parbattanews

কক্সবাজারে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২৫ কোটি টাকা হরিলুট ॥ জেলা প্রশাসনের ৪ কর্মচারীসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা

দুর্নীতি
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার:
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভূমি ও চিংড়ি চাষিদের ক্ষতিপূরণের প্রায় ২৫ কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাচ্চু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকার জমির, ফারুকসহ প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট জেলা প্রশাসনের কতিপয় উর্ধ্বতম কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে অধিকাংশ প্রকৃত চিংড়ি চাষীদের নাম বাদ দিয়ে নিজেরা ভূঁয়া কাগজ পত্র বানিয়ে নামে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে চলছে বলে স্থানীয়দের অনেকে অভিযোগ করেছেন। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাতারবাড়ী এলাকার কিছু টাউট-বাটপারও। জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত কিছু কর্মচারীর যোগসাজশে মৎস্য বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এই বিপুল টাকা লুটে নিয়েছে। যার জন্য অধিকাংশ স্থানীয় সাধারণ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য চাষীরা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণের শাখায় এসে নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এ নিয়ে উক্ত এলাকায় কিছুদিন পূর্বে ভূয়া মালিকানা ও ক্ষতিপূরণের টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে গুলিবিনিময়সহ আহত হয়েছে অনেকে। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়ে অপ্রিতিকর ঘটনার জন্ম নিতে পারে বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল। তবে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের ৪ জন কর্মচারীসহ হরিলুঠের টাকা উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসন ২১ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

মহেশখালীর কুতুবজোম এলাকার আব্দুরহিম, মাতারবাড়ীর মগডেইল এলাকার মানিক, আবুমোছা, মো: ওয়াদুল হক, রইস উদ্দীন, জাহাঙ্গীর আলম, মৌলভী ছৈয়দুল হকসহ অনেকে জানান, বর্তমানে কয়লা প্রকল্পের জন্য সরকার প্রাথমিক ভাবে মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা এলাকায় ৩ হাজার, মহেশখালী এলাকায় ৫ হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছে। কিন্ত জেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে না গিয়ে অফিসে বসে ভূমি গ্রাসী একটি চিহ্নিত চক্রের সঙ্গে আঁতাত করে প্রকৃত জায়গার অধিকাংশ মূল মালিকদেরকে ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছে। প্রায় দেড় মাস আগে ফাইল-পত্র জমা দিয়ে এখনও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার অফিসে সপ্তাহের পর সপ্তাহ র্ধণা দিচ্ছে ক্ষতিপূরণের আশায়। কিন্তু তারা নিজেদের ইচ্ছামত যেভাবে ধীরে গতিতে কাজ করছে- তা দেখে মনে হয় মাস কে মাস হোটেল ভাড়া আদায় করে আক্কেল সেলামী দিয়ে এলাকায় ফিরে যেতে হবে।

সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের প্রায় ১হাজার ৮’শ ফাইল জমা পড়লেও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে মাত্র ৬৫টি ফাইলের চেক হস্তান্তর করেছে। অনেককে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে শোনা গেছে, আমাদের বাপ-দাদারা আর আমরা সারাজীবন মাটি খেটে, লবণ চাষ করে, চিংড়ি প্রজেক্ট করে, জীবিকা নির্বাহ করে আসছি, কিন্তু সরকার আমাদের কাছ থেকে জায়গাগুলি নিয়ে নিচ্ছে টাকা দিয়ে বটে, তার মধ্যে আমরা সঠিক ক্ষতিপুরণ পাচ্ছি না এছাড়াও অনেকেই একেবারে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি।

বর্তমানে যেখানে প্রকল্পের কাজ চলছে সেখানে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করার সুযোগও পাচ্ছে না। কতিপয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট করে বাহির থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছে। যা মরার উপর খরার ঘা। ক্ষতিপূরণ পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকে বলেছেন, কর্মকর্তাদের ভাগবাটোয়ারা শেষে যে টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ আমাদের দিচ্ছে, তা দিয়ে ঘর করার তো দুরের কথা, ভাল একটি জায়গাও ক্রয় করা যাবেনা। শেষ পর্যন্ত আমাদের মরণ ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা বলে মন্তব্য করেন তারা।

বলা বাহুল্য প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে ১ হাজার ৪১৪ একর জমি হুকুম দখল করে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মহেশখলিীর মাতারবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। জাইকা ওই প্রকল্পে অর্থায়ন শুরু করে।

মাতারবাড়ীর আবুমোছা বলেন, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে আমার বসতভিটাসহ অন্য আরও ২৫টি বসতভিটা কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অওতায় পড়েছে। তার মধ্যে ২৪ টি বসতভিটার কোন রকম ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম উঠালেও একটি প্রভাবশালী চক্রের নির্দেশে আমরা দুইজন একেভারেই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছিনা। অথচ আমার বসতভিটায় ১০টি মেহগুনিগাছসহ ছোট বড় অন্যান্য ৪০টি গাছও রয়েছে।

মো: ছৈয়দ বলেন, বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে আমার নিজের জায়গার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছিনা এবং আমার ওয়ারীশগণও পাচ্ছেনা। যার জন্য আজ প্রায় এক মাস পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার অফিসে এসে ধর্ণা দিচ্ছি। কিন্ত কোন কুলকিনারা পাচ্ছিনা। এভাবে মহেশখালী, মাতারবাড়ী, ও ধলঘাটার এলাকার অধিকাংশ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্য সাধারণ লোকজন তাদের সহায় সম্ভল হারিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার আশায় প্রতিদিন ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ধর্ণা দিচ্ছে। কিন্তু প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে তারা মনজিলে মকসুদে পৌছাতে পারছেনা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: রুহুল আমিন বলেন, ভূয়া জমি মালিক সেজে টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয় জানতে পেরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Exit mobile version