parbattanews

কক্সবাজারে ঝুঁকিতে লাখো রোহিঙ্গা, বাদ নেই স্থানীয়রাও

কক্সবাজার প্রতনিধি :

পাহাড়ি জমিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী লাখ লাখ রোহিঙ্গারা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক বিপর্যয় ও ভূমি ধ্বসে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গা সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়ার বেশ কিছু পাহাড়ের উচু ও পাদদেশে বসবাস করছে।

এসব পাহাড় কেটে ও ন্যাড়া করে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করেছে রোহিঙ্গারা। তাদের কারণে স্থানীয়রাও নানাবিধ ঝুঁকিতে রয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তাদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া না হলে বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক প্রাণহানীর আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মিয়ানমারে রাখাইনে সহিংসতার ফলে গত ২৪ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য এদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়াতে বসবার শুরু করেছে। এ দুই উপজেলার সবুজ বেষ্টনি দ্বারা গড়ে উঠা সবুজ পাহাড়গুলো কেটে ছেঁটে করা হয় ধূলাভূমি।

এসব পাহাড়গুলোতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। কিন্তু আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যেসব রোহিঙ্গা পাহাড়ের চূড়ায় ও ঢালু বা নিম্মাঞ্চলে বসবাস করছেন ভারী বর্ষণে তাদের ভূমিধস ও বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে রোহিঙ্গারা। দ্রুত অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে।

জাতিসংঘের এক তথ্যমতে অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ঝুঁকিতে থাকা বেশ কিছু রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের ‘দুর্যোগ প্রস্তুতি বিষয়ক সিপিপি ক্যাম্প স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ’ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এ দুই উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার একরের বেশী ভূমি দখল করে রেখেছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

কৃষিজমি, পাহাড় বন উজাড় করে নির্মিত এই বসতি স্থানীয়দের জন্য বিরাট ঝুঁকি তৈরি করেছে। পাহাড়ি মাটি এসে নদী-নালা, খাল বিল ভরে যাওয়াতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গাদের বসবাসের কারণে পাহাড়ি সম্পদ গাছপালা ধ্বংস হয়েছে। পাহাড়ী মাটি কাটার ফলে অল্প বৃষ্টিতেই মাটি ধ্বসে খালে বিলে চলে আসছে। খোলা জমিগুলোতেও মাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। গরু ছাগল লালন পালন করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এনজিও ফোরামের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. মুমিনুর রহমান জানান, ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকৃত সরিয়ে আনা রোহিঙ্গাদের স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পারিকল্পিত বাঁধের মাধ্যমে পানি ধরে রাখা প্রয়োজন।

অন্যথায় পানির লেয়ার কমে যাওয়া স্থানীয়রাও ঝুঁকিতে থাকবে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান জানান, ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে।

পাহাড়ের চূঁড়ায় অতি ঝুঁকিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বসবাসের জন্য উপযোগী ভূমি নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের ওই স্থানে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

স্থানীয়দের যে সকল মালিকানাধীন ভূমিতে রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে সে সকল ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণেরও ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে বর্ষাকাল যত ঘনিয়ে আসছে উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও বাড়ছে। দ্রুত পরিকল্পিতভাবে তাদের রেখে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Exit mobile version