ডাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী অসহায়দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দেন।

এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় উপস্থিত হয়ে যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। পাশাপাশি সাধারণ জনগোষ্ঠীকে মাইকিং করে নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বিবিধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানাচ্ছেন সেনাসদস্যরা।

কক্সবাজারের অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেনা চিকিৎসক, নার্সসহ সেনাসদস্যরা করোনা মোকাবিলায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারনে সড়কে জনসাধারণের চলাচল অনেকটা সীমিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেও বিভিন্ন প্রয়োজনে যারাই বাইরে বের হচ্ছেন তাদের প্রায় সবাইকে সেনাবাহিনীসহ অন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

পাড়া-মহল্লায় প্রয়োজনীয় দোকানের বাইরে যেসব দোকান-পাট খোলা হয়েছে, সেসব দোকান সেনাসদস্যরা বন্ধ করে দিচ্ছেন। চলমান রমজান মাসে প্রচণ্ড গরম আর রোদ-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সেনাসদস্যরা নিরলসভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছেন।

ইফতারীর সময়ে তারা রাস্তার কোন এক ফাঁকা স্থানে চটজলদি নিজেদের ইফতার ও নামায সেরে নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ছেন তাদের লক্ষ্যে। এছাড়া তারাবীহ নামাজ উপলক্ষে যেন বিশৃঙ্খলা এবং অতিরিক্ত জনসমাগম না হয় সেলক্ষ্যে সেনাসদস্যরা তাদের কর্মপরিধি আরো বৃদ্ধি করেছেন।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র হুমায়ুন কবীর তার মায়ের জন্য ঔষধ কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়ে ছিলেন। পথে দুইবার সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট ও টহলদলকে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরোও বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে তাতে আমরা গর্বিত। সেনাবাহিনী শহর থেকে গ্রামে, মাঠ থেকে মফস্থলে যেভাবে করোনা সচেতনতায় এই দূর্দিনে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন তাতেই প্রমানিত হয় আমাদের সেনাবাহিনী কি কারনে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত একটি বাহিনী।

রামু সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, লকডাউনে যেসব মানুষগুলো রয়েছে তাদের একটা বড় অংশ খেটে খাওয়া অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।

পাশাপাশি সেনাবাহিনীও তাদের বরাদ্দকৃত রেশন বাঁচিয়ে একটি অংশ এসব হতদরিদ্র মানুষদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, কক্সবাজার জেলার কিছু দূর্গম পাহাড়ি এলাকাতেও তারা পায়ে হেটে কাঁধে করে রেশন বয়ে নিয়ে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করছেন।

যেকোনো দূর্যোগপূর্ণ মুর্হুতে সেনাবাহিনী সার্বক্ষণিক জনগণের পাশে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। এই জনকল্যাণমূলক উদ্যোগ ভবিষ্যতে অব্যাহত থাকবে বলে সেনানিবাস সূত্রে জানা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, করোনাভাইরাস, সেনাবাহিনী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন